দিল্লি যাওয়ার সব পথ উত্তরপ্রদেশ হয়েই গিয়েছে— কংগ্রেস সভানেত্রীর মাথায় কি এখন সে কথাই ঘুরছে? ছবি সৌজন্য: ইউপিসিসি।
লড়াই জমিয়ে দিলেন সনিয়া গাঁধী। বিপুল জনসমাগমে ভাসিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী ক্ষেত্র বারাণসীকে। প্রধানমন্ত্রীর দুর্গে সাড়ে ছয় কিলোমিটার পথ পরিক্রমা করল কংগ্রেস সভানেত্রীর রোড শো। তাকে ঘিরে মন্দির শহরের রাজপথে যে জনস্রোত আছড়ে পড়ল, তা নয়াদিল্লির ৬ অশোক রোডের কর্তাদের কপালে ভাঁজ ফেলবেই। কংগ্রেস সভানেত্রী সম্ভবত সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছোড়ার বার্তাই দিতে চেয়েছিলেন। নরেন্দ্র মোদী বনাম সনিয়া গাঁধী— উত্তরপ্রদেশ দখলের যুদ্ধকে শুরুতেই এই জায়গায় দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন তিনি। মোদীর কেন্দ্রে সনিয়ার রোড শো ঘিরে মঙ্গলবার যে বিপুল উৎসাহ দেখা গেল, তাতে প্রায় সব মহলই মেনে নিচ্ছে, চ্যালে়ঞ্জটা জোরদারই ছুড়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী।
রোড শো করছেন সনিয়া গাঁধী। তাও আবার নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্রে। স্বাভাবিক ভাবেই গোটা উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন স্তরের কংগ্রেস নেতাদের পথ বেশ কয়েক দিন ধরেই বারাণসীর পথে মিলতে শুরু করেছিল। বারাণসী বিমানবন্দরে এ দিন সনিয়াকে স্বাগত জানাতে বিশাল সংখ্যায় কংগ্রেস কর্মীরা হাজির ছিলেন। দীর্ঘ গাড়ি-মিছিলে সওয়ার হয়ে সনিয়া বারাণসী শহরে ঢোকেন। ছিল ১০ হাজার বাইকের বিশাল মিছিলও। সনিয়ার এই বারাণসী প্রবেশের পর্ব থেকেই রাস্তার দু’ধারে উৎসাহী কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের ভিড় ছিল যথেষ্ট। মধ্যাহ্নভোজের পর সনিয়া বারাণসীতে রোড শোয়ে বেরোন। উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী শীলা দীক্ষিত, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রাজ বব্বর, এআইসিসি-র তরফে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা গুলাম নবি আজাদ-সহ উত্তরপ্রদেশের প্রায় সব শীর্ষ কংগ্রেস নেতাই সনিয়া গাঁধীর রোড শোয়ে হাজির ছিলেন। খোলা মিনি ট্রাকে চড়ে সাড়ে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ পথে রোড শো করার কতা ছিল কংগ্রেস সভানেত্রীর। কিন্তু সনিয়া শেষ পর্যন্ত মিনি ট্রাকে ওঠেননি। এসএউভি-র সামনের দরজা খুলে রেখে সেখানে দাঁড়িয়েই রোড শোয়ে বেরোন সনিয়া। সঙ্গে বিশাল মোটরকেড। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ক্ষেত্রে কংগ্রেস সভানেত্রীর মিছিলকে সফল করতে কংগ্রেস কর্মীদের তৎপরতা তুঙ্গে ছিল। রোড শো শুরু হওয়ার পর বোঝা গেল, প্রস্তুতি বৃথা যায়নি। হাজার হাজার মানুষ হাজির হলেন কংগ্রেস সভানেত্রীর রোড শোয়ের সাক্ষী থাকতে। তবে সনিয়ার মিছিল শেষ হওয়ার পর উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস নেতাদের অনেকেই বলছেন, শুধু প্রস্তুতিতে এই সাড়া মেলে না। সনিয়ার মিছল ঘিরে মঙ্গলবার বারাণসী যে উন্মাদনা দেখিয়েছে, তাকে অনেকাংশেই স্বতস্ফূর্ত বলে মনে করছে কংগ্রেস নেতৃত্ব।
উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন ২০১৭-র গোড়ার দিকে। কিন্তু সনিয়া ২০১৬-র অগস্টেই দলের প্রচারাভিযান আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করে দিলেন গোবলয়ের হৃদয়পুরে। কংগ্রেস কোনও নির্বাচনের জন্যই এত আগে থেকে প্রস্তুতি নেয় না। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনকে যে কংগ্রেস ‘ডু অর ডাই’ লড়াই হিসেবেই নিচ্ছে, তা সনিয়ার এ দিনের রোড শো থেকে অনেকটাই স্পষ্ট।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ঝড়ের মুখে উত্তরপ্রদেশে নাস্তানাবুদ হয়ে গিয়েছিল কংগ্রেস। গাঁধী পরিবারের দীর্ঘ দিনের গড় রায়বরেলী আর অমেঠি ছাড়া বাকি কোনও আসনে জিততে পারেনি কংগ্রেস। রাজ্যের বিধানসভার ৪০৩টি আসনের মধ্যে কংগ্রেসের হাতে এই মুহূর্তে মাত্র ২৮টি। সেই উত্তরপ্রদেশের জন্য কংগ্রেস যে ভাবে ঝাঁপাচ্ছে এবং সনিয়া যে ভাবে মোদীর সঙ্গে সম্মুখ সমরের বার্তা দিলেন, তা দেখে রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশই একটু আশ্চর্য। সনিয়াকে বারাণসীতে স্বাগত জানিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রাজ বব্বর সমর্থকদের উদ্দেশে এ দিন সকালে বলেছিলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে আমাদের একটা মিরাক্ল চাই এবং তা আজ থেকেই শুরু হচ্ছে।’’ রাজ বব্বর আরও বলেছিলেন, উত্তরপ্রদেশের মানুষ বার বারই চমকে দেওয়ার মতো রায় দিয়েছেন। ২০১৪ সালে বিজেপির ফলও একটা মিরাক্লই ছিল বলে তাঁর দাবি। বারাণসীতে সনিয়া গাঁধীর রোড শোয়ের মধ্য দিয়ে সেই মিরাক্ল কংগ্রেসের জন্য শুরু হচ্ছে বলে রাজ বব্বর মঙ্গলবার সকালেই মন্তব্য করেছিলেন। দুপুরে বারাণসী সনিয়াকে যে সাড়া দিল, তাতে রাজ বব্বরের চেয়ে বেশি খুশি আর কে-ই বা হতে পারেন?
আরও পড়ুন: অশান্তির গুজরাতে ইস্তফাই দিলেন আনন্দী
উত্তরপ্রদেশের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বারাণসী। বিজেপি-র জনভিত্তি এই অঞ্চলে খুব মজবুত নয়। লোকসভায় ভাল ফল হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু আগের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ফল এই অঞ্চলে বেশ খারাপই ছিল। সে কথা মাথায় রেখেই পূর্ব উত্তরপ্রদেশ থেকে প্রচার শুরু করলেন কংগ্রেস সভানেত্রী। সন্ধ্যায় কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরেও যাওয়ার কথা সনিয়ার।