আমদাবাদে মোদীর জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠানে ভাঙচুর জনতার। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।
গত বার মায়ের আশীর্বাদ নিতে গিয়েছিলেন আমদাবাদে। এ বার জন্মদিনে সেখানে পা রাখেননি নরেন্দ্র মোদী। উল্টে সেই শহরে তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠানে গোলমালের জেরে উৎসবের সুর কেটে গেল অনেকটাই।
গত বারের মতোই এ বারও মোদীর জন্মদিন পালনে উৎসাহে ঘাটতি ছিল না বিজেপির নেতা-সমর্থকদের। আমদাবাদের বাপুনগরে কন্যাসন্তান রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর চালু করা ‘সেলফি উইথ ডটার’ অভিযানের প্রচারে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ওই সংস্থাটির প্রধান গুজরাত বিজেপির যুব মোর্চার নেতা প্রকাশ গুর্জর।
গুর্জর জানিয়েছেন, এক মাস ধরে অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা করছিলেন তিনি। মায়ের সঙ্গে মেয়ের নিজস্বী তোলার গিনেস রেকর্ড তৈরি করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। অনুষ্ঠানের জন্য বাপুনগরে একটি হলও ভাড়া করা হয়। কিন্তু প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি মহিলা এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় বিভ্রাট দেখা দেয় বলে মেনে নিয়েছেন প্রকাশ। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক বেশি অংশগ্রহণকারী আসায় অনুষ্ঠান বাতিল করে দিই।’’
পুলিশ জানিয়েছে, অনুষ্ঠান বাতিলের পরেই মঞ্চে উঠে গিয়ে আয়োজকদের কৈফিয়ৎ চান কয়েক জন ক্রুদ্ধ মহিলা। আয়োজকরা বেগতিক দেখে সরে পড়েন। এর মধ্যেই বেশি লোকের ওজন বইতে না পেরে হঠাৎ ভেঙে পড়ে মঞ্চ। আহত হন মহিলাদের বেশ কয়েক জন। এর পরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন উপস্থিত মহিলা ও তাঁদের আত্মীয়েরা। শুরু হয় চেয়ার টেবিল ভাঙা। বিজেপি তাঁদের ঠকিয়েছে বলে স্লোগানও দিতে শুরু করেন মহিলারা। তাঁদের দাবি, অনুষ্ঠানে মেয়েদের নিয়ে এলে উপহার দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আয়োজকেরা। জনধন যোজনার মতো কিছু কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ফর্ম দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল।
শেষ পর্যন্ত লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয় বাপুনগর পুলিশকে। পুলিশের মতে, মা-মেয়ে মিলিয়ে প্রায় ১৫-২০ হাজার অংশগ্রহণকারী এসেছিলেন ওই অনুষ্ঠানে। এত মানুষের জন্য আয়োজকেরা আদৌ তৈরি ছিলেন না। গোলমালে কয়েকটি বাচ্চা মেয়ে হারিয়েও গিয়েছিল। তবে তাদের খুঁজে পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
পুরো বিষয়টি নিয়ে ঘোর অস্বস্তিতে পড়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রে খবর, প্রকাশ গুর্জর সত্যিই উপহারের লোভ দেখিয়ে মহিলাদের ওই অনুষ্ঠানে ডেকেছিলেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আপাতত বাপুনগরের ঘটনাকে ব্যতিক্রম হিসেবে দেখাতে মরিয়া বিজেপি নেতারা। তাঁদের মতে, সারা দিন ধরে মোদীর জন্য শুভেচ্ছা আর উপহারের যে স্রোত দেখা গিয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী এখনও কতটা জনপ্রিয়। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সমীক্ষার সদ্য প্রকাশিত ফলও উৎসাহ জোগাচ্ছে তাঁদের। ওই সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশবাসীর মধ্যে মোদীর গ্রহণযোগ্যতার হার এখন প্রায় ৮৭ শতাংশ। প্রত্যাশিত ভাবেই আজ সারা দিন ধরে শুভেচ্ছা-উপহার পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ৬৫তম জন্মদিন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী মহেশ শর্মা তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ৩৬৫ কেজি ওজনের লাড্ডুর মাধ্যমে। উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সমর্থকেরা মোদীর জন্য ৬৫ মিটার লম্বা কাপড় পাঠিয়েছেন। বেছে বেছে আজকের দিনেই ‘ইন্ডিয়া ইকনমিক কনক্লেভ’-এর আয়োজন করেছিল ‘ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন’। যার অন্যতম প্রধান হলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের ছেলে সূর্য্য। সেই অনুষ্ঠানে বর্তমান সরকার কী ভাবে নীতিপঙ্গুত্ব কাটিয়ে দেশকে অর্থনৈতিক উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছে, তা তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।
বিদেশ থেকে বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়ক অভিনন্দন জানিয়েছেন মোদীকে। এর আগে রাহুল গাঁধীর জন্মদিনে টুইট করে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আজ পাল্টা টুইট করে শুভেচ্ছা জানান রাহুলও। টুইটারে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গত এক বছরে আপনি ও আমাদের দেশ একাধিক উল্লেখজনক সাফল্য অর্জন করেছে। আপনার পরিশ্রম, প্রগতিশীল চিন্তাভাবনা শুধু গোটা দেশের নয়, বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে।’’ রাষ্ট্রপতি-বিদেশি রাষ্ট্রনায়কদের শুভেচ্ছার জবাব দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমদাবাদে কী করে হল এই বিভ্রাট?
তা নিয়ে এখনও মুখ খোলেননি নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী।
মোদীকে লাল গোলাপ মমতার
লাল গোলাপ আর বাংলার সন্দেশ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জন্মদিনে বৃহস্পতিবার এই উপহার পাঠালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তা দিল্লিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অফিসারদের হাত দিয়ে পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর রেসকোর্স রোডের বাসভবনে। এই মুহূর্তে মমতার কাছাকাছি থাকা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালও টুইটারে প্রধানমন্ত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘজীবন কামনা করেছেন তিনি। মমতা যদিও টুইটারে মোদী প্রসঙ্গ তোলেননি।