জমি বিবাদের জেরে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার করা হল ১৩ জনকে। ধৃতদের ৩ জন মহিলা। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে একটি হাতে তৈরি বন্দুক, একটি দা, কিছু আতসবাজি ও গুলতি।
কাছাড়ের পুলিশ সুপার রজবীর সিংহ জানিয়েছেন, গত রাতে আড়াইটে নাগাদ শিলচর থানার সইদপুরের আমির হোসেন রাজবড়ভুঁইঞার বাড়িতে হানা দেয় একদল দুষ্কৃতী। বাড়ির লোকজনকে মারধর করে রাস্তায় বের করে দেয় তারা। চলে লুটপাট। হইচই শুনে এলাকার আঞ্চলিক পঞ্চায়েত সদস্য আয়ুবউদ্দিন লস্কর-সহ অন্য প্রতিবেশীরা খবর নিতে যান। দুষ্কৃতীদলটি পটকা ফাটিয়ে সবাইকে ভয় দেখায়। গুলতি দিয়ে পাথর ছোঁড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছলে তাদেরও প্রথমে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পাথর ছুঁড়ে কয়েক জন পুলিশকর্মীকে জখম করে।
রজবীর জানান, প্রথমে পুলিশ শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। কিন্তু দুষ্কৃতীদলটি আত্মসমর্পণের বদলে তাঁদের লক্ষ্য করে বন্দুক উঁচিয়ে ধরে। পুলিশ বাধ্য হয়ে দুষ্কৃতীদের দিকে এক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। সেটি লাগে রিপন আহমেদ লস্কর নামে এক দুষ্কৃতীর পায়ে। এর পরই দমে যায় দুষ্কৃতীরা। চারদিক থেকে তাদের ঘিরে ফেলা হয়েছে, বুঝতে পেরে আত্মসমর্পণ করে সবাই। পরে রিপনকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বাকিদের রাঙ্গিরখাড়ি ফাঁড়িতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পুলিশ জানায়, ধৃতদের মধ্যে রয়েছে রিপনের দাদা হোসেন আহমেদ লস্করও। তার বক্তব্য, আমির হোসেন ও তার এক ভাই একসঙ্গে কাজ করত। সেই পরিচয়ে আমিরকে তাদের বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়। সেই সময় বাড়িটি ফাঁকাই পড়েছিল। দু’বছর ভালই চলে। এর পরই রূপ বদল শুরু। তিন বছর ধরে ভাড়াও দেয় না, বাড়িও ছাড়তে চায় না। বরং মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমাও চলছে। বিরক্ত হয়েই কয়েক দিন আগে দুই ভাই মিলে কথা বলে উত্তর কৃষ্ণপুরের তমিজউদ্দিন বড়ভুঁইঞার সঙ্গে। ২০ হাজার টাকায় চুক্তি করে উভয় পক্ষ। পুরো টাকা হাতে পেয়ে ছক কষে তমিজ-বাহিনী। হত রাতে তার লোকজন আমির হোসেনের ঘরে হানা দেয়। সঙ্গে ছিল হোসেন-রিপনও।
আমির হোসেন একে গালগল্প বলে উড়িয়ে দেন। তিনি দাবি করেন, জমি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কোনও বিরোধ থাকার কথা নয়। মামলারও প্রশ্ন ওঠে না। তাঁর বাড়ি ঠাকুর্দার আমলে কেনা। ভাড়া থাকার কথাও অবান্তর। তাঁর কথায়, ‘‘ডাকাতির উদ্দেশেই ওরা গভীর রাতে তাঁর বাড়িতে ঢোকে। ছিনিয়ে নেয় নগদ ২০ হাজার টাকা। সঙ্গে ৮০ হাজার টাকার স্বর্ণলঙ্কার। এলাকাবাসী ও পুলিশ এগিয়ে না এলে আমাকে নিঃস্ব করে দিত।’’
তদন্তকারীরা জানান, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে বহু কথার গরমিল ধরা পড়ে। ২০ হাজার টাকা অগ্রিম নিয়ে আমির হোসেনের পরিবারকে বাড়িছাড়া করার চুক্তির কথা তমিজউদ্দিন অস্বীকার করে। তমিজ জানায়, হোসেন আহমেদের কাঠের আসবাবপত্রের ব্যবসা রয়েছে। সে সেখানে মাঝেমধ্যে কাঠ কাটার কাজ করে। গত রাতে কাজ আছে বলে হোসেন আহমেদ তাকে ডেকে আনে। পরে ওই বাড়িতে নিয়ে যায়।
পুলিশের জালে পড়া তিন মহিলা হাজিরা বেগম, ইলারা বেগম ও আয়ারুন শেখের বক্তব্য— তাদের বাড়ি হাইলাকান্দি জেলার কৃষ্ণপুরে। শিলচরে বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করে। সইদপুরেই ভাড়াবাড়িতে থাকে তারা। হোসেন আহমেদ তাদের বিনা ভাড়ায় থাকার টোপ দিয়ে সেখানে নিয়ে যায়।
তদন্তে বিভিন্ন বিষয় বেরিয়ে আসবে বলে অনুমান করছেন পুলিশ সুপার রজবীর সিংহ। তিনি জানান, অস্ত্র উদ্ধার এবং পুলিশকে বাধা দেওয়ার দরুন প্রাথমিক পর্যায়ে তারা একে ডাকাতির ঘটনা বলেই মনে করছেন। যাদের ঘটনাস্থল থেকে আনা হয়েছে, আগে থেকে তারা বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত। তার মধ্যে ইব্রাহিম আলি লস্কর অস্ত্রশস্ত্র বানানোয় দক্ষ। অনুমান করা হচ্ছে, বাজেয়াপ্ত বন্দুকটি তারই তৈরি। মুজিবুর রহমান লস্কর ধর্ষণের অভিযোগে কয়েক মাস আগে জেল থেকে বেরিয়েছে। আগেও ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
হোসেন, রিপন, তমিজ, ইব্রাহিম, মুজিবুর এবং তিন মহিলা ছাড়া ধরা পড়েছে আব্দুল শুক্কুর লস্কর, জাকির হোসেন লস্কর, কালু মিয়া লস্কর, রহমত আলি লস্কর ও ফখরুল ইসলাম বড়ভুঁইঞা।