রাহুলকে বিঁধে বিজেপিতে ‘অমেঠীর রাজা’

কিন্তু বিজেপিতে সঞ্জয় সিংহ নামে কোনও সাংসদ নেই! এক জন আছেন আম আদমি পার্টির, অন্য জন কংগ্রেসের। যিনি ‘অমেঠীর রাজা’ বলে পরিচিত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৯ ০২:৩৫
Share:

রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিলেন সঞ্জয় সিংহ। —ফাইল চিত্র

দুপুর বেলায় সংসদের করিডরে দৌড়চ্ছেন বিজেপির এক রাজ্যসভার সাংসদ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এই সাংসদটি সাংবাদিকদের দেখলেই বলছেন, রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিংহের বাড়িতে যান। জরুরি সাংবাদিক বৈঠক হবে।

Advertisement

কিন্তু বিজেপিতে সঞ্জয় সিংহ নামে কোনও সাংসদ নেই! এক জন আছেন আম আদমি পার্টির, অন্য জন কংগ্রেসের। যিনি ‘অমেঠীর রাজা’ বলে পরিচিত। কানে কানে বিজেপির সাংসদটি বললেন, ‘‘ইনি অমেঠীরই রাজা। রাহুল গাঁধী আগে অমেঠী হেরেছেন, এ বারে ‘অমেঠীর রাজা’কেও হারাতে চলেছেন। অমিত শাহের সঙ্গে সঞ্জয় সিংহের বৈঠক হয়ে গিয়েছে।’’

সঞ্জয় সিংহের বাংলো দিল্লির মোদী এস্টেটে। প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার বাংলো থেকে মাত্র কয়েকশো মিটার দূরে। সেই বাংলোয় স্ত্রী অমিতা সিংহকে পাশে বসিয়ে সঞ্জয় ঘোষণা করলেন, কংগ্রেস থেকে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন, রাজ্যসভা থেকেও। তাঁর স্ত্রীও কংগ্রেস ছাড়লেন। উভয়েই আগামিকাল যোগ দেবেন বিজেপিতে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডুর ঘোষণা, সঞ্জয়ের ইস্তফা কবুল হয়েছে।

Advertisement

বরাবরই গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সঞ্জয়। এক সময় সঞ্জয় গাঁধীর বন্ধু ছিলেন। তাঁর প্রথম স্ত্রী গরিমা সিংহ অমেঠী থেকে বিজেপিরই বিধায়ক। দ্বিতীয় স্ত্রী অমিতাও প্রথম বার বিধায়ক হয়েছিলেন বিজেপি থেকে। সঞ্জয় নিজেও আশির দশকে কংগ্রেস ছেড়ে জনতা দলে যান। রাজীব গাঁধীর বিরুদ্ধে লড়ে হেরে যান। পরে বিজেপির টিকিটে জেতেন। এর পর সনিয়া গাঁধীর কাছে হেরে কংগ্রেসে যোগ দেন। সদ্য হওয়া লোকসভা ভোটেও সুলতানপুরে বিজেপি প্রার্থী মানেকা গাঁধীর কাছে হেরেছেন।

কংগ্রেস বলছে, ‘‘সঞ্জয় সিংহ সুবিধাবাদী। ২০১৪ সালেই বিজেপিতে যেতে চেয়েছিলেন। অসম থেকে রাজ্যসভায় আনা হয়। আগামী বছর মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এ বারে বিজেপির কোটায় ফের রাজ্যসভায় যাওয়ার জন্যই দলবদল করলেন। লোকসভায় অমেঠীতে রাহুলকে সাহায্যও করেননি।’’ কিন্তু মাত্র কয়েক দিন আগেই প্রিয়ঙ্কার সোনভদ্র-অভিযানের সময় সঞ্জয় বিজেপিকে তোপ দেগেছিলেন। আজ বললেন, ‘‘লোকসভা ভোটে স্পষ্ট, মানুষ নরেন্দ্র মোদীকে গ্রহণ করেছে, রাহুল
গাঁধীকে প্রত্যাখ্যান।’’

কিন্তু এর সঙ্গেই সঞ্জয় যা বললেন, তা এখন কংগ্রেসের অনেকেই বলছেন। সঞ্জয়ের বক্তব্য, ‘‘কোনও রাগের বশে কংগ্রেস ছাড়লাম না। গত কয়েক বছর ধরে কংগ্রেসে চলছে ‘সংবাদহীনতা’।’’ অর্থাৎ, দলের নেতৃত্বের সঙ্গে অন্য নেতাদের কোনও যোগাযোগ নেই। এটি কি রাহুলের উদ্দেশে? সঞ্জয় বলেন, ‘‘রাহুল গাঁধী কি কংগ্রেস থেকে আলাদা? দলের সভাপতি মানেই তো কংগ্রেস। কংগ্রেসের এই দশা কেন, রাহুল-প্রিয়ঙ্কা খুঁজে দেখুন। কংগ্রেস আটকে অতীতে, বিজেপিই ভবিষ্যৎ।’’

দু’মাস আগে রাহুল ইস্তফা ঘোষণা করেছেন। দল এখনও তাঁর উত্তরসূরি বেছে উঠতে পারেনি। তাই বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্তও নিতে পারছে না। অমরেন্দ্র সিংহ থেকে শশী তারুর— প্রিয়ঙ্কাকে সভাপতি করার দাবি তুলছেন। যদিও প্রিয়ঙ্কা উৎসাহী নন, রাহুলও মানা করে দিয়েছেন আগেই। এই অবস্থায় আগামিকাল দলের সাধারণ সম্পাদকদের বৈঠক।
কংগ্রেস সাংসদ পান্না লাল পুনিয়ার দাবি, এ সপ্তাহের শেষে বা আগামী সপ্তাহেই ওয়ার্কিং কমিটি রাহুলের উত্তরসূরি স্থির করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন