যোগীকে দুষে মৃত শিশুদের বাড়িতে রাহুল

নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে কংগ্রেস সহ-সভাপতির মন্তব্য, ‘‘মোদী নতুন ভারতের কথা বলছেন। এমন নতুন ভারত আমাদের চাই, যেখানে সন্তানকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গিয়ে গরিব মানুষ খুশি মনে বাড়ি ফিরতে পারেন!’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৭ ০৪:৪০
Share:

সমবেদনা: মৃত শিশুর পরিবারের সঙ্গে কথা বলছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। রয়েছেন গুলাম নবি আজাদ এবং রাজ বব্বরও। শনিবার গোরক্ষপুরে। ছবি: পিটিআই।

গোরক্ষপুরের শিশুমৃত্যুর ঘটনাকে ‘সরকারের তৈরি ট্র্যাজেডি’ আখ্যা দিলেন রাহুল গাঁধী। নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে কংগ্রেস সহ-সভাপতির মন্তব্য, ‘‘মোদী নতুন ভারতের কথা বলছেন। এমন নতুন ভারত আমাদের চাই, যেখানে সন্তানকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গিয়ে গরিব মানুষ খুশি মনে বাড়ি ফিরতে পারেন!’’

Advertisement

এনসেফ্যালাইটিস তো রয়েছেই। সঙ্গে সরকারি গাফিলতিতে অক্সিজেনের অভাবেই শিশুমৃত্যু হয়েছে— এমন অভিযোগ উঠেছিল গোরক্ষপুরের হাসপাতালে। আজ গোরক্ষপুরে গিয়ে একাধিক গ্রামে ঘুরে মৃত শিশুর পরিবারের সঙ্গে বৈঠকের পর রাহুল বলেন, ‘‘সকলে আমাকে বলেছেন, অক্সিজেনের অভাবেই তাঁদের সন্তান মারা গিয়েছে। এটা যে সরকারের তৈরি ট্র্যাজেডি, তা স্পষ্ট।’’ বাগাগাড়ার ব্রহ্মানন্দ যাদবের বাড়ি থেকে বাঁশগাওয়ের মলাও গ্রাম, সেখান থেকে বারোলিখুর্দ গ্রামের রমাশঙ্কর—সন্তানহারা পরিবারগুলির বাড়িতে গিয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা শুনলেও রোগীদের অসুবিধার কথা ভেবে বাবা রাঘবদাস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাননি রাহুল।

আরও পড়ুন: বিক্রিবাটা বন্ধ, গরু-বিভ্রাট গোরক্ষপুরে

Advertisement

গোরক্ষপুর থেকেই ১৯৮৯ থেকে জিতে লোকসভায় সাংসদ হয়েছেন যোগী আদিত্যনাথ। তাঁর নিজের এলাকায় এতগুলি শিশুমৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এমনিতেই চাপে রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। কারণ শুধু হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাব নয়, সামগ্রিক ভাবে ওই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অব্যবস্থা এবং জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের আঁতুড়ঘর গোরক্ষপুরের অপরিচ্ছন্নতা নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। চাপের মুখে আজ থেকে রাজ্য জুড়ে ‘স্বচ্ছ উত্তরপ্রদেশ-স্বাস্থ্য উত্তরপ্রদেশ অভিযান’ শুরু করেছেন তিনি। তার উদ্বোধন করতে যোগী নিজেই গোরক্ষপুরে হাজির হয়েছিলেন। সাদা টুপি পরে, মুখে মুখোশ এঁটে, হাতে ঝাড়ু নিয়ে নিজেও সাফাইয়ে হাত লাগিয়েছেন।

যোগী আদিত্যনাথ

তার মধ্যেই রাহুলের সফরে আরও চাপে পড়ে যান যোগী। রাহুল গোরক্ষপুরে পৌঁছনোর আগেই তাঁকে আক্রমণ করে বলেন, ‘‘দিল্লিতে বসে থাকা কোনও যুবরাজের পক্ষে এই যন্ত্রণা বোঝা সম্ভব নয়। আমি গোরক্ষপুরকে কারও পিকনিক করার জায়গা বানানোর অনুমতি দিতে পারি না।’’ রাহুলের সঙ্গে ছিলেন কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ, প্রদেশ সভাপতি রাজ বব্বরও। রাজ বব্বর বলেন, ‘‘রাহুল গরিবের যন্ত্রণার কথা শুনছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী ঘাবড়ে গিয়েছেন।’’

কোণঠাসা যোগী আজ গোটা ঘটনায় দায় আগের উত্তরপ্রদেশ-সরকারের উপরে চাপানোর চেষ্টা করেছেন। তাঁর যুক্তি দেন, এত দিন রাজনৈতিক স্বার্থে উত্তরপ্রদেশে দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা দেওয়া হয়েছে। গত কালই গোরক্ষপুরের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছিলেন অখিলেশ যাদব। আজ স্বচ্ছতা অভিযানের উদ্বোধনে রাহুলের সঙ্গেও অখিলেশকেও নিশানা করে যোগী বলেন, লখনউয়ের শাহজাদা আর দিল্লির যুবরাজ স্বচ্ছতার অর্থ বুঝবেন না। রাহুল আজ যুক্তি দিয়েছেন, গত বছরই গোরক্ষপুরের হাসপাতালে এসে এখানকার অব্যবস্থা নিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা হয়নি। রাহুল বলেন, ‘‘অবহেলাই যে কারণ, তা স্পষ্ট। এখন মুখ্যমন্ত্রী ও সরকারের উচিত, ধামাচাপা না-দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া।’’

উত্তরপ্রদেশ সরকার অবশ্য মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশি তদন্ত শুরু করেনি। হাসপাতালের সুপার রাজীব মিশ্রকে বরখাস্ত করার পর তাঁর স্ত্রী পূর্ণিমা শুক্লকেও ওই মেডিক্যাল কলেজ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য হাসপাতালেও অব্যবস্থার অভিযোগ উঠেছে। সূত্রের খবর— সাহরানপুর, ঝাঁসি ও আগরার মতো তিনটি বড় হাসপাতালের সুপার পরিকাঠামোর অভাব দেখিয়ে পদত্যাগ করতে চেয়েছেন। যোগীর সাফাই, এনসেফ্যালাইটিসের মতো রোগ দূর করতে তাঁর সরকার স্বচ্ছতা অভিযান বা খোলা জায়গায় মলত্যাগ বন্ধ করতে শৌচালয় তৈরিতে জোর দিচ্ছে। আগামী বছরের অক্টোবরের মধ্যেই উত্তরপ্রদেশকে খোলা জায়গায় প্রাকৃতিক কাজ মুক্ত রাজ্য ঘোষণা করতে চান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন