উত্তরপ্রদেশ যার, দিল্লি তার— এই পুরনো রাজনৈতিক প্রবচনই কি এখন ঘুরছে কংগ্রেস সভানেত্রীর মাথায়? —ফাইল চিত্র।
সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছোড়ার রাস্তায় হাঁটতে শুরু করল কংগ্রেস। উত্তরপ্রদেশ দখলের লড়াই সরাসরি নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সনিয়া গাঁধীর লড়াই। এই বার্তাই সম্ভবত দিতে চাইছে ১০ জনপথ। তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ক্ষেত্র বারাণসীতে কংগ্রেস সভানেত্রীর বিশাল রোড শো-এর মধ্য দিয়ে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করে দিল দেশের প্রধান বিরোধী দল। সনিয়ার এই কর্মসূচি ঘিরে মঙ্গলবার সকাল থেকেই সরগরম বারাণসী।
রোড শো করছেন সনিয়া গাঁধী। তাও আবার নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্রে। স্বাভাবিক ভাবেই গোটা উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন স্তরের কংগ্রেস নেতাদের পথ বেশ কয়েক দিন ধরেই বারাণসীর পথে মিলতে শুরু করেছিল। বারাণসী বিমানবন্দরে এ দিন সনিয়াকে স্বাগত জানাতে বিশাল সংখ্যায় কংগ্রেস কর্মীরা হাজির ছিলেন। দীর্ঘ গাড়ি-মিছিলে সওয়ার হয়ে সনিয়া বারাণসী শহরে ঢোকেন। তা নিয়েও রাস্তার দু’ধারে উৎসাহী কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের ভিড় ছিল যথেষ্টই। মধ্যাহ্নভোজের পর সনিয়া বারাণসীতে রোড শোয়ে বেরোবেন। উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী শীলা দীক্ষিত, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রাজ বব্বর, এআইসিসি-র তরফে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা গুলাম নবি আজাদ-সহ উত্তরপ্রদেশের প্রায় সব শীর্ষ কংগ্রেস নেতা সনিয়া গাঁধীর রোড শোয়ে হাজির হচ্ছেন। খোলা মিনি ট্রাকে চড়ে সাড়ে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ পথে রোড শো করবেন কংগ্রেস সভানেত্রী। সঙ্গে বিশাল মোটরকেড তো থাকছেই। থাকছে ১০ হাজার মোটরবাইকের বিরাট মিছিলও। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ক্ষেত্রের কংগ্রেস সভানেত্রীর মিছিলকে সফল করতে কংগ্রেস কর্মীদের তৎপরতা তুঙ্গে।
উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন ২০১৭-র গোড়ার দিকে। কংগ্রেস কোনও নির্বাচনের জন্যই এত আগে থেকে প্রস্তুতি নেয় না। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনকে যে কংগ্রেস ‘ডু অর ডাই’ লড়াই হিসেবেই নিচ্ছে, তা সনিয়ার এ দিনের রোড শো থেকে অনেকটাই স্পষ্ট।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ঝড়ের মুখে উত্তরপ্রদেশে নাস্তানাবুদ হয়ে গিয়েছিল কংগ্রেস। গাঁধী পরিবারের দীর্ঘ দিনের গড় রায়বরেলী আর অমেঠি ছাড়া বাকি কোনও আসনে জিততে পারেনি কংগ্রেস। রাজ্যের বিধানসভার ৪০৩টি আসনের মধ্যে কংগ্রেসের হাতে এই মুহূর্তে মাত্র ২৮টি। সেই উত্তরপ্রদেশের জন্য কংগ্রেস যে ভাবে ঝাঁপাচ্ছে এবং সনিয়া যে ভাবে মোদীর সঙ্গে সম্মুখ সমরের বার্তা দিতে চাইছেন, তা দেখে রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশই একটু আশ্চর্য। সনিয়াকে বারাণসীতে স্বাগত জানিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রাজ বব্বর সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে আমাদের একটা মিরাক্ল চাই এবং তা আজ থেকেই শুরু হচ্ছে।’’ রাজ বব্বর আরও বলেছেন, উত্তরপ্রদেশের মানুষ বার বারই চমকে দেওয়ার মতো রায় দিয়েছেন। ২০১৪ সালে বিজেপির ফলও একটা মিরাক্লই ছিল বলে তাঁর দাবি। বারাণসীতে সনিয়া গাঁধীর রোড শোয়ের মধ্য দিয়ে সেই মিরাক্ল কংগ্রেসের জন্য শুরু হচ্ছে বলে রাজ বব্বর মনে করছেন। সন্ধ্যায় কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরেও যাবেন কংগ্রেস সভানেত্রী।
আরও পড়ুন: নরম কেন্দ্র, কাল জিএসটি বিল পাশের আশা
উত্তরপ্রদেশের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বারাণসী। বিজেপি-র জনভিত্তি এই অঞ্চলে খুব মজবুত নয়। লোকসভায় ভাল ফল হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু আগের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ফল এই অঞ্চলে বেশ খারাপই ছিল। সে কথা মাথায় রেখেই পূর্ব উত্তরপ্রদেশকে টার্গেট করে নিয়েছে কংগ্রেস। বারাণসীর রোড শো থেকে তিনি নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানাতে চলেছেন বলে রাজনৈতিক শিবির মনে করছে। উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতাসীন সমাজবাদী পার্টির বিরুদ্ধেও সনিয়া সুর চড়াবেন বলে মনে করা হচ্ছে।