প্রচারে: উত্তরপ্রদেশের সোনভদ্রে এই চায়ের দোকানেই প্রিয়ঙ্কার দেখা পেলেন রাহুল। ছবি: পিটিআই
কোনও ভাবেই আর হাত গুটিয়ে তিনি বসে থাকতে রাজি নন।
উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটের প্রচার শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাই দিল্লি পুরসভার নির্বাচনের প্রস্তুতিতে নেমে পড়ছেন রাহুল গাঁধী। কংগ্রেস সহ-সভাপতির পাখির চোখ, এপ্রিলে দিল্লির তিনটি পুরসভার ভোট।
দশ বছর দিল্লির পুরসভায় ক্ষমতায় নেই কংগ্রেস। বিধানসভায় কংগ্রেসের উপস্থিতি নেই। রাজধানীর পুর-ভোটকে তাই ‘সম্মানের লড়াই’ হিসেবে দেখছে কংগ্রেস হাইকমান্ড। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের আম আদমি পার্টি ও তিনটি পুরসভাতেই ক্ষমতায় থাকা বিজেপির সঙ্গে টক্কর দিতে রাহুলের নতুন কৌশল, দরজায় দরজায় ঘুরে প্রচার। রাহুলের নির্দেশে প্রতিটি বুথের জন্য ১৫ জন কংগ্রেস কর্মীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ কর্মীর বাহিনী তৈরি।
মূলত এই বুথ স্তরের কর্মীদের জন্যই রাহুল গাঁধী মঙ্গলবার দিল্লিতে কংগ্রেস কর্মীদের সম্মেলন ডেকেছেন। রামলীলা ময়দানের সম্মেলনে রাহুল নিজে কংগ্রেসের প্রচারের সুর বেঁধে দেবেন।
সোমবার বিকেলে উত্তরপ্রদেশে ভোটপ্রচার শেষ হচ্ছে। শেষদিনে রাহুল অখিলেশ যাদবের সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলন করবেন। পরেরদিনই রাহুল যেভাবে দিল্লিতে কংগ্রেস কর্মীদের সম্মেলনে হাজির হচ্ছেন, তা দেখিয়ে এআইসিসি-র এক নেতার মন্তব্য, ‘‘আগে রাহুলকে অনেকেই পার্টটাইম পলিটিসিয়ান বলে কটাক্ষ করতেন। অভিযোগ ছিল, তিনি হঠাৎ হঠাৎ উদয় হন। কোনও একটা বিষয়ে কিছু দিন হইচই করেন। তারপর আবার উধাও হয়ে যান। এখন কিন্তু অন্য রাহুলকে দেখছি আমরা। যিনি কার্যত গোটা দায়িত্ব হাতে তুলে নিচ্ছেন। কোথাও ফাঁক রাখছেন না।’’
রাহুলের কার্যশৈলীতে আরেকটি বিষয়ও নজর করছেন কংগ্রেস নেতারা। তা হল, নবীন-প্রবীণের ‘ককটেল’। রাহুল দলের শীর্ষপদে এলে সব দায়িত্ব প্রবীণদের থেকে কেড়ে নিয়ে নবীনদের হাতে তুলে নেওয়া হবে বলে সংশয় ছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, রাহুল অভিজ্ঞতার সঙ্গে তারুণ্যের মিশেল করার চেষ্টা করছেন।
দিল্লি পুরসভার ক্ষেত্রেও সেই সূত্র মেনে পি চিদম্বরম ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে একসঙ্গে মাঠে নামিয়েছেন রাহুল। দিল্লির তিনটি পুরসভাই গত বছর থেকে আর্থিক সঙ্কটে ধুঁকছে। সাফাইকর্মীরা বেতন না পেয়ে ধর্মঘটে নেমেছেন, দেশের রাজধানী শহরের রাস্তায় আবর্জনার পাহাড় জমেছে—একাধিকবার এই ঘটনা ঘটেছে।
ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণেও ব্যর্থতার আঙুল উঠেছে পুরসভাগুলির দিকে। রাহুল চিদম্বরম-জ্যোতিরাদিত্যকে আর্থিক সঙ্কট কাটানোর একটি ‘নীল নকশা’ তৈরির দায়িত্ব দিয়েছেন। দিল্লির নেতা অজয় মাকেন কেন্দ্রে নগরোন্নয়ন মন্ত্রীর থাকার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পুরসভাগুলির কাজের ‘রোডম্যাপ’ তৈরি করছেন। মঙ্গলবার কর্মী সম্মেলনের আগে, সোমবার এই রোডম্যাপ ও আর্থিক সঙ্কট কাটানোর নীল নকশা প্রকাশ হবে।
তবে দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত এ বার কী ভূমিকা নেবেন, তা স্পষ্ট নয়। শীলার নেতৃত্বে বিধানসভা ভোটে দলের ভরাডুবি হয়েছে দিল্লিতে। তা সত্ত্বেও গোড়ায় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে শীলাকে সামনে এনেছিল কংগ্রেস। কিন্তু দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উত্তরপ্রদেশে সপা-র সঙ্গে দলের জোট নিয়ে ততটা উৎসাহ দেখাননি। সম্প্রতি রাহুলকে নিয়ে তাঁর একটি মন্তব্যেও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
এখন দিল্লির পুরভোটে কংগ্রেসের প্রচারে শীলাকে কী ভাবে রাখা হবে, তা হাইকম্যান্ডকেই ঠিক করতে হবে। শীলার ছেলে সন্দীপ দীক্ষিতও দিল্লির পূর্ব দিল্লির সাংসদ ছিলেন।