কলমের ধার ৩৬৯৫ কোটি

সোমবার ভোররাতেই কোঠারির বাড়ি হানা দিল সিবিআই। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে তা অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। শুধু ব্যাঙ্ক অব বরোদাকেই প্রায় ৬১৬ কোটি টাকার প্রতারণা করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:১০
Share:

রোটোম্যাক-কর্তা বিক্রম কোঠারি।

তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাঙ্ক থেকে ৩,৬৯৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে শোধ না করার অভিযোগ। রটে গিয়েছিল, তিনিও নীরব মোদীর মতো ব্যাঙ্কের টাকা হাতিয়ে দেশ ছেড়েছেন।

Advertisement

রবিবার রাতে সেই কলম প্রস্তুতকারক সংস্থা রোটোম্যাক-এর কর্ণধার বিক্রম কোঠারিকে দেখা গিয়েছিল, কানপুরের একটি বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে। দিব্যি নিমন্ত্রণ রক্ষা করছেন। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ‘‘কানপুরে আমার বাড়ি। কানপুরেই আছি। অন্য কোথাও কেন যাব? ভারতের মতো আর কোনও দেশ আছে নাকি?’’

এর পরে সোমবার ভোররাতেই কোঠারির বাড়ি হানা দিল সিবিআই। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে তা অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। শুধু ব্যাঙ্ক অব বরোদাকেই প্রায় ৬১৬ কোটি টাকার প্রতারণা করেছেন। ব্যাঙ্ক অব বরোদা, ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অব মহারাষ্ট্র, ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অব কমার্স মিলে কোঠারির রোটোম্যাক সংস্থার কাছে পাওনা প্রায় ৩,৬৯৫ কোটি টাকা।

Advertisement

নীরব-কেলেঙ্কারির সঙ্গে রোটোম্যাক কেলেঙ্কারির মিল রয়েছে। দুই ক্ষেত্রেই ব্যাঙ্ক-কর্তা ও কর্মীদের একাংশ জড়িত বলে অভিযোগ। প্রশ্ন উঠেছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নজরদারি নিয়েও। সিবিআই-এর অভিযোগ, ভুয়ো সংস্থাকে পণ্য রফতানি করার জন্য ঋণ নিয়েছিলেন কোঠারি। পণ্য আদৌ কোথাও পাঠানো হয়নি। স্রেফ সুদ আর হিসেবের মারপ্যাঁচে ব্যবসা চালিয়েছেন বহু ক্ষেত্রে। ঋণ নেওয়ার সময়ে প্রয়োজনীয় নথিও ব্যাঙ্কে জমা দেননি অনেক সময়। জাল বিলের ফোটোকপি জমা দিয়েছেন। কিন্তু যে পণ্য রফতানি হচ্ছে, তার বিমার প্রমাণপত্র দেননি। কোঠারি অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘ঋণ মেটাইনি, এ কথা ভুল। কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনালে মামলার ফয়সালা হবে।’’ অবশ্য গত বছর ফেব্রুয়ারিতেই তাঁকে ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’র তকমা দেয় ব্যাঙ্কগুলি।

আরও পড়ুন: টাকা শোধ আর হবে না! হুমকি নীরবের

আজ ভোর চারটে থেকে কানপুরে কোঠারির বাড়ি ও অফিসে তল্লাশি চালায় সিবিআই। অভিযুক্তের তালিকায় থাকা তাঁর স্ত্রী সাধনা, ছেলে রাহুলকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ঋণের টাকা কার সিন্দুকে গিয়েছে, তা বিদেশে পাচার হয়েছে কি না, তা নিয়ে ইডি-ও তদন্ত শুরু করেছে। বিক্রমের আইনজীবীর দাবি, ‘‘এটা নিছক ঋণ বকেয়া থাকার ঘটনা। আদৌ কেলেঙ্কারি নয়।’’

কে এই বিক্রম কোঠারি? রোটোম্যাক নাম দিয়ে ১৯৮০-তে স্টেশনারির ব্যবসা শুরু করেছিল তাঁর পরিবার। ৯০-এর দশকে পারিবারিক ব্যবসা ভাগ হলে তাঁর ভাই দীপক কোঠারি যান পান-মশলার ব্যবসায়। বিক্রম কলমের ব্যবসায়। শুধু কলম নয়, খাবার ও সুগন্ধি থেকে ইস্পাত, নির্মাণ, বিনোদন— বহু ব্যবসা আছে বিক্রমের। তাঁদের ওয়েবসাইট বলছে, বিক্রম সেরা রফতানিকারীর পুরস্কারও পেয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর কাছ থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন