সাড়ে আট লক্ষ কোটি আসবে কী করে, প্রশ্ন

হে প্রভু, সবই কি মায়া! পাঁচ বছরে ৮ লক্ষ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। ধুঁকতে থাকা রেলের চাকায় গতি ফেরাতে আগামী পাঁচ বছরে ওই বিপুল টাকা ঢালা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন সুরেশ প্রভু। শিল্পমহল এতে উজ্জীবিত। তারা মনে করে, রেল-পরিকাঠামোয় ওই টাকা ঢালা হলে, রেলের হাল ফিরবে। উপরি হিসেবে চাঙ্গা হবে দেশের অর্থনীতিও। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, কী ভাবে সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা জোগাড় করবেন প্রভু? বিনিয়োগ ধরে আনবেন কোথা থেকে? তাই তাঁদের কটাক্ষ, “এ সবই প্রভুর মায়া!”

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৬
Share:

হে প্রভু, সবই কি মায়া!

Advertisement

পাঁচ বছরে ৮ লক্ষ ৫৬ হাজার কোটি টাকা।

ধুঁকতে থাকা রেলের চাকায় গতি ফেরাতে আগামী পাঁচ বছরে ওই বিপুল টাকা ঢালা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন সুরেশ প্রভু। শিল্পমহল এতে উজ্জীবিত। তারা মনে করে, রেল-পরিকাঠামোয় ওই টাকা ঢালা হলে, রেলের হাল ফিরবে। উপরি হিসেবে চাঙ্গা হবে দেশের অর্থনীতিও। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, কী ভাবে সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা জোগাড় করবেন প্রভু? বিনিয়োগ ধরে আনবেন কোথা থেকে? তাই তাঁদের কটাক্ষ, “এ সবই প্রভুর মায়া!”

Advertisement

মোদী-সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ রেল বাজেটে প্রভুর লক্ষ্য যে ঠিক, তা নিয়ে দ্বিমত প্রায় নেই। কিন্তু অনেকেরই প্রশ্ন, রেলের পরিকাঠামোয় ভর করে অর্থনীতি চাঙ্গা করার স্বপ্ন শেষে গাছে কাঁঠাল-গোঁফে তেল হয়ে থেকে যাবে না তো? বিশেষত প্রভু যেখানে জানিয়েছেন, রেলের নুন আনতে পান্তা ফুরনোর দশা। তবে এত টাকা আসবে কোথা থেকে? রেলমন্ত্রীর সওয়াল, টাকা জোগাড়ের জন্য সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ (পিপিপি) এবং বাজার থেকে ধার নেওয়ার উপর ভরসা করছেন তিনি। স্রেফ অর্থ মন্ত্রকের দিকে তাকিয়ে না-থেকে চেষ্টা করছেন নিজেরাই টাকা জোগাড়ের। বলেছেন, স্পেশাল পারপাস ভেহিক্ল বা এসপিভি তৈরি করার কথা।

রেল বোর্ডের প্রাক্তন কর্তা-সহ অনেকের আশঙ্কা, এত aaaaণ নিয়ে আধুনিকীকরণ করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত দেনার জালে জড়িয়ে যাবে না তো রেল? বিশেষত আগামী বছর নতুন রেললাইন বসানো বা ট্রেনের কামরা কিনতে যেখানে বিশ্বব্যাঙ্কের aaaaণের উপর ভরসা করতে হচ্ছে তাদের?


সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

শুধু তা-ই নয়। পরিসংখ্যান বলছে, গত তিন বছরে রেলে লগ্নি এসেছে দেড় লক্ষ কোটি টাকা। তা হলে আগামী ৫ বছরে সাড়ে ৮ লক্ষ কোটি বিনিয়োগ আসবে কোথা থেকে? বিরোধীরা মনে করাচ্ছেন, লালুপ্রসাদ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হালফিলে প্রত্যেক রেলমন্ত্রীর বাজেটেই পিপিপি থেকে কোটি কোটি টাকার লগ্নি আসার স্বপ্ন দেখানো হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, রেলে পিপিপি-র বাঁশি বাজেনি। বেসরকারি লগ্নি অধরাই থেকে গিয়েছে। হালে রেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির দরজা খুলে দিয়েছে মোদী-সরকার। কিন্তু সেই গাঙেই বা জোয়ার কোথায়?

এই সমস্যার কথা প্রভুও বিলক্ষণ জানেন। গতানুগতিক ভাবে শুধু মাত্র পিপিপি-র কথা না বলে অন্য ভাবে ভেবেছেন তিনি। শুধু বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে হাত মেলানোর কথা না-বলে যৌথ উদ্যোগে সামিল হওয়ার দরজা খুলে দিয়েছেন রাজ্য সরকার ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির সামনে। তিনি আত্মবিশ্বাসী, এ বার সাফল্য আসবে।

বিপুল লগ্নির খোঁজ করতে গিয়ে প্রভু জানিয়েছেন, পেনশন ও বিমা তহবিল কিংবা বিশ্ব ব্যাঙ্কের মতো আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে aaaaণ নিতে পিছপা হবেন না তিনি। রেল বোর্ডের কর্তারা বলছেন, লগ্নি করতে উৎসাহ দেখিয়েছে চিন, ফ্রান্স, কানাডার বিভিন্ন সংস্থা। তবে সেই দেশি-বিদেশি লগ্নি আসার প্রথম শর্ত স্থায়ী নীতি। যা বছর-বছর পাল্টাবে না। এই বাজেটে বেসরকারি ক্ষেত্রকে সেই ভরসাই দিতে চেয়েছেন প্রভু।

সেই সঙ্গে রেলের ঘাড়ে খরচের বোঝা কমাতে জোর দেন এসপিভি গড়ার উপর। যেখানে রেল টাকা ঢালবে, কিন্তু অংশীদারির ভিত্তিতে। ফলে সব টাকা জোগাড়ের দায় তার উপরে বর্তাবে না। তা ছাড়া, সেখানে নেওয়া ধার থাকবে রেলের হিসাবের খাতার বাইরে। ফলে মাত্রাতিরিক্ত aaaaণে খারাপ হবে না তার আর্থিক স্বাস্থ্যও।

শিল্পমহল তাই আশাবাদী যে, প্রভু পাঁচ বছরে ওই টাকা জোগাড় করে দেখাবেন। শিল্পপতি আদি গোদরেজের মতে, “আয় বাড়ানোর উদ্ভাবনী পথ দেখানো হয়েছে বাজেটে। পেনশন ও বিমা তহবিল থেকে টাকা পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ করা হয়েছে রেল অর্থ নিগম ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের কথা। এ বার বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।”

সার্বিক ভাবেও এই বাজেটে আশার আলো দেখেছে শিল্পমহল। যে ভাবে প্রভু পাঁচ বছরের নীল নকশা এঁকেছেন, তাকে স্বাগত জানিয়েছেন শিল্পপতি সুমিত মজুমদার। সুনীল মুঞ্জলের মতে, “পিপিপি-পরিকল্পনা ঢেলে সাজা, রেলের জমির ডিজিটাল মানচিত্র তৈরি করে টাকা জোগাড়ে তা ব্যবহার এ সবই রেলের জন্য যুগান্তকারী ভাবনা।” শিল্পমহলের বড় অংশেরই তাই আশা, এই বাজেট শুধু মায়া নয়। তার বাস্তবায়নে সাড়ে ৮ লক্ষ কোটি জোগাড়ও করতে পারবেন প্রভু। বিরোধীদের মত অবশ্য অন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন