গোটা দেশে যেখানেই পরিবেশ অশান্ত হয়ে রয়েছে, চলছে আন্দোলন— রাহুল গাঁধীর নজর এখন সে দিকে। যেখানে যেখানে সম্ভব, এই সব আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেই ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি।
কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, আপাত ভাবে দেশ ‘শান্ত’ মনে হলেও বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষিপ্ত ভাবে আন্দোলন চলছে। আর সেগুলির নিশানা বিজেপিই। সে হরিয়ানায় জাঠেদের আন্দোলনই হোক বা মহারাষ্ট্রে সংরক্ষণের আন্দোলন। গুজরাত ভোটের আগে পটেলদের আন্দোলনও একটি বড় ইস্যু। তামিলনাড়ুর কৃষকরা ইতিমধ্যেই দিল্লির যন্তর-মন্তরে ধর্না দিচ্ছেন। দেশের কোণে কোণে যেখানেই এই ধরনের আন্দোলন হচ্ছে, তার সবিস্তার রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে রাহুল গাঁধীর কাছে। এ বারে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে রাহুল স্থির করবেন, কোন কোন আন্দোলনকে সমর্থন করে তিনি মোদী-বিরোধিতার রাজনীতিতে শান দেবেন।
কংগ্রেসের এক নেতার বিশ্লেষণ, এর আগে জমি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে নাস্তানাবুদ করা সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে জমি অধিগ্রহণ বিল ফেরত নিতে হয়েছিল। দেশে এখনও অনেক জায়গায় এই ধরনের আন্দোলন চলছে। ঠিক রণনীতি নিয়ে সেগুলিকে সুকৌশলে রাজনৈতিক পুঁজি করতে হবে। কারণ, একচেটিয়া সব আন্দোলনেরই শরিক হতে পারে না কংগ্রেস। হলে সেটি রাজনৈতিক ভাবে ব্যুমেরাংও হয়ে উঠতে পারে। তাই সব দিক বিবেচনা করেই পা ফেলতে হবে।
এই লক্ষ্যেই বিভিন্ন রাজ্যে সংরক্ষণের দাবিতে যে আন্দোলন চলছে, তা নিয়ে সংসদে দলের নেতাদের সরব হওয়ার নির্দেশ দিয়ে রাহুল জল মাপতে শুরু করেছেন। দিল্লির যন্তর-মন্তরে তামিলনাড়ুর কৃষকদের ধর্নায় যোগ দেওয়ার আগেও রাহুল এক সপ্তাহ সময় নিয়েছেন। সেখানে কৃষকেরা মানুষের খুলি সামনে রেখে দাবি করছেন, সেগুলি আত্মঘাতী কৃষকদেরই খুলি। রাহুল প্রথমে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখেছেন। তামিলনাড়ুতে কংগ্রেসের শরিক ডিএমকে-র নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। এর পরে গত সপ্তাহে যন্তর-মন্তরে ওই কৃষক ধর্নায় যোগ দিয়ে রাহুল অভিযোগ আনেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের ৫০ জন ধনীর দেড় লক্ষ কোটি টাকা মাফ করেন, কিন্তু কৃষকদের ঋণ মাফ করেন না। কৃষকদের আওয়াজ প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছোয় না।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, যন্তর-মন্তরের ধর্নায় যোগ দেওয়াও রাহুলের বড় পরিকল্পনার অঙ্গ। এ বারে তিনি বিভিন্ন রাজ্যে সফর করবেন। বড় বড় জনসভা করার বদলে ছোট ছোট আন্দোলনের মুখ হয়ে ওঠার চেষ্টা করবেন। এ ছাড়া সংগঠনকে আরও শক্ত করার জন্য রাহুল ইতিমধ্যেই নতুন নতুন পরীক্ষা শুরু করেছেন। উত্তরপ্রদেশের হারের থেকে শিক্ষা নিয়ে ভোটমুখী গুজরাতে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বুথের সুপারিশকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্যেও দলের নতুন মুখকে গুরুত্ব দিয়ে সংগঠনকেও আরও মজবুত করার চেষ্টা করছেন। লোকসভা ভোটের আগে এ বারে তিনি এমন কিছু প্রসঙ্গ খুঁজছেন, যাতে মোদী সরকারকে বেগ দেওয়া যায়। আবার একই সঙ্গে নিজেও সেই আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠতে পারেন।