গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
কান্না থামছে না সরিতা দেবীর। ফোনের ও পারে কথা বলতে গিয়ে নিজেকে সামলাতে পারছেন না তিনি। চেষ্টা করছেন। ১৯ বছরের তরতাজা ছেলের এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না মা। তাই ছেলে সৌরভ প্রতীককে বাঁচিয়ে রাখতেই তাঁর বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পটনা, দিল্লি, কলকাতায় দান করলেন তিনি।
বছর খানেক আগে এ ভাবেই এক মৃতের শরীরের কিডনি পেয়ে প্রাণে বাঁচেন তিনি। সেই সময়ে ছেলেই সক্রিয় ভাবে খোঁজখবর করে মায়ের জন্য কিডনি জোগাড় করেছিল। সরিতাদেবীর কথায়, ‘‘আমি অন্যের থেকে কিডনি পেয়ে বেঁচে আছি। আমার ছেলেও অন্যের শরীরে এ ভাবেই বেঁচে থাকবে।’’
গত ১৯ সেপ্টেম্বর বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে যান নালন্দা জেলার হিলসা থানার গজেন্দ্র বিগহার বাসিন্দার সৌরভ প্রতীক। প্রথমে তাঁকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ২২ সেপ্টেম্বর আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে পটনার ইন্দিরা গাঁধী ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসে (আইজিআইএমএস) ভর্তি করানো হয়। আইজিআইএমএসের সুপার মনীষ মণ্ডল জানান, ২৩ সেপ্টেম্বর প্রতীকের ‘ব্রেন ডেথ’ হয়। এর পরেই প্রতীকের মা সরিতাদেবীর সম্মতিতে দিল্লির ন্যাশনাল অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট অর্গানাইজেশন (নোটো) ও ইনস্টিটিউট অব লিভার অ্যান্ড বিলিয়ারি সায়েন্সেস এবং কলকাতায় রিজিওনাল অর্গান অ্যান্ড টিস্যু ট্রান্সপ্ল্যান্ট অর্গানাইজেশন (রোটো) কর্তৃপক্ষকে খবর দেওয়া হয়। মনীষ বলেন, ‘‘গত ২৪ সেপ্টেম্বর চোখ, হার্ট এবং লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য তুলে নেওয়া হয়।’’
এর পরেই গ্রিন করিডর তৈরি করে পটনা বিমানবন্দর থেকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয় হার্ট এবং দিল্লিতে পাঠানো হয় লিভার। কলকাতার আর এন টেগোর হাসপাতালে ২৯ বছরের রাখী মণ্ডলের শরীরে হার্ট প্রতিস্থাপিত হয়। দিল্লিতে ইন্সটিটিউট অব লিভার অ্যান্ড বিলিয়ারি সায়েন্সেসে ৪৬ বছরের এক রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপিত হয় লিভার। আইজিআইএমএসের আই-ব্যাঙ্কের মাধ্যমে গত কালই চোখ প্রতিস্থাপিত হয়েছে। আইজিআইএমএসের চিকিৎসক সলিল অবনীশ বলেন, ‘‘আপাতত তিন গ্রহীতাই সুস্থ আছেন।’’ এ ভাবে ‘ব্রেন ডেথ’ হওয়া রোগীর বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের ঘটনা বিহারে প্রথম। রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রী মঙ্গল পাণ্ডে বলেন, ‘‘সৌরভের পরিবার আমাদের কাছে প্রেরণা। আমরা সরকারি ভাবে অঙ্গ দানে উৎসাহ দেব।’’