রাহুলের জনসভা। ছবি: পিটিআই।
উধাও সেই পরিচিত গালভরা কাঁচা-পাকা দাড়ি। মাথায় লাল তিলক। মঞ্চে ওঠার আগেই পুজো দিয়ে এসেছেন দেব মোগরা মাতাজি মন্দিরে।
উত্তরপ্রদেশের ভরাডুবির দু’মাস পর ফের প্রচার শুরু করলেন রাহুল গাঁধী। যে নরেন্দ্র মোদী কংগ্রেসের হাত থেকে ‘গরিব’-তাস ছিনিয়ে নিতে চাইছেন, এ বার সেটিকেই ফিরে পেতে রাহুল ছুটলেন মোদীর রাজ্য গুজরাতের গরিবদের মাঝে। তার জন্য বেছে নিলেন গুজরাত-মহারাষ্ট্র সীমানার প্রত্যন্ত এলাকা। যেখানে আদিবাসীরা এখনও দারিদ্রের শিকার। আর সেখানেই পণ করলেন গুজরাতে হারাবেন নরেন্দ্র মোদীকে। বললেন, ‘‘মোদী সকলকে নিজের ‘মন কি বাত’ শোনান। আমরা গরিব, কৃষক, দলিত, আদিবাসী, মহিলা- সকলের ‘মন কি বাত’ শুনি। এটাই ফারাক।’’
গত তিন বছরে কংগ্রেসের হাত থেকে অনেক অস্ত্র কেড়ে নিয়েছেন মোদী। একে একে সেগুলি ফিরে পাওয়াই এখন রাহুলের লক্ষ্য। তাই দু’মাস পরের জনসভায় তূণ থেকে বের করলেন একগুচ্ছ তির। মোদীকে ‘গরিব-বিরোধী’ এবং ‘ধনী-বন্ধু’ অ্যাখ্যা তো দিলেনই, পাশাপাশি মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী, সর্দার বল্লভভাই পটেলের কথা বলে তুলে ধরলেন এ দেশে কংগ্রেসের অবদান। যে গাঁধী-পটেলকেও নিজেদের করে নিতে চেয়েছেন মোদী। মোদী সরকারের শুরুর দিকে সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বে আন্দোলন করে জমি অধিগ্রহণ বিল প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছিল কংগ্রেস। সেই ‘সাফল্য’ মনে করিয়ে রাহুল বলেন, ‘‘গুজরাতে কংগ্রেস পুরোদমে লড়বে এবং নরেন্দ্র মোদীকে হারিয়ে দেখাবে।’’
কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘এটা ঠিক মোদী খুব ভাল কথা বলেন। নিজেকে বেচতে পারেন। কিন্তু গুজরাতে মুখ্যমন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসলেও তাঁর নিজের রাজ্যেই প্রদীপের তলায় অন্ধকার রয়েছে। সেটি যদি ঠিক মতো তুলে ধরা যায়, তা হলে বিজেপিকে হারানো সম্ভব। রাহুল সেই কাজটিই করতে চেয়েছেন।’’
তাই যে ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’ করে মোদী কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগের কথা বলেন, সেটিকেই নিশানা করেছেন রাহুল। জানিয়েছেন, এই সম্মেলন করে মাত্র ১০-১৫ জনেরই পকেট ভরে, যাঁরা মোদীর বিপণনের রসদ জোগান। নোট বাতিলের প্রসঙ্গ তুলে রাহুল ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘‘এক ব্যক্তির নিজের শক্তি দেখানোর ইচ্ছে হল। তাই হাজার, পাঁচশোর নোট বাতিল করে দিলেন। হা-হা-হা হেসে বললেন, দেখ আমার কত শক্তি, সকলকে লাইনে দাঁড় করিয়েছি। দেখ সকলকে কত কষ্ট দিতে পারি।’’
রাহুলের সভা নিয়ে অবশ্য বিজেপির খুব বেশি হেলদোল নেই। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘রাহুল এ ধরনের প্রচার উত্তরপ্রদেশেও করেছেন, তার ফলও ভোগ করেছেন।’’ রাহুল যখন গুজরাতে সরব হচ্ছেন, সেই সময় দিল্লিতে রামানুজাচার্যের হাজার জন্মবার্ষিকীতে ডাকটিকিট উদ্বোধনে মোদীও গরিব-বঞ্চিত-শোষিতের উন্নয়নের কথা বলেন। বলেন, বর্তমান যুগেও গাঁধী, অম্বেডকরের আদর্শ সকলের পাথেয়।