প্রশংসায় প্রধানমন্ত্রী, ফের শশীকে নিয়ে শুরু জল্পনা

গত কাল প্রচণ্ড বকুনি খেয়েছিলেন সনিয়া গাঁধীর কাছে। আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সকলের সামনে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন তাঁকে। সংসদের বাদল অধিবেশনে পরপর দু’দিন শাসক ও বিরোধী পক্ষের দুই শীর্ষ পদাধিকারীর কাছে এমনই চরম বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া পেলেন শশী তারুর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৫ ০৩:৫১
Share:

সাংসদদের কর্মশালায় নরেন্দ্র মোদী। প্রথম সারিতে শ্রোতা শশী তারুর। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।

গত কাল প্রচণ্ড বকুনি খেয়েছিলেন সনিয়া গাঁধীর কাছে। আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সকলের সামনে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন তাঁকে। সংসদের বাদল অধিবেশনে পরপর দু’দিন শাসক ও বিরোধী পক্ষের দুই শীর্ষ পদাধিকারীর কাছে এমনই চরম বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া পেলেন শশী তারুর।

Advertisement

এর আগে মোদীর ‘স্বচ্ছ ভারত’ অভিযানে যোগ দিয়ে দলকে যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন। চলতি অধিবেশন শুরু হতে না হতেই ফের অস্বস্তি। কংগ্রেসের সংসদীয় দলের বৈঠকে শশী বলেছিলেন, তিনি অধিবেশন চলতে দেওয়ার পক্ষে। যদিও সুষমা স্বরাজ, বসুন্ধরা রাজে ও শিবরাজ শিংহ চৌহানের ইস্তফা আদায় না করা পর্যন্ত সংসদ অচল করে রাখার কৌশল নিয়েছে কংগ্রেস। সমস্যা হল, শশী যে বৈঠকে দলের অবস্থানের সঙ্গে সহমত পোষণ করেননি, সে খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে যায়। এর পরেই গত কাল শশীকে দেখে সনিয়া ক্ষোভে ফেটে পড়েন বলে সূত্রের দাবি। এমনকী কংগ্রেস সভানেত্রী নাকি বলেন, ‘‘আপনি সব সময়ে এমন করেন!’’

ঘটনাচক্রে, আজ সকালে সাংসদদের এক কর্মশালায় ‘সঠিক সময়ে সঠিক প্রসঙ্গ’ উপস্থাপনের জন্য শশীর ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে উপলক্ষ অবশ্য অক্সফোর্ডে শশীর একটি সাম্প্রতিক বক্তৃতা। শশী সেখানে বলেছিলেন, ব্রিটেন যে ভাবে এক সময়ে ভারতকে শোষণ করেছে, তাতে আজ তাদের ভারতের কাছে ঋণী থাকা উচিত। সেই বক্তৃতার প্রসঙ্গ টেনে মোদী বলেন, ‘‘অক্সফোর্ডে শশীজি যা বলেছেন, তা ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ভাইরাল’ হয়েছে। এটাই প্রমাণ করে, সঠিক জায়গায় সঠিক বিষয় উপস্থাপন করেছেন তিনি।’’ মোদী যখন এই কথা বলছেন, শশী তখন বসে সামনের সারিতেই। ঠোঁটে মৃদু হাসি।

Advertisement

মোদীর প্রধান সেনাপতি অরুণ জেটলিও আজ শশীকে ডেকে অভিনন্দন জানান। কিন্তু কপাল এমনই, সংসদের করিডরে জেটলি যখন শশীর পিঠ চাপড়ে দিচ্ছিলেন, ঠিক সেই সময় পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন সনিয়া। একটু থমকে কটমট করে তাকান শশীর দিকে। তার পর কিছু না বলেই চলে যান। ঘনিষ্ঠ মহলে জেটলি রসিকতা করে বলেছেন, ‘‘বোধ হয় আরও এক দফা বকুনি জুটবে এ বার।’’

মোদী কিন্তু শুধু সংসদেই শশীর প্রশংসা করে ক্ষান্ত হননি। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের বিবৃতিতেও তাঁর প্রসঙ্গ রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই সংসদের অলিন্দে গুঞ্জন— তা হলে কি বিজেপির পথে পাড়ি দিচ্ছেন শশী? বস্তুত, বিজেপি নেতাদেরও অনেকে পরামর্শ দিচ্ছেন, ‘‘এ বার হৃদয় আরও প্রসারিত করে শশী তারুরকে দলে আলিঙ্গন করে নিন।’’ তবে শশীর বিজেপিতে যাওয়ার জল্পনা আগেও শোনা গিয়েছিল। যখন তিনি মোদীর প্রশংসা করেছিলেন। শশী নিজেই তা খণ্ডন করেন সেই সময়। তবে এখনও কংগ্রেস নেতারা বলছেন, এমন নয় যে, সনিয়ার কাছে শশীর কোনও কদর নেই। কিন্তু যে ভাবে তিনি দলকে বেমক্কা বিপাকে ফেলেন, সে বিষয়েই সতর্ক করেছেন সভানেত্রী।

রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ অবশ্য বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী তারিফ করেছেন তো কী হয়েছে? ক’দিন আগে জম্মুতে এক সভায় প্রধানমন্ত্রী আমারও তারিফ করেছেন!’’ খোদ শশী প্রথমটায় বেশ আবেঘঘন গলায় বলেছিলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বড় মনের পরিচয় দিয়েছেন। আমার মন ছুঁয়ে গিয়েছে।’’ কিন্তু পরে রাতের দিকে একটি টুইট করেন তিনি। লেখেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীজি, আপনি মহান। তবে কংগ্রেসের দাবিগুলো থাকছে। (দলের প্রতি আমার) দায়বদ্ধতা ধরে রাখতেই হবে।’’ ওই টুইটের ঠিক নীচে কংগ্রেস নেতা সচিন পায়লট লিখেছেন, ‘‘শশী তারুরের প্রশংসা করার জন্য ধন্যবাদ মোদীজি। কিন্তু কাজের কথা হোক। আমরা ইস্তফার দাবিতে অনড়।’’

দলের চাপেই কি আবেগে রাশ টেনে টুইট শশীর? জল্পনা কাটছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন