কৃষির পরে শিক্ষাঋণও মকুবের ভাবনা রাহুলের

জিনসের উপরে টাইট টি-শার্ট। তার উপরে হাতকাটা জ্যাকেট। যে জ্যাকেটের নামই এখন লোকমুখে ‘রাহুল জ্যাকেট’। এক ঝাঁক ছাত্রছাত্রীদের সামনে লাজুক মুখে বললেন, ‘‘এটা সাধারণত পরি না। কিন্তু আপনাদের সামনে এসেছি তো!’’

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় 

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৪০
Share:

পড়ুয়াদের মুখোমুখি রাহুল। শনিবার দিল্লির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম। পিটিআই

জিনসের উপরে টাইট টি-শার্ট। তার উপরে হাতকাটা জ্যাকেট। যে জ্যাকেটের নামই এখন লোকমুখে ‘রাহুল জ্যাকেট’। এক ঝাঁক ছাত্রছাত্রীদের সামনে লাজুক মুখে বললেন, ‘‘এটা সাধারণত পরি না। কিন্তু আপনাদের সামনে এসেছি তো!’’

Advertisement

রাহুল গাঁধীকে সামনে পেয়ে দিল্লির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম জুড়ে একঝাঁক পড়ুয়া তখন উচ্ছ্বসিত। কেউ চেঁচাচ্ছেন ‘হাউ ইজ দ্য জোশ?’, কেউ তুলতে চাইছেন নিজস্বী। কাউকেই ফেরাচ্ছেন না কংগ্রেস সভাপতি। শুধু একটাই অনুরোধ, ‘‘আমাকে স্যর বলবেন না। বয়সের ফারাকটা চলে আসে। রাহুল বলুন, সেটি শুনতেই স্বচ্ছন্দ।’’ তার সঙ্গেই চলল আড্ডা। রাহুল পড়ুয়াদের শোনালেন, সেন্ট স্টিফেনসের বড় গাছটির সামনে কী ভাবে র‌্যাগিংয়ের শিকার

হয়েছিলেন তিনি! বিদেশে পড়তে গিয়ে চমকে গিয়েছিলেন এটা দেখে যে, পড়ুয়ারা সেখানে কী ভাবে শিক্ষকদের ঝাঁঝালো প্রশ্ন করেন। এ দেশে যা বিরল।

Advertisement

‘শিক্ষা— দিশা অর দশা’ শীর্ষক আলোচনায় আজ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের মুখোমুখি হয়েছিলেন রাহুল। কোনও গুরুগম্ভীর আলোচনা নয়, প্রশ্ন-উত্তর আর নানা কথা মিলিয়ে এক জমজমাট আড্ডা বলাই ভাল। গত মাসেও দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা কয়েক জন ছাত্রের সঙ্গে এক রেস্তরাঁয় বসে এ ভাবেই আড্ডায় মেতেছিলেন রাহুল। কিন্তু পড়ুয়াদের সঙ্গে নিছক এই ধরনের হালকা আলাপচারিতাতেই থেমে থাকতে চাইছেন না তিনি। আগামী লোকসভা ভোটে ছাত্রছাত্রীদের জন্য বড়সড় ঘোষণারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন তলে তলে। কংগ্রেস সূত্রের মতে, লোকসভার জন্য যে ইস্তাহার তৈরি হচ্ছে, সেখানে শিক্ষাঋণ মকুবের ভাবনা চলছে।

কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে গরিবদের ন্যূনতম আয় সুনিশ্চিত করার ঘোষণা আগেই করে দিয়েছেন রাহুল। কংগ্রেসের জেতা রাজ্যগুলিতে কৃষিঋণ মাফও হয়েছে তাঁর নির্দেশে। এ বারে নজর শিক্ষায়। পাশাপাশি স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও বড় ঘোষণার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে

কংগ্রেস সূত্রে।

কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘‘ন্যূনতম আয় ঘোষণার পর ছাত্রদের শিক্ষাঋণ মকুব করতে কত খরচ হবে, তার হিসেব কষা হচ্ছে। তার ভিত্তিতেই স্থির হবে, ইস্তাহারে তা সামিল করা হবে কি না। রাহুল গাঁধীর কাছে ছাত্রছাত্রীরা বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছেন। বিশেষ করে গ্রামের গরিব ছাত্রদের কাছে এটি বড় সমস্যা।’’ কংগ্রেসের হিসেব অনুযায়ী, উচ্চশিক্ষার জন্য সব পড়ুয়ার শিক্ষাঋণ মকুব করতে গেলে অঙ্কটি ৬০-৭০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে। শুধু গরিব পরিবার থেকে বিষয়টি শুরু করা যায় কি না, তা-ও ভাবা হচ্ছে। লএ ধরনের কোনও ঘোষণা করলে ১৫ কোটি নতুন ভোটার ও তাঁদের পরিবারের কাছে সদর্থক বার্তাও যাবে।

দলের নেতাদের রাহুল বলেছেন, ১৫-২০ জন শিল্পপতির সাড়ে তিন লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মকুব করেছে মোদী সরকার। সেই টাকায় দশ বার একশো দিনের কাজ হয়ে যায়। তা হলে কংগ্রেস কেন অন্য খাতে অর্থ দিতে পারবে না? বিজেপি সরকার শিক্ষা-স্বাস্থ্যকে বেসরকারি হাতে দিয়ে দিয়েছে। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে এই দুই ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি সাহায্য করবে সরকার।

আজ প্রকাশ্যে এ সব কথা না বললেও নতুন ভোটারদের কাছে টানতে নরেন্দ্র মোদীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন রাহুল। বললেন, সাহস থাকলে মোদী যেন পড়ুয়াদের থেকে এ ভাবেই খোলাখুলি প্রশ্ন শোনেন। রাফাল দুর্নীতি নিয়ে বিতর্কেরও ডাক দিলেন। সেই সঙ্গেই বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপাচার্য পদে আরএসএস ভাবধারার লোকেদের নিয়োগ করা হচ্ছে বলেও সরব হলেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন