সর্বার নির্দেশে মদ কেলেঙ্কারির তদন্তে কমিটি

মদ বিক্রিতে রাজস্ব ফাঁকির তদন্তে বিশেষ তদন্ত কমিটি গড়ে দিলেন আবগারিমন্ত্রী পরিমল শুক্ল বৈদ্য। রাজ্যের এক সুরা ব্যবসায়ী দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে, ভুয়ো চালানপত্র দেখিয়ে রাজ্য সরকারের কোটি-কোটি টাকা রাজস্ব আত্মসাৎ করেছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন জোট সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধায়ক ফণীভূষণ চৌধুরি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৬ ০৯:০১
Share:

মদ বিক্রিতে রাজস্ব ফাঁকির তদন্তে বিশেষ তদন্ত কমিটি গড়ে দিলেন আবগারিমন্ত্রী পরিমল শুক্ল বৈদ্য। রাজ্যের এক সুরা ব্যবসায়ী দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে, ভুয়ো চালানপত্র দেখিয়ে রাজ্য সরকারের কোটি-কোটি টাকা রাজস্ব আত্মসাৎ করেছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন জোট সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধায়ক ফণীভূষণ চৌধুরি। অভিযোগ পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী আবগারিমন্ত্রীকে ডেকে পাঠিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিতে বলেন। প্রাথমিক ভাবে রাজস্ব ফাঁকির আঁচ পেয়ে পরিমলবাবু কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জানান, ‘‘আবগারি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জীবকুমার মেধির নেতৃত্বে চার সদস্যের কমিটি গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে। গত এক দশকে ‘বন্ডেড ওয়্যারহাউস’ গুলির দায়িত্বে কোন কোন অফিসার কতদিন কাজ করেছেন তার তালিকাও তৈরি করতে বলা হয়েছে কমিটিকে।

Advertisement

ফণীভূষণবাবুর অভিযোগ ছিল, বিভিন্ন গুদামে থাকা মদ অন্য গুদামে স্থানান্তরিত করার ভুয়ো চালানপত্র তৈরি করে সরকারকে জমা দেওয়া হয়েছে। আদতে তা স্থানান্তরিত না করে বিক্রি করে দেওয়া হয়। একই ভাবে প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে মদ না পাঠিয়েই ভুয়ো প্রমাণপত্র তৈরি করে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটে চলেছে। ফণীবাবুর আশঙ্কা, এ ভাবে ফাঁকি দেওয়া রাজস্বের পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা হতে পারে। এ নিয়ে কংগ্রেস আমলে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিনি। বিধানসভাতেও বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন। কিন্তু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কোনও ব্যবস্থা নেননি বলে তাঁর অভিযোগ।

পরিমলবাবু জানান, মুখ্যমন্ত্রী আবগারি বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন, সব দুর্নীতি বন্ধ করে গত বছরের তুলনায়, এই আর্থিক বর্ষে হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব সংগ্রহ করতে হবে। গত বছর সংগৃহীত রাজস্বের পরিমাণ ছিল ৭৯৯ কোটি টাকা। পরিমলবাবু বলেন, ‘‘আমরা রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য সব ধরণের কর ফাঁকি রুখব। সরকারি আমলাদের সঙ্গে মদ ব্যবসায়ীদের অশুভ আঁতাতও ভেঙে দেওয়া হবে। রাজস্ব আদায়ের জন্য মানুষকে বেশি করে মদ খেতে বলা যায় না। তবে পড়শি মেঘালয় ও অরুণাচলে মদের দাম কম হওয়ায় রাজ্যের অনেকে সেখান থেকে মদ কিনে আনেন। তাতে ক্ষতি বাড়ে।’’ তিনি আরও জানান, অসমের মদের বেআইনি ব্যবসা রুখতে আবগারি দফতরের এতদিনের হাতে হাতে কর সংগ্রহের পদ্ধতি বাতিল করে হলমার্ক প্রথা ও অনলাইন কর নেওয়া শুরু করবে। তাঁর আশা, আগামী ১০০ দিনের মধ্যে নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হবে।

Advertisement

অন্য দিকে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের নিজের কেন্দ্র তিতাবরে রাস্তা নির্মাণ কেলেঙ্কারি নিয়েও তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অভিযোগ, তিতাবর ও নাগাল্যান্ডের সীমায় ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণের জন্য প্রভু অগ্রবাল নামে এক ঠিকাদারকে ২০ কোটি ২৮ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অত্যন্ত নিম্নমানের মাল দিয়ে তৈরি সড়কটি একবার বৃষ্টির পরেই খারাপ হতে থাকে। এখন রাস্তাটি অগম্য। তার প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছে এজেওয়াইসিপি ও স্থানীয় মানুষ।

পাশাপাশি তথ্য-অধিকার নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অসম পাবলিক ওয়ার্কস’ আজ তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে পাওয়া নথিপত্র দেখিয়ে দাবি করেছে, ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থ বর্ষে আনন্দরাম বরুয়া পুরস্কার দেওয়া নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। তাদের দাবি, ২০১৪-১৫ সালে আনন্দরাম পুরস্কার পাওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৪০,৯৮৩ জন। তাঁদের ল্যাপটপ বিতরণ ও প্রশিক্ষণের জন্য খরচ করা হয় মাথাপিছু ১০৩৮ টাকা, অর্থাৎ মোট ৪ কোটি ২৫ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে মোট ৫৩,১৪৮ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য মাথাপিছু ১১৪০ টাকা হিসেবে খরচ হয় ৬ কোটি ৫ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা। কিন্তু ওই সংগঠনের দাবি, টাকা খরচ হলেও ছাত্রছাত্রীদের কোনও প্রশিক্ষণই দেওয়া হয়নি। তাঁদের চ্যালেঞ্জ, প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকলে ৯৪ হাজার ছাত্রছাত্রীর মধ্যে অন্তত এক হাজার ছাত্রছাত্রীর নাম-ঠিকানা প্রকাশ করা হোক। দু’বছরে খরচ হওয়া ১০ কোটি ৩১ লক্ষ ২৯ হাজার ৭৪ টাকার হিসেব চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ও শিক্ষামন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার কাছেও আবেদন জানিয়েছে সংগঠনটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন