বাংলায় ‘পদ্মাবতী’কে স্বাগত জানানোর জন্য বিজেপির কোপে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
হরিয়ানার যে বিজেপি নেতা ক’দিন আগে দীপিকা পাড়ুকোনের মাথা কাটলে ১০ কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন, আজ তিনিই মমতার নাক কেটে নেওয়ার হুঙ্কার ছেড়েছেন। করণী সেনা এর আগে দীপিকার নাক কাটতে চেয়েছিল।
শুক্রবার মমতা বলেছিলেন, সঞ্জয় লীলা ভন্সালী যদি অন্য রাজ্যে ‘পদ্মাবতী’ দেখাতে না-ও পারেন, তা হলে কলকাতায় ছবি দেখানোর ব্যবস্থা করবেন। তারই উত্তরে আজ হরিয়ানার বিতর্কিত বিজেপি নেতা সুরজ পাল আমু বলেন, ‘‘ভন্সালীকে কলকাতায় স্বাগত জানাচ্ছেন মমতা!’’ তার পর নাক কাটার ভঙ্গি করে যোগ করেন, ‘‘শূর্পণখার সঙ্গে লক্ষ্মণ কী করেছিলেন, আমার কী বলার দরকার আছে?’’ জনতার উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘‘লক্ষ্মণ যা করেছিলেন, আপনারা করবেন তো? যাঁরা তলোয়ার নিয়ে এসেছেন, তাঁরা সেটি উপরে তুলে ধরে বলুন। এ রাজপুতানার তলোয়ার।’’
নিন্দায় সরব হয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় পরে বলেন, ‘‘যে ভাষায় উনি কথা বলেছেন, তা ক্ষমার অযোগ্য।’’ বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুও বলেন, ‘‘অকল্পনীয়। বিজেপির যেমন সংস্কৃতি, তেমনই ভাষা বলছে।’’
দিল্লিতে বিজেপি নেতৃত্বও এমন মন্তব্য সমর্থন করেননি। কেন্দ্রের অন্তত দুই শীর্ষ মন্ত্রী ঘরোয়া আলোচনায় কবুল করেন, পদ্মাবতী বিতর্কে আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে। উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু এ দিন এক সাহিত্য উৎসবে সরাসরি ‘পদ্মাবতী’ প্রসঙ্গ না তুলেও বলেন, গণতন্ত্রে হিংসাত্মক হুমকি কখনওই সমর্থন করা যায় না। সেই সঙ্গে কোনও গোষ্ঠীর
ভাবাবেগে আঘাত করা যে উচিত নয়, সেটাও তিনি মনে করান। প্রবীণা লেখক নয়নতারা সেহগল আবার ওই একই অনুষ্ঠানে বলেন, একশো কোটির দেশে একশো কোটি ভাবাবেগ আছে। ফলে সংঘাত অবশ্যম্ভাবী আর অন্যায় ভাবাবেগকে আঘাত করাটা ভুল নয়।
এর আগে শুধু দীপিকা নন, ভন্সালীর মাথার দামও ১০ কোটি টাকা ধার্য করেছিলেন সুরজ। রণবীর সিংহের পা ভেঙে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। তখন তাঁকে কারণ-দর্শানোর নোটিস পাঠানো হয় দলের পক্ষ থেকে। কিন্তু বিরোধীদের বক্তব্য, শুধু কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়ে কী লাভ? সুরজ যে তাতে দমেননি, সে তো আজ প্রমাণ হয়েই গেল। এখনও পর্যন্ত বিজেপি সুরজ পালের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। দেশ জুড়ে যাঁরা পদ্মাবতীর বিরোধিতা করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করেনি। প্রধানমন্ত্রীও চুপ। বিরোধীদের মতে, এর থেকেই স্পষ্ট গুজরাত ভোটের আগে ফায়দা তুলতেই বিতর্ক জিইয়ে রাখতে আগ্রহী বিজেপি নেতৃত্ব।