গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই)-এর কাছে সাড়ে তিন লক্ষ কোটিরও বেশি টাকা চেয়েছিল কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক। যা আরবিআই-এর মোট মূলধনী সঞ্চয়ের এক-তৃতীয়াংশ। কেন্দ্রের বক্তব্য ছিল, এটা আরবিআই-এর ‘বাড়তি সঞ্চয়’। কিন্তু সরকারি আর্জিতে সরাসরি ‘না’ বলে দিয়েছে আরবিআই। মূলত, এই বিষয়টি নিয়েই আরবিআই-এর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের।
আরবিআই-এর একটি মহল থেকে বলা হচ্ছে, এটা কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের স্বায়ত্তশাসনে নাক গলানোর সরকারি অপচেষ্টা। আর কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের তরফে বলা হচ্ছে, দেশের আর্থিক উন্নতির জন্য বিশেষ ভাবনাচিন্তা না করে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক শুধু তার মূলধনের ভাঁড়ারের শ্রীবৃদ্ধিকেই মাথায় রাখছে। তার অধীনে থাকা অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির শরীর-স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রাখছে না। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের বক্তব্য, আরবিআই যদি তার মোট সঞ্চয়ের এক-তৃতীয়াংশ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির স্বাস্থ্য ফেরাতে দিত, তা হলে আরও বেশি সংখ্যক নাগরিককে আরও বেশি পরিমাণে ঋণ দিতে পারত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। তাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির ব্যবসা সম্প্রসারণে সুবিধা হত।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের আর্জিতে ‘না’ বলতে গিয়ে আরবিআই-এর তরফে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ‘লক্ষ্মীর ভাঁড়ার’ ভেঙে তা বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হলে, তা আরবিআই ও সরকার, দু’য়েরই বিশ্বাসযোগ্যতা কমিয়ে দেয়। এতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির ব্যবসা বাড়ানোর জন্য সরকারের যে কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা অর্থবরাদ্দ নেই, সেটাই প্রমাণিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন- উর্জিতকে চাপে রাখারই বার্তা
আরও পড়ুন- কর্নাটক উপনির্বাচনেও ধাক্কা বিজেপির, ৫টির মধ্যে ৪টিতেই জয়ী কংগ্রেস, জেডি (এস)
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি আর্জিতে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের সটান ‘না’ বলে দেওয়াটাই সরকারের সঙ্গে আরবিআই-এর টানাপড়েনের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরবিআই-এর গভর্নর উর্জিত পটেলকে অপসারণের ‘ভয় দেখানো’র সরকারি প্রচেষ্টা তারই ফলশ্রুতি। যদিও আরবিআই-এর পূর্বতন গভর্নর রঘুরাম রাজন জানিয়েছেন, ‘‘এই ‘না’ বলার এক্তিয়ার রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের। সরকার কী চাইছে, সেটা জানাতেই পারে আরবিআই-কে। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আইনি ক্ষমতা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের হাতেই। সরকারকে সেটা মেনে নিতে হবে।’’
সংসদে পেশ হওয়া তথ্য বলছে, এই মুহূর্তে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ ৯.৫৯ লক্ষ কোটি টাকা। যার মধ্যে রয়েছে মজুত সোনা ও মুদ্রার মোট আর্থিক মূল্য। যার পরিমাণ ৬.৯১ লক্ষ কোটি টাকা। তার সঙ্গে রয়েছে কনটিনজেন্সি ফান্ড বা আপৎকালীন তহবিল। যার মোট পরিমাণ ২.৩১ লক্ষ কোটি টাকা।