গড় উদ্ধারে নামতে হল অশক্ত শিবুকে

তাঁর গড় সাঁওতাল পরগনার দুমকা থেকেই ২০১৪ সালের বিধানসভা ভোটে হেরে যান হেমন্ত।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

দুমকা শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৩০
Share:

খবরে নজর: প্রচারে যাওয়ার আগে শিবু সরেন। —নিজস্ব চিত্র

দুমকার খিজুরিয়ার সাদা বাড়ির বিশাল চৌহদ্দিতে সবুজ যেন বেড়ে গিয়েছে। গাছগাছালির সবুজ তো রয়েছেই। সঙ্গে যোগ হয়েছে যত্রতত্র ঝুলে থাকা দলীয় সবুজ পতাকা, উঠোনে সবুজ রঙের বিরাট শামিয়ানা। দু’দফার নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে তাঁর সামনে। সবুজ ঘাসে ঢাকা লনে চেয়ারে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন ঝাড়খণ্ডের ‘গুরুজি’ শিবু সরেন। এখনও তাঁর নাম এবং ছবি সামনে রেখেই এ রাজ্যে টিকে আছে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা। স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে ‘ঝামুমো’। শহর তো বটেই, গ্রামে, জাতীয় সড়কে নরেন্দ্র মোদীর ছবির সঙ্গে টক্কর দিতে বৃদ্ধ দলপতির ছবিওয়ালা পতাকাই ভরসা ঝামুমো-র। শহরের দিকে অবশ্য তাঁর মেজ ছেলে তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের বড় বড় কাটআউট, ব্যানার ঝুলছে ঠিকই। তবে সে সবেও হাজির ঝাড়খণ্ডের তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী শিবু সরেন।

Advertisement

তাঁর গড় সাঁওতাল পরগনার দুমকা থেকেই ২০১৪ সালের বিধানসভা ভোটে হেরে যান হেমন্ত। বারহেট আসন থেকে জিতে বাবার মুখরক্ষা করেন তিনি। এ বার লোকসভা নির্বাচনে শিবু নিজেই দুমকা থেকে হেরেছেন। দু’টি পরাজয়ই বিজেপির কাছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, বিজেপির রঘুবর দাস-সহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এ বার ঘোষণা করেছেন, দুমকা এ বার মোর্চামুক্ত হবে। অন্য দিকে, মোর্চার স্লোগান, বিজেপি আবার সরকারে এলে জনজাতি মানুষের চাষের জমি বেহাত হবে। ছোটনাগপুর টেন্যান্সি আইনে ইতিমধ্যেই পরিবর্তন আনার চেষ্টা শুরু করেছে বিজেপি। গোড্ডা, বরকাগাঁওয়ে চাষের জমিতে কারখানা তৈরি নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।

আরও পড়ুন: ঘেরাও হওয়া সেই নাজমা-ই এখন সকলের প্রিয়

Advertisement

খিজুরিয়ার বাড়িতে বসে শিবুর বক্তব্য, ‘‘আমরা মানুষের কাছে গিয়ে বোঝাচ্ছি। দুমকা উদ্ধার হবেই। রাজ্যেও ঝামুমো-ই সরকার গড়ব।’’ আশি ছুঁইছুঁই অসুস্থ বৃদ্ধ নিজে গড় উদ্ধারে গাড়িতে, হেলিকপ্টারে ঘুরে ঘুরে প্রচারও করছেন। জানালেন, ভোরে এক ঘণ্টা যোগব্যায়ামের পর গরম জিলিপি ও ছোলাভাজা দিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে সকাল আটটার মধ্যে তৈরি হয়ে যান। তার পর প্রচারে বেরোন। গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস-ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার আসন সমঝোতা হয়নি। এ বার কংগ্রেস এবং লালুপ্রসাদের আরজেডি সম্মিলিত ভাবে হেমন্তকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী মেনেই মহাজোট তৈরি করেছে।

বাবা কিংবা দলের প্রধান হিসেবে হেমন্তকে পরামর্শ দিতে হচ্ছে? শিবুর উত্তর, ‘‘না। সবটাই ও নিজের মতো করে করছে। বাবা হিসেবে আমি চাই, রাজনৈতিক ভাবে ছেলে স্বাবলম্বী হয়ে উঠুক।’’ এ বার সেই সুযোগ রয়েছে বলেই মনে করছেন তিনি। বিজেপি সরেনদের এই পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছে। তাতে হেলদোল নেই শিবুর। বরং এ বার ছোট ছেলে বসন্তকেও ময়দানে নামানো হয়েছে। দাদা ও বাবার অনুপস্থিতিতে দুমকায় মাটি কামড়ে পড়ে বসন্ত। এ বারে লিট্টিপাড়া আসনে তাঁর অভিষেক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তাঁকে লড়াইয়ের বাইরে রেখে দল পরিচালনার দায়িত্ব দেন শিবু। হেমন্ত লড়ছেন দুমকা ও বারহেট থেকে। দলে খবর, দু’টি আসনে জিতলে বারহেট বসন্তের জন্য ছাড়া হবে।

তবে অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আজসু) এখানে ভাবাচ্ছে জেএমএম-কে। পরিস্থিতি বুঝে যে কোনও দলকে সমর্থন দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে দলের প্রতিষ্ঠাতা তথা প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুদেশ মাহাতোর। বিজেপির সঙ্গে জোট ভেঙে বেরিয়ে একক ভাবে লড়ছে আজসু। টিকিট না পেয়ে সাঁওতাল পরগনার নামজাদা বিজেপি নেতারা সুদেশের দলে যোগ দিয়েছেন। রাজনীতির কারবারিদের ব্যাখ্যা, বিজেপির অস্ত্রেই বিজেপিকে বধ করে আজসু কয়েকটি আসন বার করলে ক্ষতি জেএমএমের। কারণ, সে ক্ষেত্রে সুদেশ বিজেপির দিকেই ঝুঁকতে পারেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি লক্ষ্মণ গিলুয়ার কথায়, ‘‘ভোটের পরেও জোট তৈরির রাস্তা খোলা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন