ভোটের আগে কেরলে। মঙ্গলবার তিরুঅনন্তপুরমের প্রচারমঞ্চে রাহুল গাঁধী। — নিজস্ব চিত্র
এলেন, বক্তৃতা দিলেন, তাতে আক্রমণের ঝাঁঝও রইল যথেষ্ট। কিন্তু সেই আক্রমণের প্রায় পুরোটা জুড়েই রয়ে গেলেন নরেন্দ্র মোদী। ভোটের মুখে কেরল সফরে গিয়ে রাহুল গাঁধী বামেদের যেটুকু খোঁচা দিলেন, তা যেন অনেকটা ‘ধরি মাছ, না-ছুঁই পানি’!
বিধানসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেস জোট আলোচনার আবহে রাহুলের এই অবস্থান অর্থবহ বলেই মনে করছেন অনেকে। তাঁদের মতে, কেরলের আসন্ন ভোটে সরাসরি বাম বনাম কংগ্রেস লড়াই হবে। তাই রাহুলের বক্তৃতায় কেরলের কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা হয়তো আজ একটু হতাশ হলেন। কিন্তু বাংলার কংগ্রেস ও সিপিএমের জোটপন্থী নেতারা নিঃসন্দেহে স্বস্তিতে। সম্ভবত সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও। কারণ অনেকেই বলছেন, রাহুল আজ বামেদের কঠোর সমালোচনা করেন কি না, তা দেখতে মুখিয়ে ছিলেন প্রকাশ কারাট ও তাঁর অনুগামী নেতারা। রাহুল বামেদের তোপ দাগলে দিল্লিতে আসন্ন পলিটব্যুরো বৈঠকে সেটাকেই হাতিয়ার করে নিতেন তাঁরা। বাংলায় বাম-কংগ্রেস জোট প্রস্তাবের বিরুদ্ধে যুক্তি সাজানো তখন আরও সহজ হয়ে যেত তাঁদের পক্ষে!
দু’দিনের সফরে আজ বিকেলে তিরুঅনন্তপুরমে পৌঁছন রাহুল। ভোটের আগে কেরলের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভি এম সুধীরণ যে ‘জনরক্ষা’ পদযাত্রা শুরু করেছিলেন, তা আজ শেষ হল। শঙ্কুমুঘম সৈকতে আজ সন্ধ্যায় সেই পদযাত্রার সমাপ্তি-সভাতেই বক্তৃতা দেন রাহুল। এবং গোড়া থেকেই আক্রমণ শানাতে শুরু করেন বিজেপি তথা মোদীর
বিরুদ্ধে। বিজেপির বিভাজনের রাজনীতি, মূল্যবৃদ্ধি, কৃষক ও দলিত আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রীর।
বক্তৃতার এক্কেবারে শেষে গিয়ে বামেদের প্রসঙ্গ তোলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি। বলেন, ‘‘যে মতাদর্শে বামেরা বিশ্বাস করেন, তা আজকের দিনে অচল। ওটা গত শতাব্দীর মতাদর্শ। তা দিয়ে কেরলে আর্থিক বৃদ্ধি ও শিল্পোন্নয়ন সম্ভব নয়।’’ সেই সঙ্গে রাজ্যে মদ বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে বামেদের নীতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রাহুল।
দেড় বছর আগে কেরলে ছোট রেস্তোরাঁ ও পানশালায় মদ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে উমেন চান্ডির কংগ্রেস সরকার। সম্প্রতি একটি স্টিং অপারেশনের সিডি ফাঁস হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, কেরলের পানশালাগুলির সংগঠনের প্রধান দাবি করছেন, তাঁর সঙ্গে সিপিএম নেতাদের কথা হয়েছে। তাঁরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ক্ষমতায় এলে পানশালাগুলির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেবেন। সেই প্রসঙ্গ তুলে রাহুল আজ বলেন, ‘‘বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদের পরিষ্কার জানাতে হবে, তাঁরা মদ বিক্রির পক্ষে না বিপক্ষে। মানুষ সত্যি কথাটা জানতে চান।’’
রাহুলের এই বক্তৃতার পরে এআইসিসি-র এক সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘বামেদের যেটুকু সমালোচনা রাহুল করেছেন, সেটা করতেই হতো। এটুকুও না করলে কেরলের কংগ্রেস নেতারা খেপে যেতেন।’’ তাঁর মতে, হয়তো পশ্চিমবঙ্গে জোটের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে গেলে পরবর্তী কেরল সফরে গিয়ে বামেদের আরও কঠোর সমালোচনা করবেন রাহুল। কিন্তু এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই যে, পশ্চিমবঙ্গের কথা মাথায় রেখেই আজ কৌশলে হেঁটেছেন রাহুল।
কংগ্রেস সহ-সভাপতির ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, আগামিকাল কেরল প্রদেশ কংগ্রেসের এগ্জিকিউটিভ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে তিরুঅনন্তপুরমে ফের রুদ্ধদ্বার বৈঠক করবেন রাহুল। অবধারিত ভাবেই কেরল কংগ্রেসের নেতারা সেখানে পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রসঙ্গ তুলবেন এবং তা নিয়ে আপত্তি জানাবেন। সূত্রটির দাবি, রাহুল তাঁদের জানিয়ে দেবেন, এক একটি রাজ্যের রাজনৈতিক গতিশীলতা এক এক রকম। একটি রাজ্যের জন্য অন্য রাজ্যের রাজনীতিকে আপস করার নির্দেশ দেওয়ার পক্ষে তিনি নন।