(বাঁ দিকে) আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের কোনও প্রতিপক্ষ চাইছেন না আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প! তাই কি ‘ব্রিক্স’-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলির উপর ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি? ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার আগে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে।
‘ব্রিক্স-শুল্ক’ নিয়ে গত মঙ্গলবার আমেরিকার ক্যাবিনেট বৈঠকের শেষেও সদস্য দেশগুলিকে হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। আবার ঠিক তার আগের দিন, সোমবার হোয়াইট হাউস থেকে তিনি নিজেই বলেছেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা প্রায় শেষ পর্বে এসে পৌঁছেছে। শীঘ্রই তা চূড়ান্ত হয়ে যেতে পারে বলেও আভাস দিয়েছেন তিনি। ‘ব্লুমবার্গ’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যিক বোঝাপড়া এবং ব্রিক্স’-এর সদস্যরাষ্ট্র হওয়া— বর্তমান প্রেক্ষিতে দু’টি ঘটনা ভারতকে একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলতে পারে।
নয়াদিল্লির সরকারি আধিকারিক সূত্রকে উদ্ধৃত করে ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, ট্রাম্পের ওই হুমকি নিয়ে আপাতত ভারত খুব বেশি উদ্বিগ্ন নয়। ওই সরকারি আধিকারিকদের মতে, ট্রাম্প মনে করছেন ‘ব্রিক্স’ বিশ্ববাজারে ডলারের আধিপত্যকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। তবে ভারতের এমন কোনও অভিপ্রায় নেই বলেই জানিয়েছেন তাঁরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সরকারি কর্তারা ব্লুমবার্গকে জানান, ‘ব্রিক্স’-এর নিজস্ব মুদ্রার বিষয়ে ভারতের কোনও সমর্থন নেই। যদিও নয়াদিল্লির বাণিজ্য মন্ত্রকের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে কোনও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পায়নি ব্লুমবার্গ।
বস্তুত, ট্রাম্প যখন ‘ব্রিক্স’-এর উদ্দেশে হুমকি দেন, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্রাজ়িলেই ছিলেন। গত মঙ্গলবার ভারতীয় বিদেশ দফতরের সচিব (পূর্ব) পি কুমার জানান, ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে ব্রাজ়িলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি মোদীর। ঘটনাচক্রে, আগামী বছর ‘ব্রিক্স’-এর সভাপতিত্বের দায়িত্ব পাওয়ার কথা রয়েছে ভারতের। ‘ব্লুমবার্গ’-এর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এই আন্তর্জাতিক জোটের অন্যতম দুই সদস্যরাষ্ট্র চিন এবং রাশিয়া চাইছে ‘ব্রিক্স’-কে আমেরিকার বিপরীতে একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক মঞ্চের রূপ দিতে।
তবে ভারতের সভাপতিত্ব থাকাকালীন এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছে ওয়াশিংটন। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই ভারতকে কৌশলগত এক বন্ধুরাষ্ট্র হিসাবে বিবেচনা করে আমেরিকা। এশিয়ায় চিনের প্রভাবকে ঠেকাতে ভারতকে প্রয়োজন আমেরিকার। সে ক্ষেত্রে অনুমান করা হচ্ছে, অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি দিয়ে ‘ব্রিক্স’কে চাপে রাখতে চাইছেন ট্রাম্প।
গত রবিবার ব্রাজ়িলের রিও ডি জেনেইরো শহরে ‘ব্রিক্স’ সম্মেলন আয়োজিত হয়। সেখানে আন্তর্জাতিক জোটটির যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হওয়ার পরেই সরাসরি ‘ব্রিক্স’কে নিশানা করেন ট্রাম্প। ‘ব্রিক্স’-এর যে সদস্যরাষ্ট্রগুলি ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের বিরোধিতা করেছিল, তাদের মধ্যে ব্রাজ়িল এবং দক্ষিণ আফ্রিকাও রয়েছে। ঘটনাচক্রে দুই দেশেই শুল্ক-চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে এপ্রিলে যে শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন, তা-ই অপরিবর্তিত রয়েছে। আবার ব্রাজ়িলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন পদক্ষেপ। এপ্রিলে ব্রাজ়িলের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিল আমেরিকা। বুধবার ব্রাজ়িলকে চিঠি পাঠিয়ে ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, তাদের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপাচ্ছেন তিনি। এক ধাক্কায় ১০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। জুলাই মাসে ট্রাম্প-ঘোষিত শুল্কগুলির মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ।
তবে ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে ভারত প্রকাশ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। অনুমান করা হচ্ছে, ভারত যে আমেরিকার সঙ্গে একটি মসৃণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক চায়, তা বোঝানোর জন্যই এই পদক্ষেপ। যদিও ব্রাজ়িলের উপর অতিরিক্ত শুল্কের নেপথ্যে শুধুমাত্র বাণিজ্যিক কারণ রয়েছে কি না, তা-ও স্পষ্ট নয়। কারণ চিঠিতে ব্রাজ়িলের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে বিচারপ্রক্রিয়া চালানোর অভিযোগও তুলেছেন তিনি।