Uttarkashi Tunnel Collapse

উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আটকে আট দিন, উদ্ধারে দেরি বুঝে ব্যবস্থা ভাত-রুটি পৌঁছে দেওয়ার

গত ১২ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ ব্রহ্মখাল-যমুনোত্রী হাইওয়ের নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গটির একাংশ ধসে পড়ে। সেই থেকে সাড়ে আট মিটার উঁচু ও প্রায় দু’কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গে আটকে রয়েছেন শ্রমিকেরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৩০
Share:

উত্তরকাশীতে এই সুড়ঙ্গের একাংশ ভেঙেই বিপর্যয় ঘটেছে। ছবি: পিটিআই।

Advertisement

বড় বড় ট্রাকে দিনভর এসে চলেছে বিরাট যন্ত্র, বিশাল বিশাল কংক্রিটের ব্লক। লক্ষ্য, উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আট দিন ধরে আটকে থাকা ৪১ জন শ্রমিককে উদ্ধার করে আনা। তবে বোঝাই যাচ্ছে, তার জন্য যে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। ফলে নতুন পরিকল্পনায় উদ্ধারের তোড়জোড়ের পাশাপাশি চেষ্টা চলছে শুকনো খাবার খেয়ে জীবনধারণ করে থাকা ওই শ্রমিকদের ভাত-রুটি-তরকারি পৌঁছে দেওয়ার। সে জন্য তুলনায় চওড়া গহ্বরের একটি পাইপ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে খসে পড়া পাথরের মধ্য দিয়ে। প্রায় ষাট মিটার ধ্বংসস্তূপের ভিতরে সেই পাইপ ৪২ মিটারের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। অন্য রসদের সঙ্গে অবসাদ কাটানোর ওষুধও পাঠানো হচ্ছে আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছে।

আজ সিল্কিয়ারায় দুর্ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী ও উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী। গডকড়ী জানান, হিমালয় অঞ্চলের ভূস্তর এক রকমের না হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। তাঁর দাবি, শক্তিশালী যন্ত্রে ধ্বংসস্তূপ খোঁড়ার সর্বশেষ যে চেষ্টা হয়েছিল, সেটাই ছিল উদ্ধারের দ্রুততম পদ্ধতি। নরম মাটি দিয়ে খনন ভালই চলছিল। কিন্তু শক্ত স্তর খুঁড়তে গিয়ে প্রবল কম্পনে নতুন করে ছাদ ধসে পড়ে। বিকল্প ছ’টি পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান গডকড়ী। সুড়ঙ্গের ছাদ আর ধ্বংসস্তূপের মাঝে অল্প ফাঁকা জায়গা রয়েছে। খতিয়ে দেখতে সেখান দিয়ে রোবট পাঠানোর কথা বলেছেন তিনি। জানান, সার্ভে অব ইন্ডিয়া আকাশ থেকে সমীক্ষা করছে। তাঁর দাবি, সব ঠিকঠাক চললে আর দু’-তিন দিনের মধ্যে উদ্ধার সম্ভব হতে পারে।

Advertisement

গত ১২ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ ব্রহ্মখাল-যমুনোত্রী হাইওয়ের নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গটির একাংশ ধসে পড়ে। সেই থেকে সাড়ে আট মিটার উঁচু ও প্রায় দু’কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গে আটকে রয়েছেন শ্রমিকেরা। অক্সিজেন পাঠানোর সরু পাইপে ছোলা, বাদাম ইত্যাদি শুকনো খাবার ও দরকারি রসদ পাঠানো হচ্ছে তাঁদের। ওই শ্রমিকদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের তিন জন রয়েছেন। ধসে পড়া পাথরের মধ্য দিয়ে পাইপ ঢুকিয়ে তার ভিতর দিয়ে আটকে থাকা শ্রমিকদের বার করে আনার কথা ভাবা হয়েছিল। পর পর দু’বার সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। সিল্কিয়ারার দিক থেকে ধ্বংসস্তূপ খননের কাজ শুক্রবার দুপুরের পরে থমকে যায়। রবিবার সন্ধ্যার পরেও তা চালু হয়নি। জানানো হয়েছে, সুরক্ষা নিশ্চিত করে ফের শুরু হবে।

এ বার বিকল্প ক’টি পরিকল্পনা ধরে চেষ্টা শুরু হয়েছে। উপর থেকে পাহাড় খুঁড়ে দুর্গতদের কাছে সুড়ঙ্গের ছাদ ফুঁড়ে পৌঁছনোর দায়িত্ব পেয়েছে তেল ও গ্যাস উত্তোলনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ওএনজিসি। খনন শুরুর জায়গায় যন্ত্রপাতি নিয়ে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করে দিতে শনিবার সন্ধ্যা থেকে পাহাড়ে ৭০০ মিটার রাস্তা বানানো শুরু করেছে বর্ডার রোডস অর্গানাইজ়েশন। সুড়ঙ্গের অন্য মুখ বারাকোটে। সে দিক থেকে ১.৭ কিলোমিটার তৈরি হয়ে আছে। বাকি ৪৮০ মিটারের মধ্যে খুঁড়ে রাস্তা তৈরির চেষ্টাও হবে। যেখানে শ্রমিকেরা আটকে, তার দু’পাশের দেওয়াল ফুঁড়ে তাঁদের কাছে পৌঁছতে পাহাড়ের দু’জায়গা থেকে আড়াআড়ি খননের কথা বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও উদ্ধারকাজে যুক্ত বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বড়কর্তারা শনিবার থেকে টানা রয়েছেন সিল্কিয়ারাতেই।

পশ্চিমবঙ্গের যে তিন শ্রমিক ওই সুড়ঙ্গে আটকে রয়েছেন, তাঁরা হলেন কোচবিহারের তুফানগঞ্জের ১ ব্লকের চেকাডেরা গ্রামের মানিক তালুকদার, হুগলির পুরশুড়ার নিমডাঙির জয়দেব পরামানিক ও পুরশুড়ার হরিণাখালির সৌভিক পাখিরা। মানিকের স্ত্রী সোমা জানান, তাঁর স্বামী ঠিক আছেন বলে আজ উত্তরকাশী প্রশাসন বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছে। সৌভিকের বাবা অসিত পাখিরা এবং জয়দেবের বাবা তাপস পরামানিক জানান, সুড়ঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবস্থা করার চেষ্টা হবে বলে তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তাঁরা বলেন, “সেটা হলে ছেলের সঙ্গে কথা বলতে পারব, ছবি দেখতে পাব— এ সব ভেবে কিছুটা শান্তি পাচ্ছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন