পুরভোটে সাফল্যের পরে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসকে শুভেচ্ছা সস্ত্রীক নিতিন গডকড়ীর। নাগপুরে। ছবি: পিটিআই।
এ যেন আরব সাগরকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে আধিপত্য বজায় রাখতে প্রশ্ন করা, ‘‘মুম্বই কা কিং কৌন?’’
উনিশ বছর আগে রামগোপাল বর্মার ‘সত্য’ সিনেমার ভিকু মাত্রে আর আজকের বিজেপি-শিবসেনার হালও কতকটা এক! সেয়ানে সেয়ানে লড়াইয়ে দু’জনেরই এক দাবি— আমরাই ‘মুম্বই কা কিং’! পুরভোটের ফল প্রকাশের এক দিন পরে সেই দাবি নিয়েই শুরু হল নতুন স্নায়ুযুদ্ধ।
এমনিতেই পুরভোটের আগে বিজেপির সঙ্গে শিবসেনার সংঘাত চরমে উঠেছিল। উদ্ধব বিজেপি-সঙ্গ ছেড়ে ঘোষণা করেছিলেন, আর কোনও দিন জোট গড়বেন না। এমন ঘোষণা অবশ্য তিনি আগেও করেছেন। ভোটের পরে ডিগবাজিও খেয়েছেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।
অঙ্কের হিসেবে শিবসেনার ৮৪টি আসন। বিজেপির দু’টি কম, ৮২। পুরসভা গঠন করতে সহজতম অঙ্কটি হল বিজেপি-শিবসেনার জোট। বিজেপির মহারাষ্ট্রের নেতা ও নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী সেই ইঙ্গিতটিই আজ প্রকাশ্যে দিয়ে বলেছেন, ‘‘জোট বাঁধা ছাড়া দুই দলের সামনে আর কোনও পথ নেই।’’ কিন্তু এই সহজতম অঙ্কটিই যতটা সম্ভব কঠিন করে তুলছে দু’পক্ষ। কারণ, দু’দলই চায় মুম্বই পুরসভার রাশটি নিজের হাতে রাখতে।
উদ্ধব ঠাকরে গত কালই গেয়ে রেখেছেন, মেয়র তাঁদের দলেরই। কারণ, বেশি সংখ্যা তাঁর ঝুলিতেই। কিন্তু মুম্বই পুরসভায় মেয়রের থেকেও ক্ষমতাধর হলেন স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান। কারণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানই ঠিক করেন, পুরসভার প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট কোথায়, কী ভাবে খরচ হবে। ফলে আপাতদৃষ্টিতে এখন লড়াই মেয়র পদ নিয়ে হলেও আসলে তলে তলে জোর লড়াই দ্বিতীয় পদটি নিয়ে।
তার প্রমাণও আছে। বিজেপির ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’ মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস দূত মারফত উদ্ধবকে বার্তা দিয়েছেন, পুর নির্বাচন বিজেপি লড়েছে স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। ফলে স্থায়ী কমিটি দিতে হবে তাঁদেরই। আর যে হেতু বিজেপি ও শিবসেনার আসন সংখ্যা প্রায় সমান, তাই মেয়র পদের ভাগাভাগিও হবে আধাআধি। অর্থাৎ, প্রথম আড়াই বছরে শিবসেনার মেয়র থাকলে পরের অর্ধে বিজেপির।
এমনিতেই আসনের হিসেবে বিজেপি ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে। সেটা নিয়ে চাপ তো আছেই। তার উপর মুম্বই দখল নিয়ে বিজেপির এই ‘বেয়াড়া’ আবদারে আরও চটেছেন উদ্ধব। কিন্তু চটেও তো লাভ নেই! কারও হাত না ধরলে মুম্বইয়ের মসনদ দখল করা যাবে না। তাই উদ্ধব এখন বিজেপিকে ছাড়া অন্য সঙ্গী খুঁজছেন।
আরও পড়ুন:
সরছে মাটি, টিকবেন কি মরাঠা স্ট্রংম্যান
তারা কারা?
শিবসেনা সূত্রের মতে, যদি কংগ্রেস, এমএনএস, এনসিপি-র সমর্থন পাওয়া যায়? কংগ্রেস যদি সরাসরি সমর্থন না দিয়ে অন্তত মেয়র নির্বাচনে অনুপস্থিত থেকে সাহায্য করে? কংগ্রেসের এক স্থানীয় নেতা আব্দুল সাত্তার ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন, বিজেপিকে ঠেকাতে সেনাকে সমর্থন করা উচিত। এমন অনেক অঙ্ক নিয়েই এখন সরগরম উদ্ধবের বাসভবন ‘মাতোশ্রী’। হিসেবে ধরা হচ্ছে নির্দলদেরও। কাল শিবসেনার বৈঠক। ইতিমধ্যেই তিন নির্দল সেনা-শিবিরে যোগ দিয়েছেন। চেষ্টা চলছে আরও কয়েক জন নির্দলকে পাশে টানতে।
পিছিয়ে না থেকে বিজেপিও ওই একই খেলা শুরু করে দিয়েছে। আজ রাতেই যত জন সম্ভব নির্দলকে পাশে টেনে তারা নিজেদের শক্তি প্রমাণে মরিয়া। একবার সংখ্যার হিসেবে শিবসেনাকে টপকে যেতে পারলে দর কষাকষিতে অনেকটাই এগিয়ে থাকবে বিজেপি।
দিল্লিতে বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘উদ্ধব কংগ্রেসের সাহায্য নিলে রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ জলাঞ্জলি দেবেন। কংগ্রেসও জাত খোয়াবে।’’ ওই নেতার ব্যাখ্যা, দু’বছরের মাথায় মহারাষ্ট্রে লোকসভা ও বিধানসভা ভোট। এমনিতেই পুরসভার অডিটের ভার রাজ্যের বিজেপি সরকারের হাতে। শিবসেনা যদি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধে, তা হলে অডিট-রিপোর্টকে হাতিয়ার করে দুর্নীতির অভিযোগ আনতে সক্রিয় হবে বিজেপি। এ নিয়ে প্রচারেও যাবে তারা। বিজেপির আশা, তখন চাপের মুখে শিবসেনা মেয়র পদ বিজেপিকে ছেড়ে নিজেরা স্থায়ী কমিটি হাতে রাখতে পারে।
অঙ্ক কষছে দু’পক্ষই। ৯ মার্চের মধ্যে মেয়র নির্বাচন সারতে হবে। হাতে এখনও দশ দিনের বেশি সময়। তত দিন স্নায়ুর যুদ্ধে এগিয়ে থাকতে চাইছে দু’পক্ষই।