—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
‘‘যাদবরা এখন থেকেই লাঠি ঘোরাতে শুরু করে দিয়েছে। তেজস্বী যাদব ক্ষমতায় এলে কী করবে, কে জানে!’’ বলছিলেন পটনার ডাকবাংলো মোড়ের কাছে দক্ষিণী খাবারের দোকানের পুরনো কর্মী। এক সময়ে নীতীশ কুমার নিজে এই রেস্তরাঁয় ধোসা-ইডলি খেতে আসতেন। ওই কর্মীর কথায়, ‘‘নীতীশের শরীর ভাল যাচ্ছে না। বয়সজনিত অসুস্থতায় আচরণে অসংলগ্নতা রয়েছে। কিন্তু মানুষটা গত বিশ বছর ধরে রাজ্যের জন্য অনেক কাজ করেছেন। সেটা ভুলে গেলে চলবে কেন?”
বৃহস্পতিবার বিহারে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ। বিধানসভার ২৪৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১২১টিতে ভোটগ্রহণ হবে কাল। প্রায় ৩ কোটি ৭৫ লক্ষ মানুষ এই দফায় ভোট দেবেন। পাঁচ বছর আগের বিধানসভা নির্বাচনে এই ১২১টি আসনের মধ্যে আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের মহাগঠবন্ধন ৬৩টি আসনে জিতেছিল। এনডিএ পেয়েছিল ৫৫টি আসন। ফলে মধ্য ও দক্ষিণ বিহারের যে অঞ্চলে বৃহস্পতিবার ভোট, সেখানে এগিয়ে থেকে শুরু করছেন তেজস্বী যাদব।
যাদবরা ক্ষমতায় আসছে ভেবে তাদের বিরুদ্ধে বাকি সব উচ্চবর্ণ, অন্যান্য ওবিসি, ইবিসি এককাট্টা হয়ে যেতে পারে— এমন আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। যেমনটা হয়েছিল হরিয়ানায়। কংগ্রেস ক্ষমতায় ফিরলে সংখ্যাগরিষ্ঠ জাঠদের দাপট বাড়বে ভেবে বাকি সব জাতপাতের মানুষ এককাট্টা হয়ে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন। একই ভাবে বিহারে সব থেকে দাপুটে যাদবদের বিরুদ্ধেও একই রকম ‘পাল্টা মেরুকরণ’ তৈরি হতে পারে বলে রাজনীতিকদের ধারণা।
প্রশান্ত কিশোর এ বার বিহারের ময়দানে ‘এক্স ফ্যাক্টর’। বেকারত্ব থেকে কারখানার অভাব, পরিযায়ী শ্রমিকের সমস্যা থেকে শিক্ষার প্রশ্ন, বহু দিনের ভোটকুশলী ‘পিকে’-র কথায় মানুষের মধ্যে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সাড়া তৈরি হয়েছে। কুড়ি বছরের নীতীশ সরকারের বিরুদ্ধে স্বাভাবিক নিয়মেই অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। প্রশান্ত কিশোরকে তরুণরা ‘নীতীশের বিকল্প’ হিসেবে দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু পিকে নিজে ভোটে না লড়ায় তাঁর জন সুরাজ পার্টিকে ঘিরে তৈরি ঝড় এখন অনেকটাই স্তিমিত। অনেকেই মনে করছেন, প্রশান্ত কিশোরকে আরও সময় দেওয়া যাক। তার উপরে রয়েছে নিজের দলের প্রার্থীদেরই ধরে রাখতে না-পারা।
এর আগে দানাপুর, ব্রহ্মপুর ও গোপালগঞ্জ আসনে দলের প্রার্থীরা হয় নিজেদের নাম তুলে নিয়েছেন, না হলে জন সুরাজ পার্টি থেকে দূরত্ব তৈরি করেছেন। এ বারে, প্রথম দফার ভোটের ২৪ ঘণ্টা আগে জন সুরাজ পার্টির মুঙ্গের বিধানসভা আসনের প্রার্থী সঞ্জয়কুমার সিংহ দল থেকে ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন। তিনি ওই আসনে বিজেপি প্রার্থীকুমার পাণ্ডেকে সমর্থনের কথাও ঘোষণা করলেন।
এখন প্রশ্ন, নীতীশ-জমানার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে যাঁরা কিশোরের দিকে ঝুঁকেছিলেন, তাঁরা কি তেজস্বীকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে চাইবেন? না কি আরও পাঁচ বছর নীতীশের সরকারকেই বেছে নেবেন?
নীতীশের সব থেকে বড় সাফল্য, বিহারের আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি, লালু-জমানার জঙ্গলরাজের অবসান এবং মহিলাদের জন্য জনমুখী প্রকল্প। মোকামায় জন সুরাজের হয়ে প্রচারে নামা পুরনো বাহুবলী নেতা দুলারচাঁদ যাদব খুন হয়ে যাওয়ার পরে জেডিইউ প্রার্থী ‘বাহুবলী’ অনন্ত সিংহ গ্রেফতার হয়েছেন। তার সঙ্গে পটনায় সম্প্রতি একাধিক ব্যবসায়ীর খুনের ঘটনায় নীতীশের ‘আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি’-র সাফল্য ধাক্কা খেয়েছে। আরজেডি-র জঙ্গলরাজ নিয়ে অভিযোগের তিরও ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ভোটের বাজারে ১০ হাজার টাকা ঢোকায় মহিলারা খুশি। এনডিএ জিতলেও বিজেপি আর নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী করবে না বলে প্রচারে নীতীশের পক্ষে ‘সহানুভূতি’-র হাওয়া বইছে।
নীতীশ উচ্চবর্ণ থেকে ওবিসি, ইবিসি অতীব অনগ্রসর, পসমন্দা মুসলিমদের নিয়ে তাঁর ভোটব্যাঙ্কে সামাজিক মেলবন্ধন করেছিলেন। মহাগঠবন্ধন এ বার ‘মাল্লার ছেলে’ মুকেশ সাহনি ও আই পি গুপ্তের মতো ইবিসি নেতারা যোগদেওয়ায় তেজস্বীর আশা, নীতীশের ভোটব্যাঙ্ক ভাঙবে। সঙ্গে সিপিআই-এমএল লিবারেশনও দলিত-ইবিসি ভোট টানবে।
বিহারের এই কাঁটায় কাঁটায় লড়াইয়ে প্রথম দফায় কে এগিয়ে যাবে, বৃহস্পতিবার তারই পরীক্ষা।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে