Project Cheetah

আফ্রিকা থেকে কেন চিতা আনা হল ভারতে? কেন্দ্রকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে নারাজ সুপ্রিম কোর্ট

মধ্যপ্রদেশের কুনো পালপুর জাতীয় উদ্যানে একের পর এক চিতার মৃত্যুর ঘটনা প্রসঙ্গে এখনই কেন্দ্রের যুক্তি নিয়ে সন্দেহ করার কোনও কারণ নেই বলেও জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৩ ১৬:২৬
Share:

কুনোয় আনা আফ্রিকার চিতা। — ফাইল চিত্র।

কেন আফ্রিকার চিতাদের ভারতের অরণ্যে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে, তা নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে প্রশ্ন করার কোনও প্রয়োজন নেই। মধ্যপ্রদেশের কুনো পালপুর জাতীয় উদ্যানে একের পর এক চিতার মৃত্যুর প্রেক্ষিতে একটি আবেদনের শুনানিতে সোমবার এ কথা জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বলেছে, চিতা-মৃত্যু প্রসঙ্গে এখনই কেন্দ্রের যুক্তি নিয়ে সন্দেহ করার কোনও কারণ নেই। চিতা আমদানি নিয়ে শীর্ষ আদালতের এই মন্তব্য কেন্দ্রকে কিছুটা স্বস্তি দিল বলেই মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

গত সাড়ে চার মাসে কুনোর অরণ্যে মারা গিয়েছে ন’টি চিতা। তাদের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নামিবিয়া থেকে আনা পূর্ণবয়স্কদের পাশাপাশি রয়েছে ভারতে জন্মানো তিন সদ্যোজাত শাবকও। এই পরিস্থিতিতে গত মাসে বিচারপতি বিআর গাভাইয়ের নেতৃত্বাধীন শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ পর পর চিতা-মৃত্যু নিয়ে দায়ের করা মামলার শুনানিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। বিষয়টিকে আত্ম অহঙ্কারের জায়গা থেকে না দেখে, চিতাদের মৃত্যুর কারণ খুঁজতেও বলেছ সুপ্রিম কোর্ট। এ বিষয়ে কেন্দ্র জানিয়েছে, প্রাথমিক ধাক্কা সামলে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।

এই আবহে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুচিকিৎসা ও বন্যপ্রাণী বিভাগের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান টর্ডিফ এবং নামিবিয়ার চিতা সংরক্ষণ তহবিলের কার্যনির্বাহী প্রধান ল্যারি মার্ক জানিয়েছেন, নরেন্দ্র মোদী সরকারের চিতা সংরক্ষণ পদ্ধতিতে ত্রুটি রয়েছে। আরও কয়েক জন বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞের সই করা ওই রিপোর্ট দু’টিতে বলা হয়েছে নিছক রেডিয়ো কলার থেকে সংক্রমণ কিংবা আবহাওয়ার পরিবর্তন মতো বিচ্ছিন্ন কারণ নয়, কুনো জাতীয় উদ্যানে আফ্রিকা থেকে আনা চিতারা মারা পড়ছে মূলত পশু চিকিৎসকদের অনভিজ্ঞতা এবং সংরক্ষণ পদ্ধতির ত্রুটির কারণে।

Advertisement

প্রসঙ্গত, আবেদনকারী পক্ষের অভিযোগ, রাজনৈতিক কারণেই বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ থেকে কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানে চিতা পাঠাতে চাইছে না মোদী সরকার। এ প্রসঙ্গে, বন্যপ্রাণ বিজ্ঞানী তথা মোদী সরকারের ‘ন্যাশনাল চিতা অ্যাকশন প্ল্যান’ (জাতীয় চিতা পুনঃস্থাপন কর্মসূচি)-এর সদ্য অপসারিত প্রধান যাদবেন্দ্রনাথ ঝালার সাম্প্রতিক মন্তব্যের কথাও শীর্ষ আদালতের সামনে তুলে ধরা হয়। বিজ্ঞানী ঝালা সম্প্রতি বলেছিলেন, ‘‘কুনো জাতীয় উদ্যানের যা পরিসর, সেখানে ৫০টি দূরের কথা, ২০টি চিতার স্বচ্ছন্দে বসবাসেরও সুযোগ নেই। তা ছাড়া ওখানে চিতাদের শিকার করে খাওয়ার মতো হরিণ বা বনশুয়োরের অভাব রয়েছে।’’ সেই সঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘‘কুনো জাতীয় উদ্যানের লাগোয়া রাজস্থানের মুকুন্দারা অভয়ারণ্যের কিছুটা অংশও চিতা পুনঃস্থাপন কেন্দ্রের অন্তর্গত করা প্রয়োজন।’’ কিন্তু মোদী সরকারের কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানে চিতা পাঠানোর ইচ্ছা নেই বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

পাশাপাশি, আফ্রিকান উপপ্রজাতির চিতা ভারতে আনায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নীতির মৌলিক বিধি ভঙ্গ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছিল আবেদনকারী পক্ষ। বস্তুত, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ চলতি বছরের জানুয়ারিতে আফ্রিকা থেকে চিতা এনে ভারতের অরণ্যে ছাড়ার কথা ঘোষণা করার পরে একই প্রশ্ন তুলেছিলেন বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য ছিল, প্রাচীন যুগ থেকেই পঞ্জাব, রাজপুতানা, উত্তর ভারত, মধ্যভারত, দাক্ষিণাত্য এমনকি, ওড়িশায় ছিল চিতার বসতি। এদের পোষ মানিয়ে ‘কোর্সিং’ (লেলিয়ে দিয়ে শিকার করানোর খেলা)-এর রেওয়াজও প্রায় হাজার বছরের পুরনো। জিনগত বিবর্তন বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, প্রায় ৫০০০ বছর আগে আফ্রিকার চিতার (বিজ্ঞানসম্মত নাম ‘অ্যাসিনোনিক্স জুবেটাস জুবেটাস’) থেকে জন্ম হয়েছিল তার জাতভাই এশীয় চিতার (বিজ্ঞানসম্মত নাম ‘অ্যাসিনোনিক্স জুবেটাস ভ্যানাটিকাস’)। সেই থেকে তারা ভিন্ন উপপ্রজাতি। অর্থাৎ ভারতের মাটি কখনওই মোদী সরকারের আনা চিতাদের বাসভূমি ছিল না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন