প্রাক্তন সিএজি বিনোদ
ফের এক প্রাক্তন আমলার বই প্রকাশ। এবং তাকে ঘিরে ফের অস্বস্তির হাওয়া কংগ্রেসের অন্দরে। মনমোহন সিংহের প্রাক্তন মিডিয়া উপদেষ্টা সঞ্জয় বারু, তাঁর জমানার বিদেশমন্ত্রী নটবর সিংহের পর এ বার প্রাক্তন কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল বিনোদ রাই। এবং তাঁর নিশানায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ স্বয়ং। বিনোদের অভিযোগ, ইউপিএ জমানায় দুর্নীতির রিপোর্ট থেকে নাম বাদ দেওয়ার চাপ এসেছিল তাঁর উপর। জোট রাজনীতির চাপে কখনও-সখনও চুপ ছিলেন মনমোহন।
আগামী মাসে বিনোদের ‘নট জাস্ট অ্যান অ্যাকাউন্ট্যান্ট’ বইটি প্রকাশিত হবে। তার আগেই এক সংবাদপত্রে তিনি জানান, সিএজিতে থাকার সময়ই তাঁর বাড়িতে কয়েক জন রাজনীতিক এসেছিলেন। ইউপিএ আমলে কমনওয়েলথ গেমস ও কয়লা খনির ব্লক বণ্টন কেলেঙ্কারির রিপোর্ট থেকে কিছু নাম বাদ দেওয়া ও কয়েক জনকে আড়াল করতে বলা হয় তাঁকে। এই চাপের মুখে বিনোদ কী করেছিলেন, তা অবশ্য বলেননি। তবে মনমোহনকে একহাত নিয়ে তিনি বলেছেন, শেষ সিদ্ধান্ত নিতে হয় প্রধানমন্ত্রীকে। কিছু সময় তিনি সেটি পালন করেছেন, কিছু সময় করেননি। জোট-রাজনীতির চাপে প্রশাসনিক কাজে এমন সমঝোতা করা যায় না।
সাম্প্রতিক অতীতে মনমোহনের প্রাক্তন মিডিয়া উপদেষ্টা সঞ্জয় ও প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী নটবর এ ভাবেই বই লিখে কংগ্রেস নেতৃত্বের বিড়ম্বনা বাড়িয়েছিলেন। সেই পথেই হাঁটলেন প্রাক্তন সিএজি-ও। অস্বস্তি কাটাতে এ বারও পাল্টা আক্রমণে নেমেছে কংগ্রেস। দলের নেতা মণীশ তিওয়ারি বলেন, “অবসর নেওয়ার পর প্রাক্তন আমলাদের বই লিখে হইচই ফেলা যেন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্মরত অবস্থাতেই যদি তাঁর উপর চাপ আসছিল, সেই সময় তিনি মুখ খোলেননি কেন?”
বিনোদ অবশ্য এর জবাব দেননি। তবে এটা ঘটনা যে, তিনি সিএজি থাকার সময়ই কমনওয়েলথ গেমসের দুর্নীতি থেকে টুজি কেলেঙ্কারিতে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা ও কয়লা খনির ব্লক বণ্টনে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির কথা লেখা হয়েছিল রিপোর্টে। তার ভিত্তিতেই বিরোধীরা, বিশেষ করে বিজেপি কংগ্রেস-বিরোধী অভিযানে নেমেছিল। সে দিক দিয়ে দেখলে, সিএজি-র রিপোর্টে ইউপিএ আমলের এই সব দুর্নীতির প্রসঙ্গ প্রকাশ্যে আসাটাও কিন্তু বিজেপি-র ক্ষমতায় আসার পিছনে একটা বড় কারণ।
যদিও বিজেপি নেতৃত্ব এখন মনমোহনকে খুব বেশি কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নেতিবাচক রাজনীতির পথে হাঁটতে চাইছে না। বরং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর নতুন সরকারের ইতিবাচক দিকগুলিই আরও বেশি করে তুলে ধরতে বেশি আগ্রহী। এই কারণেই নটবরের বই নিয়েও বিজেপি খুব বেশি হল্লা করেনি। প্রাক্তন সিএজি প্রধানের নয়া অভিযোগের পরেও তাই সে ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েনি বিজেপি। দলের মুখপাত্রদের দিয়ে কিছু প্রতিক্রিয়া দিয়েই ক্ষাম্ত হয়েছে তারা। দলের মুখপাত্র সম্বিত পাত্র এ দিন বলেছেন, “গোটা দেশ ইউপিএ সরকারের কাজকর্ম নিয়ে অবহিত। লোকসভা ভোটের আগেই বিজেপি এই নিয়ে প্রচার করেছিল। বিনোদ রাইয়ে মন্তব্যে আমাদের কথাই ঠিক প্রমাণ হল।”