ব্রিকস যুব সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের সঙ্গে বিদেশি অতিথি। শুক্রবার গুয়াহাটিতে। ছবি: পিটিআই।
জল ঢালতে চেয়েও জল্পনা জিইয়ে রাখলেন প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায়।
‘‘বিজেপি-তে যাচ্ছি না’’ বলেও পরক্ষণে জানিয়ে দেন— ‘‘গেরুয়া বাহিনীর প্রতি আমার বিদ্বেষ নেই। সর্বানন্দ সরকার ভালই কাজ করবে বলে আশা করি।’’ এমনকী, মন্ত্রিসভায় বরাকের একমাত্র প্রতিনিধি পরিমল শুক্লবৈদ্যর প্রতিও আস্থাশীল তিনি। গৌতমবাবু বললেন, ‘‘পরিমলের বয়স কম, চুটিয়ে কাজ করবেন।’’
কংগ্রেস অফিসে বসেই ‘বিজেপি মন্ত্রিসভার নাম্বার টু’ হিমন্ত বিশ্বশর্মার প্রশংসা করেন তিনি। অন্য দিকে পুরনো কংগ্রেস মন্ত্রিসভার উদ্দেশে একের পর এক তির ছোঁড়েন। বাদ যাননি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও। আকারে-ইঙ্গিতে তাঁকে বরাকবিদ্বেষী বলেও মন্তব্য করেন। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘বাদ দিয়া হে (আরে, বাদ দাও) তাঁর মুখে লেগেই ছিল। কোনও বিষয়ে কথা বলতে গেলেই সে কথা শুনিয়ে দিতেন। হাজার কোটি টাকার বরাক প্যাকেজ নিয়ে দু’বছরে ন্যূনতম কাজও করেননি গগৈ।’’ তাঁর দাবি, ‘‘কংগ্রেস আমলে দুই মন্ত্রীই কাজ করেছেন। আমি গৌতম রায় আর হিমন্ত বিশ্বশর্মা। কিন্তু বাহবা কুড়িয়েছেন তরুণ গগৈ।’’
তবে কি হিমন্ত বিশ্বশর্মার হাত ধরে এ বার বিজেপিতে? অন্য সময় এমন প্রশ্নে প্রচণ্ড চটে যাওয়ারই কথা ছিল গৌতমবাবুর। কিন্তু আজ মুখে গাম্ভীর্য এনে শুধু বললেন, ‘‘দল বদলের কথা ভাবছি না। যত দিন রাজনীতিতে রয়েছি, কংগ্রেসের সঙ্গেই থাকব। আরও দুর্দিন এলেও ভিন্ন কথা ভাবব না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বাবা কংগ্রেস করতেন। আমি ৩০ বছর ধরে কংগ্রেসে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছি। ফলে কোনও দলের কাছেই আমার কোনও প্রত্যাশা নেই। শুধু মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।’’
কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর এক ছবি ঘিরে কয়েক দিন ধরে চর্চা চলছে। গৌতমবাবুর স্পষ্টীকরণ, সেই ছবি যখন তোলা হয়েছিল, মোদী তখন প্রধানমন্ত্রী হননি। ছিলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। ফলে এর সঙ্গে দল ছাড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। অশুভ উদ্দেশে তাঁরই ঘনিষ্ঠ এক জন সময় বুঝে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবিটি পোস্ট করেছেন বলে সন্দেহ তাঁর।
এত সব শুনিয়েও গৌতমবাবু গগৈ সরকারের মন্ত্রীদের ‘অকর্মণ্যতাকে’ কংগ্রেস সরকারের পতনের প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘‘যেমন দায়ী মন্ত্রীদের চামচারা, তেমনি একাংশ আমলাকুল।’’ এ বারের নির্বাচনে দুই কংগ্রেস-কাণ্ডারীর সমালোচনাতেও মুখর ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী। ফলপ্রকাশের আগেই অসুস্থ হয়ে মারা যান অঞ্জন দত্ত। গৌতমবাবু ছাড়েননি তাঁকেও। জেলা কংগ্রেস সভাপতি কর্ণেন্দু ভট্টাচার্য এবং পার্থরঞ্জন চক্রবর্তী ও সুজন দত্তকে পাশে বসিয়ে শুনিয়ে দেন, ‘‘রকিবুল হোসেন এবং অঞ্জন দত্তও হারের জন্য কম দায়ী নন। অধিকাংশ মন্ত্রী ছিলেন বুরবক (বোকা)। অজন্তা নেওগ পূর্তমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু বরাকে আসতে চাননি। তাঁর জন্য সবাইকে ভুগতে হয়েছে।’’
এর পরও তো এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মলয় দেব বললেন, বরাকের ৮৬ শতাংশ রাস্তা ভাল। এ কথা শুনে এককালে দাপুটে মন্ত্রীর বিশেষণে ভূষিত গৌতমবাবু মৃদু আপত্তি জানিয়ে বলেন, ‘‘৮৬ শতাংশ নয়, ৬০ শতাংশ বলতে পারতেন। কারণ মলয়বাবুর হিসেবে পোয়ামারা থেকে চুরাইবাড়ি পর্যন্ত সামান্য একটি অংশ খুব খারাপ। আসলে পুরো রাস্তাটিই অত্যন্ত বাজে। চলাচলের কোনও উপায় নেই।’’
কিন্তু কাটলিছড়ায় কেন হারলেন গৌতম রায়? এই প্রশ্নের পর আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারেননি। চোখেমুখে তীব্র আপত্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘‘কে হেরেছে, গৌতম রায়? একটা কথা শুনে রাখুন, আমি হারিনি। হেরেছেন কাটলিছড়ার মানুষ। কয়েকটা দিন অপেক্ষা করুন, সবাই বুঝতে পারবেন।’’