নায়কের ফেড ইন, পটভূমি ফেড আউট কংগ্রেসে

কংগ্রেসের সদর দফতর ২৪ আকবর রোড, এই ঐতিহাসিক ক্রমিক রাজনৈতিক রূপান্তরের সাক্ষী রইল আজ। চলচ্চিত্রের ভাষায় নায়কের ফেড ইন, পটভূমি ফেড আউট।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৪১
Share:

সনিয়া গাঁধী

এক দিকে রাহুল-উদয়। অন্য দিকে সনিয়া গাঁধীর প্রস্থান।

Advertisement

কংগ্রেসের সদর দফতর ২৪ আকবর রোড, এই ঐতিহাসিক ক্রমিক রাজনৈতিক রূপান্তরের সাক্ষী রইল আজ। চলচ্চিত্রের ভাষায় নায়কের ফেড ইন, পটভূমি ফেড আউট। সনিয়া গাঁধী আজ ৭১ বছরে পা দিয়ে সতীর্থ নেতাদের কাছে এই বার্তাই দিচ্ছেন— ‘‘এ বার আর কথায় কথায় ১০ জনপথ নয়, গন্তব্য ১২ তুঘলক লেন।’’ ২০০৪-এর জানুয়ারিতে রাহুল রাজনীতিতে এসেছিলেন। তার পর ধাপে ধাপে সাধারণ সম্পাদক, উপাধ্যক্ষ। এ বার দলের সভাপতি।

কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি যে দিন সর্বসম্মত ভাবে রাহুলকে দলের কান্ডারি হিসাবে মনোনীত করল, সে দিনও ‘মা’ ছিলেন অনুপস্থিত। দলীয় সূত্র বলছে, অনুপস্থিতির মাধ্যমে আসলে পুত্রের স্বনির্ভর নেতৃত্বকেই এগিয়ে দিতে চেয়েছেন মা। জন্মদিনেও সেই একই রাজনৈতিক সংযম দেখাচ্ছেন সনিয়া। তাঁর নির্দেশ, দল যেন হুল্লোড় করে উৎসব পালন না-করে। কেউ ফুল পাঠালে তা সোজা চলে যাবে ২৪ আকবর রোডে। জন্মদিনে কিছু সাধারণ কংগ্রেসকর্মীর সঙ্গে তিনি দেখা করবেন, কিন্তু জন্মদিন পালনকে ব্যক্তিগত ভাবে পরিবারের অল্পকিছু মানুষের মধ্যেই বেঁধে রাখবেন তিনি।

Advertisement

প্রবীণ কংগ্রেস নেতা মতিলাল ভোরা বলেন, ‘‘রাহুলকে রাজনীতিতে আনার ব্যাপারে সনিয়ার রোল-মডেল ছিলেন তাঁর শাশুড়ি। রাজীবকেও এ ভাবে ধাপে ধাপেই এনেছিলেন ইন্দিরা।’’ ২০০৪ সালে রাহুল দলে যোগ দিলেও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ২০০৭-এর সেপ্টেম্বরে। তখন তাঁকে ছাত্র ও যুব সংগঠন দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়, যেমনটা ইন্দিরা দিয়েছিলেন রাজীবকে।

সীতারাম কেশরীকে সরিয়ে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি যে ভাবে সনিয়া গাঁধীকে দলের সভানেত্রী করেছিল, তা ছিল খুবই নাটকীয়। কিন্তু তার পর দলের ভিতরে নেতা-কর্মীদের আস্থা অর্জনে সময় লেগেছিল সনিয়ারও। কমলনাথ বলেছিলেন, ‘‘সকলকে নিয়ে কী ভাবে চলতে হয়, ম্যাডাম তা দেখিয়ে দিয়েছেন। সংঘাত এড়িয়ে সমন্বয়ের রাস্তা নেন তিনি।’’

সনিয়ার কংগ্রেস সভানেত্রী হওয়ার ঘটনাকে ব্যঙ্গ করে ২০০০ সালের ১২ মে সংবাদপত্রে সাক্ষাৎকার দেন জয়রাম রমেশ। তখন দু’বছর হয়ে গিয়েছে সনিয়া সভানেত্রী। তবু তাঁকে ক্ষমা করে দেন তিনি। শুধু তাই নয়, এ সব মন্তব্য নিয়ে নাকি জয়রামের সামনেই খুব হেসেছিলেন সনিয়া! পরে মনমোহনের আপত্তি সত্ত্বেও সনিয়াই জয়রামকে মন্ত্রী করেন। বলেন, ও যা বলেছিল তা অতীত। কিন্তু জয়রাম যোগ্য। বারবার ক্ষমা চেয়েও লজ্জা ঘোচেনি জয়রামের!

শরদ পওয়ারকে দল থেকে বিতাড়িত করেন, পরে সেই পওয়ার ও এনসিপি নেতাদের কংগ্রেসের হাত ধরতে হয়। অর্জুন সিংহ-এনডি তিওয়ারি এবং নটবর সিংহরাও দল ছাড়েন, আবার ফিরেও আসেন। ২০০৪-এ দলকে বিপুল ভাবে জেতানোটা আজও সনিয়ার ‘বিস্ময়কর সাফল্য’ বলে মনে করেন আহমেদ পটেল।

সনিয়া রাহুলকেও বুঝিয়েছেন, এখন ভারতের রাজনীতি এক ‘জোট যুগে’ এসে পৌঁছেছে। আজ যখন রাহুল নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করছেন, অবসর নিচ্ছেন সনিয়া, তখন দলের প্রবীণ নেতারা বলছেন— ম্যাডাম আর কিছু দিন অন্তত আপনি ইউপিএ-র চেয়ারপার্সন থাকুন। এই নেতারা জানেন, লালু থেকে করুণাকরন বা মমতা— গোটা দেশের আঞ্চলিক নেতারা সনিয়ার সঙ্গে বোঝাপড়া করতেই বেশি সহজ। এই প্রস্তাবে সনিয়া এখনও ‘হ্যাঁ’ বলেননি। তিনি চাইছেন, মমতা থেকে নবীন পট্টনায়ক, স্ট্যালিন বা ফারুক আবদুল্লা— সকলের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তুলুন রাহুল।

রাহুল নিয়মিত ট্রেডমিল করেন। প্রথমেই দ্রুত গতিতে নয়, সমতলে ধীরে ধীরে দৌড়োন আগে। তার পর ধীরে ধীরে গতি বাড়ান, বাড়ে খাড়াইও। শচিন পায়লটের কথায়, ‘‘রাজনীতির ট্রেডমিলেও রাহুল এ ভাবেই গতি বাড়ালেন। শিবসেনার মতো দলও বলছে, রাহুলকে আর ‘পাপ্পু’ বলা যাবে না। ওটা বিজেপির মুর্খামি!’’

দূর থেকে এখন দেখছেন সনিয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন