ছাত্রীর মোবাইলে তোলা ভিডিওয় সেই হস্তমৈথুনকারী। ছবি- ফেসবুক পোস্ট থেকে।
পুলিশ কি সত্যি সত্যিই ‘নিধিরাম সর্দার’?
১০ দিন আগে বাসে ছাত্রীর পাশে বসে যিনি হস্তমৈথুন করেছিলেন বলে অভিযোগ, তাঁর হদিশ দেওয়ার জন্য শনিবার ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করল দিল্লি পুলিশ।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশ রাজি না হলেও, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীটি দিল্লির বসন্ত বিহার থানায় এফআইআর করেছিলেন গত সোমবার। কিন্তু তার পরেও হস্তমৈথুনকারীর হদিশ মেলেনি। ছাত্রীটি ওই ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করতেই আলোড়ন হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। তার পরেই এ দিন দিল্লি পুলিশের এই ঘোষণা।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে এই ঘটনা ঘটে। ছাত্রীটি তাঁর মোবাইলে তার ভিডিও তুলে রাখেন। ৮ তারিখ সেই ভিডিও ছাত্রীটি পোস্ট করেন ফেসবুকে। সেই ভিডিওয় তিনি ট্যাগ করেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল, দিল্লির পুলিশ কমিশনার এবং দিল্লি পুলিশকে।
ছাত্রীটি জানিয়েছেন, ওই দিন সকালে বাসে করে তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন। বসন্ত বিহারের বেশ কিছুটা আগে তিনি খেয়াল করেন, পাশে বসা এক মধ্যবয়স্ক পুরুষ সহযাত্রী কেমন একটা চাহনিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। এর পরেই তিনি বুঝতে পারেন, ওই ব্যক্তি হস্তমৈথুন করছেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে ছাত্রীটি চিৎকার করে তাঁকে বারণ করেন। কাজ না হওয়ায়, কন্ডাকটর-সহ অন্যদের নজরে আনেন বিষয়টি। কিন্তু, তাতে হস্তমৈথুন যেমন থামেনি, তেমনই কেউ এগিয়েও আসেননি প্রতিবাদ করতে। বরং সকলেই চুপ করেছিলেন বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন- ছাত্রীর পাশে বসে ভরা বাসে হস্তমৈথুন!
ভিডিওয় দেখা যায়, বাসে মোটামুটি ভিড়। কয়েক জন দাঁড়িয়ে। বাকিরা বসে। সেই বাসে বসেই হস্তমৈথুন করছেন মধ্যবয়স্ক ওই ব্যক্তি। কোলে রাখা ব্যাগ দিয়ে আড়াল করেই কাজ সারছেন তিনি। যাতে, পাশে বসা ওই ছাত্রী ছাড়া অন্য সহযাত্রীদের বিষয়টি নজরে না আসে। দেখা যায়, ভাবলেশহীন ছিলেন ওই ব্যক্তি। নির্বিকার ভাবেই তিনি হস্তমৈথুন করতে থাকেন।
কিছু ক্ষণ পরে বসন্ত বিহার এলে ছাত্রীটি এক প্রকার বাধ্য হয়েই বাস থেকে নেমে যান। প্রথমে তিনি বসন্ত বিহার থানায় অভিযোগ (ডায়েরি) দায়ের করেন। ভিডিওটি তিনি পুলিশ কর্মীদের দেখান। সেখানে হস্তমৈথুনকারীকে স্পষ্ট ভাবেই দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু, সেই ঘটনার পর ৬ দিন কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। সেই সময় ছাত্রীটির এফআইআরও নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র আলোড়নের জেরে শেষ পর্যন্ত গত সোমবার বসন্ত বিহার থানায় এফআইআর করেন ছাত্রীটি।
আরও পড়ুন- স্যুটকেসে শিশুর দেহ উদ্ধার দিল্লিতে
মনোবিদদের একটা অংশ জানাচ্ছেন, অনুমতি না নিয়ে কারও সামনে হস্তমৈথুন করাটাই অন্যায়। বিষয়টি কেমন? ধরা যাক, একাধিক বন্ধু বা স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকারা একসঙ্গে পর্নোগ্রাফি দেখছেন। সেই সময় যৌন উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে কেউ হস্তমৈথুনের ইচ্ছে প্রকাশ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে অন্যদের অনুমতি নেওয়াটা অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু, এটা একান্ত ব্যক্তিগত পরিসরেই সম্ভব। প্রকাশ্যে বা কোনও জনবহুল জায়গায় এমনটা করা অনুচিত। তাঁদের মতে, প্রকাশ্যে এ ভাবে হস্তমৈথুন করা কোনও ভাবেই যৌন হেনস্থা নয়, এ এক ধরনের হিংসা।
২০১৬-য় নির্ভয়া-কাণ্ডের আগে এবং পরে রাজধানী দিল্লি এমন বহু ঘটনার সাক্ষী থেকেছে। যৌন হেনস্থা থেকে শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ থেকে খুন— কিন্তু, কোনও কিছু থেকেই যে দিল্লি শিক্ষা নেয়নি, আবারও তা প্রমাণ হল। এবং এ ক্ষেত্রে সহনাগরিকদের ভূমিকাও কিন্তু প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়!