সংশোধনী যাচাইয়ে কমিটি কংগ্রেসের

নাগরিকত্ব আইনে সংশোধনী আনলে অসমে তা আশু ও সুদূরপ্রসারী কী প্রভাব ফেলবে তা যাচাই করতে বিশেষ কমিটি গড়ল প্রদেশ কংগ্রেস। কমিটির প্রধান হয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। অন্য দিকে নাগরিকত্ব প্রশ্নে রাজ্য বিজেপি, অগপ ও আসুকে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি তুলেছে অসম পাবলিক ওয়ার্কস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:২৯
Share:

নাগরিকত্ব আইনে সংশোধনী আনলে অসমে তা আশু ও সুদূরপ্রসারী কী প্রভাব ফেলবে তা যাচাই করতে বিশেষ কমিটি গড়ল প্রদেশ কংগ্রেস। কমিটির প্রধান হয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। অন্য দিকে নাগরিকত্ব প্রশ্নে রাজ্য বিজেপি, অগপ ও আসুকে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি তুলেছে অসম পাবলিক ওয়ার্কস।

Advertisement

আজ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রিপুণ বরা জানান, রাজীব গাঁধী অসমবাসীর স্বার্থ সুরক্ষিত করতে যে ঐতিহাসিক চুক্তি করেছিলেন, বর্তমান কেন্দ্র সরকার নাগরিকত্ব আইনে সংশোধনী এনে তার শর্ত ভঙ্গ করছে। ফলে রাজ্যে শান্তি, সম্প্রীতি, অর্থনৈতিক স্থিতাবস্থা বিঘ্নিত হবে। ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব প্রদানের নেতিবাচক প্রভাব কোন কোন ক্ষেত্রে কতটা পড়তে পারে, তা যাচাই করতে প্রদেশ কংগ্রেস ১১ সদস্যের কমিটি তৈরি করেছে। কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছেন তরুণ গগৈ। রিপুণবাবু জানান, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে কমিটি প্রদেশ কংগ্রেসকে তাদের রিপোর্ট জমা দেবে। তারপর তা এআইসিসির কাছে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য পাঠানো হবে। ১২ জন সদস্যের ওই কমিটিতে গগৈ ছাড়াও থাকছেন রিপুনবাবু, সাংসদ সুস্মিতা দেব, প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায়, অর্ধেন্দু দে, রকিবুল হুসেন, ভূমিধর বর্মণ, বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পবনসিংহ ঘাটোয়ার।

অন্য দিকে, নাগরিকপঞ্জি নবীকরণ ও বাংলাদেশী শণাক্তকরণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চালানো অসম পাবলিক ওয়ার্কস এ দিন সাংবাদিক সম্মেলন করে বলে— জাতীয় নায়ক' হিসেবে চিহ্নিত হওয়া মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল গদি বাঁচাতে দিল্লির কাছে মাথা নুইয়ে অসমবাসীর স্বার্থ বিসর্জন দিচ্ছেন। কেন্দ্র ধর্মের ভিত্তিতে রাজ্যে থাকা বাংলাদেশি হিন্দুদের নাগরিকত্ব দিয়ে বিপজ্জনক কাজ করছে। অথচ সর্বানন্দ তথা রাজ্য বিজেপি কোনও প্রতিবাদ করছেন না। সংগঠনের সভাপতি অভিজিৎ শর্মার মতে, রাজ্যে অন্তত ৪১ লক্ষ বাংলাদেশি আছেন। হিন্দু বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব দিলে অসমের ভূমিপুত্রদের অবস্থা ত্রিপুরার ভূমিপুত্রের মতোই হবে। শর্মা তোপ দাগেন অসম চুক্তির স্বাক্ষরকারী দল অগপর প্রতিও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যে দল বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অসম আন্দোলন চালিয়েছিল, তারা কি ভাবে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলতে পারে? প্রফুল্ল মহন্ত ছাড়া এ নিয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। কিন্তু তিনি ক্ষমতাহীন। অগপর দুই মন্ত্রী অতুল বরা ও কেশব মহন্তর অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। না হলে তাঁরা বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত হবেন।’’ আসু এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় তাদের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন তোলে অসম পাবলিক ওয়র্কস।

Advertisement

এ দিন নাগরিকপঞ্জি নবীকরণের নোডাল অফিসার তথা স্বরাষ্ট্র কমিশনার প্রতীক হাজেলা সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, এনআরসির জন্য ৯০৮ কোটি টাকা দরকার। কেন্দ্র যে ৩৩৫ কোটি দিয়েছে তা খরচ হয়ে গিয়েছে। বাকি টাকা সম্ভবত ডিসেম্বরে আসবে। কিন্তু কাজ বন্ধ হবে না। কাজের গতিও কমেনি বলে তাঁর দাবি। তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত বংশপঞ্জি যাচাইয়ের কাজ ৫৮ শতাংশ শেষ। কর্মক্ষেত্র নিয়ে ৬ কোটি আবেদনের মধ্যে চার কোটি ৯০ লক্ষ যাচাই হয়েছে। ভিন রাজ্যে পাঠানো পাঁচ লক্ষ নথির মধ্যে মাত্র ৭ হাজার ফেরত এসেছে। বিদেশে পাঠানো ৪০২টি নথির মধ্যে যাচাই হয়েছে ৯টি। ২৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে কাজের অগ্রগতির এই খতিয়ান জমা দেওয়া হবে। এই অর্থবর্ষের মধ্যে খসড়া নাগরিকপঞ্জি তৈরির চেষ্টা করা হবে। অন্য দিকে, ঢেকিয়াজুলির একটি হোটেল থেকে বিস্তর প্রমাণপত্র ও শংসাপত্রের প্রতিলিপি উদ্ধার হওয়ায় চাঞ্চল্য ছড়ালেও হাজেলা জানান, সেগুলি সরাসরি নাগরিকপঞ্জি সংক্রান্ত নথি নয়। ডেটা এন্ট্রির পরে প্রমাণপত্রের ফেলে দেওয়া প্রতিলিপি মিললেও তাতে নাগরিকপঞ্জির কাজ ব্যাহত হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন