রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে অনিল অম্বানীর সরাসরি ‘ডিল’ হয়েছে বলে অভিযোগ করল কংগ্রেস। দলের প্রবীণ নেতা জয়পাল রেড্ডি আজ মোদীকে ‘মধ্যযুগীয় শাসক’ বলে তাঁর সঙ্গে তুলনা টানলেন ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইয়েরও। যিনি বলতেন, ‘‘আমিই রাষ্ট্র।’’ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘মিথ্যাকে বারবার বললে কি সত্যি হয়ে যায়?’’
রাফাল নিয়ে রাহুল গাঁধী গত কয়েক মাস ধরেই দেশে-বিদেশে মোদীকে নিশানা করছেন। লক্ষ্য, লোকসভা ভোটের আগে মোদীর ‘দুর্নীতিমুক্ত’ ভাবমূর্তি নষ্ট করা। অনিল নিজের বক্তব্য জানিয়ে রাহুলকে চিঠি দিয়েছেন এবং ডজন খানেক কংগ্রেস নেতাকে আইনি নোটিসও পাঠিয়েছেন। তবে অনড় রাহুল গোটা দেশে রাফাল নিয়ে প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন। তার অঙ্গ হিসাবে এ বার জয়পালের মতো প্রবীণ নেতাকে দিয়ে আক্রমণ আরও ধারালো করালেন।
জয়পাল আজ বলেন, ‘‘ফ্রান্সের সঙ্গে রাফাল চুক্তির দু’দিন আগেও বিদেশ সচিব বলেছিলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী, বিদেশসচিব, মন্ত্রিসভার কেউই জানতেন না, প্রধানমন্ত্রী ফ্রান্সে গিয়ে কী চুক্তি করছেন। জানতেন শুধু অনিল অম্বানী। তাই চুক্তির ঠিক আগে তিনি যুদ্ধবিমান বানানোর অভিজ্ঞতা ছাড়াই একটি সংস্থা খুলে ফেলেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীও হন। রাফাল নিয়ে তাই ‘ডিল’ হয়েছে নরেন্দ্র মোদী আর অনিল অম্বানীর মধ্যে।’’ প্রবীণ কংগ্রেস নেতার কটাক্ষ, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আগে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র কথা ভাবতেন। এখন ‘মেক ব্রোকারস ইন ইন্ডিয়া’ ভাবেন। তা-ও বিদেশি নয়, দেশি ‘ব্রোকার’।’’
একসময় বফর্সে ঘুষ কেলেঙ্কারি নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল ভারতের রাজনীতি। সে ভাবে রাফাল প্রচারকে তুঙ্গে নিয়ে যেতে চাইছেন রাহুল। সেই ধাঁচেই আজ মোদীর সঙ্গে অম্বানীর ‘ডিল’ আর ‘দালালি’র প্রসঙ্গ টেনে আনে কংগ্রেস। জয়পাল বলেন, ‘‘একজন ব্যর্থ শিল্পপতিকে কী করে ১ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকার বরাত পাইয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী? ফ্রান্স এমনকি, রিলায়্যান্সও যুদ্ধবিমানের দাম বলছে, কিন্তু বলছে না সরকার।’’
তবে বিজেপির পাল্টা আক্রমণের কথা মাথায় রেখে জয়পাল বলছেন, রাফালের সঙ্গে বফর্সের তুলনা হয় না। রাফালের গুণগত মান নিয়েও তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন না। বরং দাম আর প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন। এই প্রসঙ্গে মোদীর সঙ্গে চতুর্দশ লুইয়ের তুলনা টেনে জয়পাল বলেন, ‘‘বিজেপিতে মুরলীমনোহর জোশীর মতো হেভিওয়েট নেতাকে বাদ দিয়ে সীতারামনের মতো ‘লাইটওয়েট’ নেত্রীর পদোন্নতি হয়েছে। ‘মিডলওয়েট’দের প্রান্তিক করে রাখা হয়েছে। কংগ্রেস নেতারা এখন আইনি নোটিস পাচ্ছেন। তাতে কেউ ভয় পান না। বরং মামলা হলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী আর গোপনীয়তার কথা বলে তথ্য আড়াল করতে পারবেন না।’’