ডিজেল ইঞ্জিনের সাবেক রাজধানী এক্সপ্রেস। ছবি রেলের সৌজন্যে।
আসল রাজা তো মেজাজটাই। হাওড়া রাজধানী এক্সপ্রেসের ৫০তম জন্মদিনে কাল, রবিবার রেলের আপ্যায়নে সেই রাজকীয় মেজাজের ঝলকই ফের দেখতে পাবেন ওই ট্রেনের যাত্রীরা। গোলাপ, চকলেট, বিশেষ পোস্টাল স্ট্যাম্প দেওয়া গ্রিটিংস কার্ড, মোবাইল ফোনে শুভেচ্ছাজ্ঞাপক এসএমএস-সহ হরেক উপচারে যাত্রীদের মনে করিয়ে দেওয়া হবে রাজধানী এক্সপ্রেসের প্রথম যাত্রার স্মৃতি।
প্রযুক্তি, পরিকাঠামো এবং সম্ভাব্য যাত্রীদের নিয়ে সাত বছর ধরে বিস্তর মাথা ঘামানোর পরে ১৯৬৯ সালের ৩ মার্চ দেশের প্রথম রাজধানী এক্সপ্রেসের সূচনা হয়েছিল হাওড়া-নয়াদিল্লি পথে। যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য এবং গতির নিরিখে দেশের সেরা ট্রেন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল রাজধানী। সবুজ পতাকা নেড়ে চালক জি এল টচার-কে ট্রেন ছাড়ার সঙ্কেত দিয়েছিলেন গার্ড এস ও লেভি। ১৭ ঘণ্টা ২০ মিনিটে ১৪৪৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছিল ট্রেনটি।
তার আগে ভারতীয় রেলের ইতিহাসে অন্তত ১০০ বছর ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি আটকে ছিল ঘণ্টায় ৬০ মাইলে বা ৯৬ কিলোমিটারে। রাজধানীর হাত ধরেই প্রথম ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার ছুঁয়েছিল। সে-দিন ডিজেল ইঞ্জিনে চলা রাজধানী এক্সপ্রেসে কোচ ছিল মাত্র ন’টি। তার মধ্যে পাঁচটি এসি চেয়ারকার, একটি প্রথম শ্রেণির এসি কামরা, একটি ডাইনিং কাম লাউঞ্জ কার এবং দু’টি জেনারেটর কার। চেয়ারকার উঠে গিয়ে এখন রাজধানী এক্সপ্রেসে অবশ্য সবই উন্নত শ্রেণির বাতানুকূল স্লিপার কামরা।
ধাপে ধাপে বিভিন্ন রাজ্য থেকে ওই ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সারা দেশে এখন ২৫ জোড়া রাজধানী এক্সপ্রেস চলে। সস্তার বিমানযাত্রার যুগে রাজধানী এক্সপ্রেসের গরিমা কিছুটা ম্লান হয়ে গেলেও রেলের খাতায় তার কৌলীন্য কমেনি।
প্রথম দিকের রাজধানী এক্সপ্রেসে যাত্রীদের খাদ্যতালিকায় বিশেষ নজর রাখা হত। প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের দেওয়া হত কাস্টার্ড ক্যারামেল। সব যাত্রীদের জন্যই থাকত সূপ। ডিনারে ফিশফ্রাই এবং রসগোল্লা।
ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কেটারিং অ্যান্ড টুরিজম কর্পোরেশন বা আইআরসিটিসি-র পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার দেবাশিস চন্দ্রের বাবা রতনচন্দ্র চন্দ্র প্রথম রাজধানী এক্সপ্রেসের কেটারিং ম্যানেজার ছিলেন। রাজধানীর খাদ্যতালিকা নিজের হাতে ঠিক করতেন তিনি। রাজধানীর ৫০তম জন্মদিনেও সেই মেনু ফিরিয়ে আনছে আইআরসিটিসি। ‘‘রসনাতৃপ্তি আর আপ্যায়নে পুরনো স্মৃতিই মনে করানোর চেষ্টা করব আমরা,’’ বললেন দেবাশিসবাবু।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী জানান, ট্রেনের জন্মদিন কেক কাটর ব্যবস্থাও থাকছে। ট্রেনের গায়ে লাগানো হবে ৫০ বছরের বিশেষ স্টিকার।
রবিবার দুপুরে ট্রেন ছাড়ার আগে যাত্রীদের হাতে গোলাপ, চকলেট এবং রাজধানীর ৫০ বছর উপলক্ষে ছাপানো পোস্টাল স্টাম্প সমন্বিত কার্ড তুলে দেওয়া হবে। যাত্রীদের স্বাগত জানাবেন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার হরিন্দ্র রাও। ট্রেনের কামরার ঘোষণাতেও থাকবে যাত্রীদের জন্য বিশেষ শুভেচ্ছাবার্তা।