রবার্টের পাশে দাঁড়িয়ে আফসোস

রবার্ট বঢরা কংগ্রেসের কে? সনিয়া গাঁধীর জামাই, রাহুল গাঁধীর ভগ্নিপতি। কিন্তু কংগ্রেস সংগঠনের কোনও পদে কি রয়েছেন, নাকি দলের প্রাথমিক সদস্য? তা হলে সংবাদমাধ্যমের কোনও প্রতিনিধির সঙ্গে বঢড়া দুর্ব্যবহার করলে কংগ্রেস প্রতিক্রিয়া দেবে কেন?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪৯
Share:

রবার্ট বঢরা কংগ্রেসের কে?

Advertisement

সনিয়া গাঁধীর জামাই, রাহুল গাঁধীর ভগ্নিপতি। কিন্তু কংগ্রেস সংগঠনের কোনও পদে কি রয়েছেন, নাকি দলের প্রাথমিক সদস্য? তা হলে সংবাদমাধ্যমের কোনও প্রতিনিধির সঙ্গে বঢড়া দুর্ব্যবহার করলে কংগ্রেস প্রতিক্রিয়া দেবে কেন?

৪৮ ঘণ্টা পর অবশেষে টনক নড়ল কংগ্রেসের। ব্যক্তিগত জীবনে কোনও মানুষের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারের প্রশ্নে সংবিধানের ধারা উল্লেখ করে যে কংগ্রেস গত কাল বঢরার পাশে দাঁড়িয়েছিল, তারাই আজ ক্ষত মেরামতে সক্রিয় হল। কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের তরফে গত কাল বিবৃতি দিয়ে মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেছিলেন, “সংবিধান দেশের প্রতিটি মানুষকে নিজের মতো করে জীবনযাপনের অধিকার দিয়েছে। রবার্ট বঢরার সঙ্গে যা হয়েছে দুর্ভাগ্যজনক। এ ভাবে তাঁকে বিব্রত করা ঠিক হচ্ছে না।” কিন্তু তার পরেই আজ হাইকম্যান্ডের তরফে বলা হয়, “বঢরার সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও সম্পর্ক নেই। যে হেতু বঢরার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগের সঙ্গে হরিয়ানার প্রাক্তন কংগ্রেস সরকারের যোগ রয়েছে, তাই গত কাল তাঁকে নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল।”

Advertisement

শুক্রবার দিল্লির এক অভিজাত হোটেলে বৈদ্যুতিন মাধ্যমের এক সাংবাদিক রবার্টকে জমি কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রশ্ন করলে, তিনি রাগ চেপে রাখতে পারেননি। সাংবাদিকের হাতে ধরা মাইকটি এক ঝটকায় নামিয়ে দিয়ে, জোর করে ফুটেজটি মুছে দিতে নিজের নিরাপত্তা রক্ষীদের নির্দেশ দেন রবার্ট। ঘটনার পরেই নিয়ে সমালোচনার ঝড় শুরু হয়ে যায়। ফের খুঁচিয়ে ওঠে জমি কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গ।

এই অবস্থায় গত কাল সকালে মেয়ের বাড়িতে যান সনিয়া। কংগ্রেস সূত্র জানাচ্ছে, রবার্টকে সনিয়া সংযত থাকতে বলেছেন। কিন্তু একই সঙ্গে কংগ্রেস দলীয় ভাবে বঢরার পাশে দাঁড়ানোয় নতুন বিতর্ক তৈরি হয়।

কংগ্রেস সূত্রের খবর, আনন্দ শর্মা, শাকিল আহমেদ, জনার্দন দ্বিবেদীর মতো দলের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা এ ব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া না দেওয়ারই পক্ষে ছিলেন। এমনকী দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের পুত্র সন্দীপ দীক্ষিত রবার্টের সমালোচনাও করেন। বিতর্ক শুরু হতেই কংগ্রেস মুখপাত্র রেণুকা চৌধরির কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা।

রেণুকা তখন পাল্টা জবাব দেন, রবার্ট কংগ্রেসের কেউ নন। তা হলে তাঁকে নিয়ে দল কেন বলবে?

কিন্তু কিছু সময় পরেই রবার্টের পাশে দাঁড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। এবং ২৪ ঘন্টা যেতে না যেতেই ভুল বুঝতে পারে দল। আসলে দশ নম্বর জনপথ ঘনিষ্ঠ কিছু নেতা গত কাল সনিয়া-রাহুলকে বোঝান, রবার্টের সমালোচনা করে আসলে কংগ্রেসকে কালি মাখানোর ষড়যন্ত্র করছে বিজেপি। দলের উচিত এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। কংগ্রেসের এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, “রাজনৈতিক বিবেচনা বোধ শিকেয় তুলেই তড়িঘড়ি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দল।”

কিন্তু এখন দশ জনপথ বুঝতে পারছে, রবার্টের পক্ষে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগকে নিজের গায়ে মেখে ফেলেছে কংগ্রেস। রবার্ট এক জন ব্যবসায়ী। তিনি সনিয়ার জামাই হলেও কংগ্রেসের কেউ নন। সে ক্ষেত্রে রবার্টের বিরুদ্ধে সনিয়া বা রাহুল কোনও কঠোর বার্তা দিলে প্রশংসা পেতেন। কিন্তু কংগ্রেসের ভূমিকায় এখন এটাই প্রতিপন্ন হচ্ছে যে জামাইকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে গাঁধী পরিবার। বস্তুত এই বোধোদয় থেকেই অবস্থান পাল্টে ক্ষত মেরামতে নামেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।

দলের সাংবাদিক বৈঠকে মুখপাত্র অজয় কুমার বলেন, “রবার্ট বঢরা কংগ্রেসের সদস্য নন। তাঁকে কেন্দ্র করে হরিয়ানায় প্রাক্তন কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে তর্জনী তোলা হচ্ছে। সেজন্যই দল প্রতিক্রিয়া দিতে বাধ্য হয়েছে। এতে অতিরিক্ত অর্থ খোঁজা ঠিক হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন