সুনসান বরাকের রাস্তা। শুক্রবার শিলচরে স্বপন রায়ের তোলা ছবি।
এনআরসি-কে কেন্দ্র করে ডাকা বরাক বন্ধে আজ ব্যাপক সাড়া মিলেছে। উপত্যকার কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার কোনও খবর নেই। সর্বত্র দোকানপাট বন্ধ ছিল, চলেনি যানবাহনও। খোলেনি অফিস-আদালত।
কাছাড়ে জেলাশাসকের কার্যালয়ের সামনে পিকেটিংয়ের দরুন ১০১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯ জন মহিলাও রয়েছেন। বিকেলে অবশ্য সবাইকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। সকাল থেকে দলে দলে সাধারণ মানুষ পিকেটিংয়ের জন্য রাস্তায় নেমে পড়েন। তবে কাউকে কিছু বলার প্রয়োজন পড়েনি। পাড়ার মুদির দোকান কিংবা সব্জির ফেরিওয়ালা—স্বেচ্ছায় সবাই বন্ধ পালনে মেতেছেন আজ। সংস্কৃত বোর্ডের পরীক্ষাকে বন্ধের আওতার বাইরে রাখা হলেও ঝুঁকি নিতে রাজি হয়নি বোর্ড। আজকের পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়।
নাগরিকত্ব সুরক্ষা সংগ্রাম কমিটি ১২ ঘণ্টার এই বনধের আহ্বান জানায়। তাদের সঙ্গে আজ পিকেটিংয়ে দেখা যায় এনআরসি ইস্যুতে আন্দোলনকারী অন্যান্য সংগঠনগুলিকেও। আসাম নাগরিক মঞ্চের কেন্দ্রীয় কার্যবাহী সভাপতি নীলাদ্রী রায় সারাক্ষণ সক্রিয় ছিলেন। পৃথক বরাক দাবি কমিটির শুভদীপ দত্তও ছিলেন পিকেটারদের সঙ্গে। হাইলাকান্দিতে পিকেটিংয়ের জন্য ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সর্বত্র বনধ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত।
এ দিকে, এনআরসি নিয়ে অসমে বর্তমানে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, অধিবক্তা পরিষদ একে গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে অনুরোধ জানিয়েছে। পরিষদের কর্মকর্তারা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ২০১৬ সালে রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন। এই সময়ে এনআরসি ইস্যুতে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলে ভোটের বাক্সে তার প্রভাব পড়বে।
শিলচরে এসে নরেন্দ্র মোদী যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সে কথারও উল্লেখ করেন গেরুয়া আইনজীবীদের এই সংগঠনটি। তাঁরা বলেন, ধর্মীয় কারণে নির্যাতিত হয়ে যাঁরা এ দেশে এসেছেন, তাদের ব্যাপারে বিজেপি-র অবস্থান স্পষ্ট। দিন-তারিখের বাছ-বিচার নেই, সবাইকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু বিজেপির এই তত্ত্ব মানছে না এনআরসি-র বর্তমান প্রক্রিয়া। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে কিছু করা না গেলে নির্যাতনের শিকার হয়ে এ দেশে আসা অনেকের নাম এনআরসি-তে উঠবে না। এর উপর ১৯৭১ সালের বহু আগে থেকে ভারতে বসবাস করছে এমন নাগরিকরাও উপযুক্ত নথিপত্র সংগ্রহে দিশাহারা অবস্থায়। বিশেষ করে চা জনগোষ্ঠীর মানুষ এবং উপজাতিরা সচেতনতার অভাবে কোনও কাগজপত্র ধরে রাখেননি। এনআরসি তাঁদেরও সঙ্কটে ফেলেছে।
অধিবক্তা পরিষদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সম্পাদক শান্তনু নায়েক বলেন, নাগরিকত্ব ইস্যুতে তাঁদের তত্ত্বাবধানে স্বজন ও বিমলাংশু রায় ফাউন্ডেশন নামে দুটি এনজিও সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেছে। কেন্দ্র এ পর্যন্ত এই মামলায় তাদের হলফনামা দাখিল করেনি। মোদী-সহ বিজেপি নেতাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে সংসদেও এ বিষয়ে বিল আনা হয়নি। নেই অধ্যাদেশের উদ্যোগও। ২০১২ সালের ওই রিট পিটিশনের উপর ৪ অগস্ট সুপ্রিম কোর্টে শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। তাঁদের অনুরোধ, এর আগে যেন কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আদালতে হলফনামা দিয়ে তাদের অবস্থান জানানো হয়। সেই সঙ্গে তাঁরা আর্জি জানান, এনআরসি-র আবেদনপত্র জমার তারিখ যেন ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ সব ব্যাপারে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি হিসেবে অমিত শাহের হস্তক্ষেপ চায় অধিবক্তা পরিষদ।