‘ভোট আমরা সুপ্রিম কোর্টকে দিইনি’, অযোধ্যা নিয়ে হিন্দুত্ববাদীদের চাপে মোদী

বিজেপি নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, বল এখন মোদীর কোর্টেই গড়াচ্ছে। শুধু সাধু-সন্ত নয়, গোটা সঙ্ঘ পরিবার আজ চেপে ধরেছে মোদী সরকারকে— আইন কবে আসছে? 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:১৬
Share:

— ফাইল চিত্র।

রামলালা টাট পে/ মোদীজি ঠাঠ সে। অর্থাৎ, রামলালা খোলা আকাশের নীচে আর নরেন্দ্র মোদী বহাল তবিয়তে।

Advertisement

অযোধ্যায় রোষ হিন্দুদের: ‘‘ভোট আমরা সুপ্রিম কোর্টকে দিইনি, মোদীকে দিয়েছি। রামলালা খোলা জায়গায় পড়ে। আর মোদী দিব্যি দুনিয়া চষে বেড়াচ্ছেন। উনি ভাস্কো-দা-গামা না কলম্বাস?’’

সুপ্রিম কোর্ট জানুয়ারিতে জানাবে, কবে থেকে রাম মন্দিরের শুনানি হবে। মানে, ভোটের আগে আর আদালতের কাছ থেকে তেমন ভরসা পাওয়ার নেই। তা হলে সাড়ে চার বছর ধরে লোকসভায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কী করলেন মোদী? বিজেপি নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, বল এখন মোদীর কোর্টেই গড়াচ্ছে। শুধু সাধু-সন্ত নয়, গোটা সঙ্ঘ পরিবার আজ চেপে ধরেছে মোদী সরকারকে— আইন কবে আসছে?

Advertisement

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কার্যনির্বাহী সভাপতি অলোক কুমারের কথায়, ‘‘সরকারকে আজ বলেছি, সামনের শীতকালীন অধিবেশনেই আইন এনে রামমন্দির নির্মাণ করতে হবে। এমন আইন বানাতে হবে, যা সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ হলেও সরকার দক্ষতার সঙ্গে সওয়াল করতে পারে।’’ কাল থেকে মোহন ভাগবতেরা মুম্বইয়ে বৈঠকে বসছেন। তার আগে আরএসএসের মুখপাত্র অরুণ কুমারও বলেছেন, ‘‘অযোধ্যায় রামের জন্মস্থান, এটা আদালতে সিদ্ধ। শুধু জমি চাই। আইন করে সরকার সেটি রামজন্মভূমি ন্যাসের হাতে তুলে দিক। মন্দির হলেই দেশে সদ্ভাবনার পরিবেশ তৈরি হবে।’’ সপ্তাহান্তে সন্তরাও দিল্লিতে দু’দিনের বৈঠকে বসছে তালকাটোরা স্টেডিয়ামে। মোদী সরকারের মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহও ‘হিন্দুরা অশান্ত’ বলে হল্লা করছেন।

আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্ট চলবে নিজের গতিতে, অযোধ্যা শুনানির আঁচে জল

তা হলে সরকার কী করবে?

এক শীর্ষ মন্ত্রীর কথায়, ‘‘আইন না অধ্যাদেশ? ভেবে দেখতে হবে উপায়টা কী?’’ তবে তার আগে জল মাপতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব। রোষ আদপে কতটা? রামমন্দির নিয়ে আগের উন্মাদনা আছে কি নেই? ভোটের আগে হিন্দুত্বের হাওয়া তুলে লাভ কতটা? রাহুল গাঁধীও হিন্দুত্বের তাস খেলছেন, ভোটের আগে বিজেপিকেও কী তা হলে আইন আনার চেষ্টা করে হাওয়া তুলতে হবে? তা সে রাজ্যসভায় পাশ হোক, বা না হোক?

শুনানি পিছিয়ে যাওয়ায় মুচকি হাসছে কংগ্রেস। মোদীর উপর উল্টো চাপ বাড়ায় তারা খুশি। চিদম্বরম বলেছেন, ভোট এলে মেরুকরণ শুরু করে বিজেপি। কংগ্রেস আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষার পক্ষপাতী। কিন্তু রাহুল আজও মধ্যপ্রদেশে ভোট প্রচার শুরুর আগে উজ্জয়নে মহাকালেশ্বর মন্দিরে পুজো দিয়েছেন। আর সে ছবি দিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘মহাকালেশ্বরে জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শনে সন্তুষ্টি হল। ভগবান শিব দেশবাসীকে আশীর্বাদ করুন। ওঁ নমঃ শিবায়!’’ কংগ্রেস সভাপতির মন্দির দর্শন দেখে অস্বস্তিতে পড়া বিজেপি প্রশ্ন তুলেছে, ‘‘রাহুলের গোত্র কী?’’
জবাব দিতে রাহুল তাঁর সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারের ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন। যেখানে তিনি বলেছেন, ‘‘হিন্দুত্ব আর হিন্দুবাদ আলাদা। প্রথমটি রাজনৈতিক আদর্শ, পরেরটি দর্শন। আমি বুঝি না, ১৬ বছর ধরে আমি মন্দির, গুরদ্বার, মসজিদে যাচ্ছি। কিন্তু মন্দিরে গেলে বিজেপি রেগে যায়, অস্বস্তিতে পড়ে। মন্দির তাদের একচেটিয়া মনে করে। ভারতের বহুবিধ ভাবনাকে দমন করে বিজেপি নিজেদের ভাবনা চাপিয়ে দিতে চায়।’’
গেরুয়া শিবির বলছে, এক বার সংসদে আইন আনলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে রামমন্দিরের পক্ষে না বিপক্ষে রাহুল। দুর্গাপুজোয় অর্থ সাহায্য দেওয়া মমতার অবস্থানই বা কী!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন