তিনি ভারতীয় বাবার মেয়ে, এই কথাটি প্রমাণ করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ভারতে ‘আশ্রয়’-ই চাইলেন সীমারানি বর্ধন।
অসমের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে পিতার ভারতীয় নাগরিকত্বের নথি পেশ করেও রেহাই মিলল না তাঁর। তিনি যে ‘নিরঞ্জন বর্ধনেরই মেয়ে’, এর কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেননি। তাঁর ভারতীয় পড়শিরা বরং শুনে বিস্মিত। বারবার বলছেন, সীমা তো নিরঞ্জন বর্ধনেরই মেয়ে। ভারতীয় আত্মীয়-স্বজনরাও বলছেন, ‘‘আমাদের চোখের সামনে বেড়ে উঠেছে এই মেয়ে। জন্ম, শৈশব, কৈশোর, বিয়ে, স্বামীর মৃত্যু—সবই তো দেখা আমাদের।’’
কিন্তু ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে সে সব কথা মূল্যহীন। তাঁরা কাগজপত্রে প্রমাণ চান। আর না পেয়ে ভারতীয় বাবার মেয়ে, যাণর জন্মকর্ম সবই ভারতে তাঁকেই ‘বিদেশি’ বলে চিহ্নিত করা হল। বরাকের কাছাড় জেলার লক্ষ্মীপুর মহকুমার জয়পুরের বাসিন্দা সীমারানি বর্ধন। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করলেও বাবা-মেয়ের সম্পর্কের নথিপত্র চান বিচারপতিরা। সীমারানি সে কাগজ কোথায় পাবেন! দারিদ্রের জন্য কোনও দিন স্কুলের বারান্দায় পা মাড়াননি। জন্মের শংসাপত্র তৈরিরও দরকার মনে করেননি অভিভাবকরা। আর প্রথম ভোট দিয়েছেন বিয়ের পরে। ফলে ভোটার তালিকাতেও বাবার নামের উল্লেখ নেই।
হাইকোর্ট ট্রাইব্যুনালের রায়ই বহাল রেখেছে। রায়ে তাঁরা উল্লেখ করেন, কাগজপত্রে প্রমাণ করা না গেলে তাদের পক্ষে ভারতীয় বলা মুশকিল। কিন্তু ভারতে থাকতে চাইলে সীমারানি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানাতে পারেন। ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বরের সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে সে সুযোগ রয়েছে।
‘ভারতীয়’ সীমাদেবী জুলাই মাসেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে ‘আশ্রয়’ চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন। সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন, হাইকোর্টের রায় ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তির প্রতিলিপি। ওই বিজ্ঞপ্তিতেই বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তান থেকে যে সব হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিস্টান, পার্সি নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন, তাদের বিতাড়িত করা হবে না।
‘‘এ বার নিশ্চয় মাকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হবে না?’’— প্রশ্ন সীমারানির ছেলেমেয়েদের।