আড্ডায় পড়ুয়াদের খাবার বেড়ে দিলেন রাহুল নিজেই

কংগ্রেস কমিটির ডাকে লোকসভার ইস্তাহার তৈরি নিয়ে আলোচনা করতে তা হলে কি দেখা হবে রাহুল-সনিয়ার সঙ্গে? দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সাত পড়ুয়া তখন উত্তেজনায় ফুটছেন। 

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:২৭
Share:

রাজধানীর এক চিনা রেস্তরাঁয় পড়ুযাদের সঙ্গে রাহুল গাঁধী।

একটা লম্বা টেবিল ঘিরে আটটা চেয়ার। সেগুলোয় বসে সাত জন। দিল্লির লোদি রোডের পিংস কাফে ওরিয়েন্ট নামক চিনে রেস্তরাঁয় ওই টেবিলের অষ্টম ব্যক্তিটি কে হবেন, বেশ কিছু ক্ষণ ধরে বসে থাকা বাকিরা তা জানতেও পারেননি।

Advertisement

সন্ধ্যা সওয়া সাতটা। আচমকা রেস্তরাঁর দখল নিল এসপিজি। ভিভিআইপি-দের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ। তা হলে কি রাহুল? না সনিয়া? কংগ্রেস কমিটির ডাকে লোকসভার ইস্তাহার তৈরি নিয়ে আলোচনা করতে তা হলে কি দেখা হবে রাহুল-সনিয়ার সঙ্গে? দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সাত পড়ুয়া তখন উত্তেজনায় ফুটছেন।

ঘড়ির কাঁটা আটটা ছুঁইছুঁই। সবাইকে চমকে দিয়ে হুড়মুড়িয়ে ভিতরে ঢুকলেন রাহুল গাঁধী। সবার সঙ্গে করমর্দন করে বললেন, ‘‘আমার নাম রাহুল গাঁধী। আমি কংগ্রেসের সভাপতি। দিল্লিতে থাকি।’’ শুরু হল পরিচয় পর্ব। তার মধ্যেই রাহুল জানতে চান, ‘‘কী খাবেন?’’ ফ্রায়েড রাইস, চিকেন টেবিলে আসতেই প্রত্যেকের প্লেটে সেই খাবার নিজে বেড়ে দিলেন কংগ্রেস সভাপতি। দায়িত্ব নিয়ে সকলের গ্লাসে জলও ঢেলে দেন তিনি। শেষ পাতে আইসক্রিম। কে কোন আইসক্রিম খাবেন, তা-ও জেনে নেন রাহুল। এ সব কিছুই জানালেন বৈঠকে উপস্থিত থাকা দলিত আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী তথা মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সের ছাত্র কুণাল রামটেক।

Advertisement

আরও পড়ুন: চৌকিদার আর পাহারাদার হটানোর ডাক বামেদের ব্রিগেডে

গত সপ্তাহে দিল্লিতে ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ অনুষ্ঠানে পড়ুয়াদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। নির্বাচনের পরে ক্ষমতায় এলে কংগ্রেসের কাছে যুব সমাজের প্রত্যাশা কী, তা জানতে দিল্লি-মুম্বই, অসম-মহারাষ্ট্র, কেরল ও উত্তরপ্রদেশের কলেজ পড়ুয়া সাত জনের সঙ্গে এ ভাবেই গত শুক্রবার রাতে আলাপচারিতায় মাতেন রাহুল গাঁধী। কংগ্রেস সূত্র বলছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও দলিত ও এলজিবিটি সমাজের প্রতিনিধি পড়ুয়াদেরও বেছে নেওয়া হয়েছিল আলাপচারিতার জন্য।

রাহুলের নিজের কথায়, ‘‘আমার লক্ষ্য কাজ করা। ভুল হতেই পারে। তাই আত্মসমীক্ষা করাও প্রয়োজন।’’ তাঁকে সর্বদা বিরোধীদের আতসকাচের নীচে থাকতে হয়। শিকার হতে হয় সমালোচনার। রাহুলের কথায়, ‘‘বিরোধীদের সমালোচনা থেকে আমি শিখি।’’ কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য আরও বেশি করে সরকারি বৃত্তি দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার করবে জানিয়ে রাহুল বলেন, ‘‘এ দেশে ছোট থেকেই প্রশ্ন করার স্বাধীনতা নেই। প্রশ্ন করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।’’

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে সংখ্যালঘু সমাজ, ওবিসি-দলিতদের একজোট করে বিজেপিকে ধাক্কা দিতে চাইছেন রাহুল। কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে কথা বলে উচ্ছ্বসিত কুণাল বলেন, ‘‘রাহুল চাইছেন, সব শিবির একজোট হোক। দলিতের সমস্যায় পাশে দাঁড়াক সংখ্যালঘু। আবার এলজিবিটির কোনও সমস্যায় শক্তি জোগাক অন্যরা।’’ সুপ্রিম কোর্টের রায় সত্ত্বেও সমকামীদের বিভিন্ন সময়ে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে, তা নিয়ে রাহুলের সামনেই সরব হন এ নিয়ে আন্দোলনকারী তথা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র রোহন রেজে ম্যাথিউজ। তাঁকে আশ্বস্ত করে রাহুল বলেন, ‘‘বিষয়টি ইস্তাহারে রাখার জন্য দলীয় নেতৃত্বকে সুপারিশ করব। এটা ঠিক যে, এলিজিবিটি জনগোষ্ঠীর কথা ভেবে যতটা কাজ করা উচিত ছিল, তা হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন