শরীরের বাধা কাটিয়ে মেধা তালিকায় তিথি

হঠাৎ করেই সমস্যা দেখা দিল শরীরে। উদ্বেগে দৌড়ঝাঁপ শুরু। প্রথমে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, পরে এ শহর-ও শহর। এই করে নষ্ট হয়ে যায় নবম শ্রেণির প্রায় সাত মাস। গত বছর মাত্র ৫২ দিন ক্লাশ করেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চমকে দিয়েছিল সে। আজ বিস্মিত গোটা রাজ্য। সমস্ত শারীরিক সমস্যার কথা ভুলে মেধা তালিকায় নিজের নাম তুলে নিল হোলিক্রশ স্কুলের তিথি চৌধুরী। ৫৬৬ নম্বর পেয়ে কুড়ি নম্বরে রয়েছে তিথি।

Advertisement

উত্তম সাহা

শিলচর শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৬ ০২:৫৩
Share:

হঠাৎ করেই সমস্যা দেখা দিল শরীরে। উদ্বেগে দৌড়ঝাঁপ শুরু। প্রথমে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, পরে এ শহর-ও শহর। এই করে নষ্ট হয়ে যায় নবম শ্রেণির প্রায় সাত মাস। গত বছর মাত্র ৫২ দিন ক্লাশ করেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চমকে দিয়েছিল সে। আজ বিস্মিত গোটা রাজ্য। সমস্ত শারীরিক সমস্যার কথা ভুলে মেধা তালিকায় নিজের নাম তুলে নিল হোলিক্রশ স্কুলের তিথি চৌধুরী। ৫৬৬ নম্বর পেয়ে কুড়ি নম্বরে রয়েছে তিথি।

Advertisement

মেয়ের এমন মানসিক শক্তিতে গর্বিত গুরুচরণ কলেজের ভূতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক চন্দন পালচৌধুরী ও পাবলিক হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের অঙ্কের শিক্ষিকা দেবারতি কর। কী হতে চায়, এমন প্রশ্নে সে সারাক্ষণ গল্পে আগ্রহী। প্রথমে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, পরে ইঞ্জিনিয়ারিং লাইনে শিক্ষাবিদ। সব ভাবনা ব্যাখ্যা করে বোঝাতে সে রাজি। কিন্তু কেউ সহানুভূতি দেখাতে গেলেই প্রচণ্ড বিরক্তি তিথির। তার সোজা কথা, মাধ্যমিকে বসতে হলে পড়তে হবে। এর সঙ্গে অন্য কোনও কথা বলে লাভ নেই।

মা-বাবারও একই মত। দেবারতিদেবীর বক্তব্য, শরীরটা ভাল থাকলে আরও ভাল হতো, ওসব কথা যুক্তিহীন। বরং বলতে পারি, আমরা এমনটাই আশা করছিলাম। মেয়ে আমাদের খুশি করেছে। তিথির কথায়, মা-বাবা, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং স্কুলকে গর্বিত করতে পেরে ভাল লাগছে।

Advertisement

তাঁর সাফল্যে খুশি হোলিক্রশ স্কুলের অধ্যক্ষা বিএস ক্যারনও। তিনি জানান, এই স্কুলে এই বছর মোট ৫ জন স্থানাধিকারী রয়েছে। পৌলমী দাম (একাদশ), অপ্রতীম চৌধুরী (পঞ্চদশ), ঋত্বিকা পাল (উনবিংশ), অন্বেষা দাস (উনবিংশ) ও তিথি চৌধুরী (বিংশ)। এর মধ্যে তিথির ব্যাপারটা তাঁকে ভিন্ন আনন্দ দেয়।

মা-বাবা দুজনই ডাক্তার বলে মেডিক্যালেই আগ্রহ অন্বেষার। ডাক্তার হতে চায় ঋত্বিকাও। পৌলমী ও অপ্রতীমের লক্ষ্য, মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করবে।

বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায় শিলচর কলেজিয়েট স্কুলের স্থানাধিকারীরাও। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পৃথ্বিরাজ দের (ষষ্ঠ)। সন্দীপন পালের (নবম) লক্ষ্য মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। বিক্রান্ত দে (নবম) পড়বে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে। তাদের মধ্যে ব্যতিক্রমী প্রজ্ঞা নাথ (উনবিংশ)। সাধারণ গণিতে রাজ্য সেরাদের দলে থেকেও কলা বিভাগে ভর্তি হবে, জানিয়ে দিয়েছে সে। বাবা পূর্ত বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট এগিজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার। দাদাও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। এরপরও তাঁর ইচ্ছে, শিক্ষকতা করবে। আর সে জন্যই সে কলাবিভাগ বেছে নিতে চায়। প্রজ্ঞার বক্তব্য, বিজ্ঞান বা বাণিজ্য শাখায় পড়েও শিক্ষকতা করা যায়। কিন্তু ওই লাইনে পড়লেই পরবর্তী সময়ে অন্য কোনও পেশার জন্য চাপ সৃষ্টি হতে পারে। তাই গোড়াতেই সেই আশঙ্কায় জল ঢেলে দিতে চায় সে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন