গ্রাফিক: শোভিক দেবনাথ
দেশের সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ গোপন নথির ভিত্তিতে রাফাল মামলার রায়ের পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হচ্ছে, যা দেশের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক। এর ফলে এই নথি চলে যেতে পারে দেশের শত্রুদের হাতে— এই যুক্তিতেই সুপ্রিম কোর্টে আবেদনকারীদের দাবি নাকচ করার আর্জি জানিয়েছিল কেন্দ্র। তার প্রেক্ষিতে সওয়াল করতে গিয়ে আজ শীর্ষ আদালতে আবেদনকারীদের তরফে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ দিলেন পাল্টা যুক্তি। তাঁর কথায়, ‘‘এই নথি ফাঁস হওয়ার পর তা দেখে নিয়েছে সবাই। আর কোনও গোপনীয়তা নেই। অথচ কেন্দ্র গোপনীয়তার যুক্তিতে আদালতকে এই নথি দেখানো যাবে না বলছে, যার কোনও ভিত্তি নেই।’’
কোন নথি আদালতে দেখানো যাবে, আর কোন নথি দেখানো যাবে না— এই নিয়েই বৃহস্পতিবার সরগরম ছিল শীর্ষ আদালত চত্বর। সেই চর্চায় অংশ নেয় দেশের শীর্ষ আদালতও। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সেই বিতর্কের প্রেক্ষিতে জানায়, ‘‘তথ্যের অধিকার আইন চালু হওয়ার পর থেকেই সরকারি নথি তার পবিত্রতা হারিয়েছে। দুর্নীতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন ঘটনার ক্ষেত্রে সংবেদনশীল সংস্থাগুলিও তাদের গোপন নথি সামনে আনতে বাধ্য হয় এই আইনের আওতায়।’’ এর পরই প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ কেন্দ্রকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘আপনাদের যুক্তি অনুযায়ী এই সব নথি দেশের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাই আদালত এর মধ্যে ঢুকতে পারবে না। তা হলে আমাদের বিষয়টি তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে হবে।’’
আবেদনকারীরা যে তথ্যের ভিত্তিতে রাফাল মামলার রায়ের পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন, তাতে কোথাও সরকারি গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে কি না, তা নিয়ে কোনও রায় এ দিন দেয়নি শীর্ষ আদালত।
আরও পড়ুন: ‘আপনি যদি এতই উদার, মাসুদকে ভারতের হাতে তুলে দিন’, ইমরানকে কটাক্ষ সুষমার
তাঁদের জমা দেওয়া কোনও তথ্য দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে স্পর্শকাতর কি না, সেই প্রশ্নের জবাবে আবেদনকারীদের তরফে প্রশান্ত ভূষণ জানান, ‘‘আদালতে এমন কোনও তথ্য জমা দেওয়া হয়নি, যাতে দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।’’ এই নিয়ে তিনি মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের গোপন নথি ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর একটি মামলার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘‘যে নথি ইতিমধ্যেই জনসমক্ষে চলে এসেছে, তা নিয়ে কেউ গোপনীয়তার দাবি করতে পারে না।’’
আরও পড়ুন: ‘দুর্বল’ প্রধানমন্ত্রীর জন্যই মাসুদ বিপর্যয়, তোপ রাহুলের, নেহরুর উপর দায় চাপাল বিজেপি
গত ডিসেম্বরেই একটি রায়ে রাফাল চুক্তিতে কেন্দ্রের ভূমিকাকে ক্লিন চিট দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সিবিআই তদন্তের দাবিও খারিজ করেছিল শীর্ষ আদালত। সেই রায়ের পুনর্বিবেচনার দাবি নিয়েই এখন চলছে শুনানি। আবেদনকারীদের দাবি, রাফাল চুক্তিতে অনিল অম্বানীর সংস্থাকে সুবিধা করে দিতেই বেশি দাম দিয়ে যুদ্ধবিমান কিনেছিল কেন্দ্র। রাফাল যুদ্ধবিমান কিনতে ঠিক কত টাকা খরচ হয়েছে, নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে তা এখনও প্রকাশ্যে আনেনি কেন্দ্র। জট বাড়ছে সেই কারণেই।