চাই আরও রেখা, বাল্য-বিবাহ রুখতে নতুন প্রকল্প কেন্দ্রের

পুরুলিয়ার এক অখ্যাত গ্রামের মেয়ে রেখা কালিন্দি। কিন্তু তামাম দুনিয়ার নজর কেড়েছে তার প্রতিবাদের ভাষা। আঠারোর কোঠা পেরোনোর আগেই বাড়ি থেকে চাপ এসেছিল বিয়ে করার। কিন্তু রুখে দাঁড়িয়েছিল রেখা।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৩৩
Share:

পুরুলিয়ার এক অখ্যাত গ্রামের মেয়ে রেখা কালিন্দি। কিন্তু তামাম দুনিয়ার নজর কেড়েছে তার প্রতিবাদের ভাষা। আঠারোর কোঠা পেরোনোর আগেই বাড়ি থেকে চাপ এসেছিল বিয়ে করার। কিন্তু রুখে দাঁড়িয়েছিল রেখা। শুধু নিজে নয়, গ্রামের অন্য নাবালিকা বন্ধুদের বিয়েও আটকানোর জন্য পুরোদস্তুর বিপ্লব করে বসে মেয়েটি। যার জন্য সাহসিকতার পুরস্কারও পেয়েছে সে।

Advertisement

এ দেশে ২০০৬ সালে আইন করে বাল্য-বিবাহ বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু রেওয়াজ এখনও থামেনি। সমীক্ষা বলে, এখনও দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৮ বছরের নীচে। গ্রামের গরিব পরিবারে সেই সংখ্যাটি ক্রমশই বাড়ছে। এই প্রথা ঠেকাতেই এ বার আর একটি নতুন অভিযান শুরু করতে চলেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। মাস কয়েক আগে কন্যা ভ্রূণ-হত্যা বন্ধ করতে ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ অভিযান শুরু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। হরিয়ানায় এই প্রবণতা বেশি বলে সেখানকার জাঠ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি। এই অভিযান সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছে বলে গতকাল হরিয়ানায় গিয়ে অভিনন্দনও জানিয়েছেন মোদী। এ বার আরও এক ধাপ এগোতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার।

বাল্য-বিবাহ রুখতে নতুন অভিযান শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী। যার স্লোগান, ‘পহলে পড়াই, ফির বিদাই’। অর্থাৎ প্রথমে শিক্ষা ও পরে বিবাহ। পড়াশোনা সম্পূর্ণ করার পরে সাবালিকা হয়ে বিয়ে। ঠিক যে ভাবে পুরুলিয়ার রেখা কালিন্দি রুখে দাঁড়িয়েছিল, ঠিক সে ভাবেই গোটা দেশে সচেতনতা বাড়াতে গ্রামে-গ্রামে এই অভিযান ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এ বছর স্বাধীনতা দিবসে বিজেপি-শাসিত ঝাড়খণ্ডে ঠিক এ ধরনের একটি প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ এই প্রকল্পটি নিয়ে একপ্রস্ত কথাও বলেছেন। সেই মডেলটিই অনুসরণ করতে আগ্রহী কেন্দ্র।

Advertisement

‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ অভিযানে যে ভাবে জাঠ মহাসভাকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে হয়েছিল, বিজেপি নেতৃত্ব জানেন এই প্রকল্পের সাফল্যের জন্যও গ্রামের পঞ্চায়েতগুলোকে সামিল করতে হবে। জোর দিতে হবে সেই সব রাজ্যে, যেখানে বাল্য-বিবাহের প্রবণতা বেশি। এই প্রকল্প চালু হলে ব্লক স্তরে প্রতিটি শিক্ষাকর্মীকে ফি-সপ্তাহে বৈঠক করতে হবে। জন্মের শংসাপত্র অনুসারে প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর সঠিক জন্মতারিখ লিপিবদ্ধ করানো হবে। স্কুলছুটের সংখ্যা কমাতে সংশ্লিষ্ট পরিবারের সুবিধা-অসুবিধাও দেখা হবে। সম্প্রতি আরএসএস-বিজেপি বৈঠকে স্থির হয়েছিল, আরও বেশি করে তফসিলি জাতি ও উপজাতি পড়ুয়াদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে। মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকার দশম শ্রেণির পরে জীবিকা-সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়ার প্রকল্পও চালু করেছে। ছত্তীসগঢ় সরকার ‘সরস্বতী সাইকেল যোজনা’য় ছাত্রীদের সাইকেল দিয়ে স্কুলে তাদের আসার হার অনেকটাই বাড়িয়ে ফেলেছে। নাবালিকা ছাত্রীদের স্কুলমুখী করতে প্রতিটি রাজ্যের এই ধরনের সফল প্রকল্পগুলোই এ বার এক ছাতার তলায় এনে নতুন অভিযান শুরু করতে আগ্রহী কেন্দ্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন