Shraddha Walkar Murder Case

শ্রদ্ধাকে খুন করে চিকেন রোল অর্ডার দেন আফতাব, রক্ত সাফ করেন হারপিকে, তথ্য চার্জশিটে

একাধিক নারীসঙ্গ ছিল আফতাবের। এই নিয়েই শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁর ঝামেলা বেধেছিল। দিল্লি পুলিশের ৬ হাজার ৬০০ পাতার চার্জশিটে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২১:২৬
Share:

গত বছরের ১৮ মে শ্রদ্ধা ওয়ালকরকে খুন করা হয়। ফাইল চিত্র।

এমন হাড়হিম হত্যাকাণ্ড বোধহয় সাম্প্রতিক অতীতে দেখেনি দেশ। যে কাহিনির ছত্রে ছত্রে রয়েছে নৃশংসতা। যা জানলে শিউরে উঠতে হয়। দিল্লিতে শ্রদ্ধা ওয়ালকরকে খুনের সেই নৃশংস বিবরণ উঠে এসেছে পুলিশের চার্জশিটে। লিভ ইন সঙ্গী শ্রদ্ধাকে কী ভাবে খুন করেছিলেন প্রেমিক আফতাব আমিন পুনাওয়ালা? সেই ভয় ধরানো কাহিনিই তুলে ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৬০০ পাতার চার্জশিটে। শ্রদ্ধাকে খুনের পর চিকেন রোল খেয়েছিলেন আফতাব। প্রেমিকার রক্ত সাফ করেছিলেন হারপিক দিয়ে। এমন তথ্যই তুলে ধরা হয়েছে চার্জশিটে।

Advertisement

একটি ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে মহারাষ্ট্রের পালঘরের তরুণী শ্রদ্ধার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল আফতাবের। সেই আলাপ পরে প্রেমে গড়ায়। বাড়ির অমতেই আফতাবকে জীবনসঙ্গী হিসাবে বেছে নেন শ্রদ্ধা। যার জন্য আপনজনদের ছেড়েছেন, সেই আফতাবের হাতেই খুন হতে হয় শ্রদ্ধাকে। ২০২২ সালের ১৮ মে শ্রদ্ধাকে খুন করেন তার প্রেমিক। তবে এই হত্যাকাণ্ডের খবর প্রকাশ্যে আসে গত বছরের নভেম্বর মাসে। শ্রদ্ধার নামে নিখোঁজ ডায়েরি করেন তাঁর বাবা বিকাশ ওয়ালকর। ঘটনার তদন্তে নেমেই পর্দাফাঁস করে পুলিশ। শ্রদ্ধাকে খুনের পর তাঁর দেহ ৩৫ টুকরো করেন আফতাব। এই নৃশংস হত্যার ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে যায়। ১২ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয় আফতাবকে।

শ্রদ্ধাকাণ্ডে ৬ হাজার ৬০০ পাতার চার্জশিট তৈরি করেছে দিল্লি পুলিশ। কী ভাবে প্রেমিকাকে খুন করেছিলেন আফতাব? তা-ই তুলে ধরা হয়েছে। দিল্লির ছতরপুরে যে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন শ্রদ্ধা এবং আফতাব, গত বছরের ১৮ মে সেখানেই খুন করা হয় শ্রদ্ধাকে। চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, শ্রদ্ধাকে জাপটে ধরে প্রথমে মেঝেয় ফেলে দেন আফতাব। শ্রদ্ধার বুকের উপর চড়ে বসেন তিনি। তার পর দু’হাত দিয়ে শ্রদ্ধার গলা চেপে ধরেন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর শ্রদ্ধার দেহ শৌচাগারে লুকিয়ে রাখেন আফতাব।

Advertisement

পুলিশকে আফতাব জানিয়েছেন, শ্রদ্ধাকে খুনের পর সেদিন সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে বাড়ির সদর দরজা বন্ধ করে কাছাকাছি একটি দোকানে যান। সেখান থেকে ১টি করাত, ৩টি ব্লেড, ১টি হাতুড়ি এবং প্লাস্টিকের ক্লিপ কেনেন। এর পর বাড়ি ফিরে প্রথমে করাত দিয়ে শ্রদ্ধার হাত কাটেন আফতাব। তার পর সেই দেহাংশ সাদা পলিথিনের মধ্যে ভরে রাখেন। শ্রদ্ধার হাত কাটতে গিয়ে চোট পান আফতাব। তাঁর বাঁ হাতে সামান্য কেটে যায়। শ্রদ্ধার কাটা হাত রান্নাঘরের ক্যাবিনেটে লুকিয়ে রাখেন। খুনের পরের রাতে ২টো নাগাদ শ্রদ্ধার উরু কেটে ছতরপুরের জঙ্গলে ফেলে দিয়ে আসেন আফতাব।

এর ৪-৫ দিন পর শ্রদ্ধার দেহের ১৭টি টুকরো করেন আফতাব। যার মধ্যে ছিল হাতের ৬ টুকরো, পায়ের ৬ টুকরো, মাথা, ধড়, কোমরের ২টি টুকরো, বুড়ো আঙুল। দিল্লি পুলিশকে আফতাব জানিয়েছেন, খুনের পরের দিন, অর্থাৎ গত ১৯ মে একটি ফ্রিজ কেনেন আফতাব। শ্রদ্ধার বাকি দেহাংশগুলি ওই ফ্রিজে রাখেন। শ্রদ্ধাকে খুনের পর একটি ডেটিং সাইটে অন্য এক মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন আফতাব। ওই মহিলা আফতাবের ফ্ল্যাটে এসে বেশ কয়েক বার রাতও কাটান। যখনই ওই মহিলা ফ্ল্যাটে যেতেন, সেই সময় ফ্রিজ পরিষ্কার করে রাখতেন আফতাব। সেই সঙ্গে শ্রদ্ধার দেহাংশ রান্নাঘরে লুকিয়ে রাখতেন। খুনের পর প্রমাণ লোপাটের জন্য শ্রদ্ধার হাড়গোড় মিক্সার গ্রাইন্ডারে গুঁড়ো গুঁড়োও করেছিলেন আফতাব।

শ্রদ্ধাকে খুনের ঘটনায় তাঁকে যাতে কেউ সন্দেহ না করেন, এ জন্য ফন্দিও এঁটেছিলেন আফতাব। চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, শ্রদ্ধার নিখোঁজের তদন্তে যোগ দিতে মহারাষ্ট্রও গিয়েছিলেন আফতাব। পথে শ্রদ্ধার ফোন ছুড়ে দেন। পাশাপাশি শ্রদ্ধার ক্রেডিট কার্ড নষ্ট করে দেন। শ্রদ্ধার ঠোঁটের গোড়ায় ‘স্টাড’ (পিয়ার্সিং করা ছিল) ছিল। সেই ‘স্টাড’টি বাক্সের মধ্যে ভরে তা চলন্ত ট্রেন থেকে ছুড়ে ফেলে দেন।

শ্রদ্ধাকে যে দিন খুন করেন আফতাব, সে দিন অনলাইনে চিকেন রোল অর্ডার করেছিলেন। খুনের পর সেই চিকেন রোল খেয়েছিলেন আফতাব। আগামী ৩ দিনের জন্য বেশ কয়েকটি জলের বোতলও অর্ডার দিয়েছিলেন শ্রদ্ধার প্রেমিক। খুনের পর শ্রদ্ধার দেহ টুকরো টুকরো করায় রক্তে ভেসে গিয়েছিল ফ্ল্যাট। রক্ত সাফ করতে ২ বোতল হারপিক কিনেছিলেন আফতাব। পাশাপাশি হ্যান্ডওয়াশ, ২ বোতল গ্লাস ক্লিনারও কেনেন তিনি। কিন্তু কেন নিজের প্রেমিকাকে খুন করলেন আফতাব? চার্জশিট বলা হয়েছে, তাঁদের দু’জনের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। আর এই অশান্তির নেপথ্যে ছিলেন আফতাবই। একাধিক নারীসঙ্গ ছিল আফতাবের। যা মোটেই ভাল চোখে দেখেননি শ্রদ্ধা। এই নিয়েই ওই যুগলের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল।

তদন্তকারী আধিকারিকরা জানিয়েছেন, পলিগ্রাফ পরীক্ষা এবং নার্কো পরীক্ষার সময় এই বয়ান দিয়েছেন আফতাব। সেই বয়ানই চার্জশিটে তুলে ধরা হয়েছে। আফতাবের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন শ্রদ্ধার বাবা। এই আবহে দিল্লি পুলিশের চার্জশিটে উঠে এল আফতাবের নৃশংসতার কীর্তি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন