—ফাইল ছবি।
বিচারপতি খন্না বলেন, ‘‘দুটো বিষয়ে বলার রয়েছে। আমি কোনও রায় বা অন্তর্বর্তী নির্দেশ স্থগিত রাখতে চাই না। মামলাটি সঠিক দিনেই শোনা উচিত। মামলাটা আমার হাতে থাকবে না। আমরা মামলাটি বিচারপতি বিআর গবইয়ের বেঞ্চে পাঠাচ্ছি।’’
সোমবার ওয়াকফ মামলা শুনলেন না সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না। মামলাটি পাঠানো হল শীর্ষ আদালতের পরবর্তী প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে। পরবর্তী শুনানি ১৫ মে।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হিসাবে বিচারপতি বিআর গবইকে বেছেছেন প্রধান বিচারপতি খন্না। উত্তরাধিকারী হিসাবে বিচারপতি গবইয়ের নাম প্রস্তাব আকারে তিনি আইন মন্ত্রকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আগামী ১৪ মে নতুন প্রধান বিচারপতি শপথ নেবেন।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসাবে বিচারপতি খন্নার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৩ মে। ওই দিন তিনি অবসর নেবেন।
নিয়ম অনুযায়ী, দেশের প্রধান বিচারপতি তাঁর উত্তরাধিকারী হিসাবে সুপ্রিম কোর্টের বয়োজ্যেষ্ঠ বিচারপতির নাম প্রস্তাব করেন। সেই অনুযায়ী আগেই কেন্দ্রের তরফে বিচারপতি খন্নার কাছে পরবর্তী প্রধান বিচারপতির নাম প্রস্তাবের জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে অনুরোধ করা হয়েছিল। শপথগ্রহণের পর বিচারপতি গবই হবেন দেশের ৫২তম প্রধান বিচারপতি।
তবে প্রধান বিচারপতির চেয়ারে বিচারপতি গবইয়ের মেয়াদও খুব বেশি দিনের নয়। ১৪ মে শপথগ্রহণের পর থেকে ছ’মাস তিনি ওই পদে থাকতে পারবেন। তার পর তিনিও অবসর নেবেন। বিচারপতি গবইয়ের অবসর ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে।
মহারাষ্ট্রের অমরাবতীর বাসিন্দা বিচারপতি গবই বম্বে হাই কোর্টে বিচারপতি হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন ২০০৩ সালে। দীর্ঘ ১৫ বছর সেখানে কাজ করেছেন। তার পর ২০১৯ সালের ২৪ মে তাঁকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। তাঁর বাবা আরএস গবই সমাজকর্মী ছিলেন। বিহার এবং কেরলের রাজ্যপাল হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। প্রধান বিচারপতি হিসাবে শপথ নিলে বিচারপতি গবই হবেন দেশের দ্বিতীয় তফসিলি জাতিভুক্ত প্রধান বিচারপতি। দেশের প্রথম তফসিলি জাতিভুক্ত প্রধান বিচারপতি ছিলেন কেরলের বিচারপতি কেজি বালকৃষ্ণাণ। তিনি ২০১০ সালে অবসর নেন।
গত ১৭ এপ্রিল এই মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, ৫ মে পর্যন্ত ১৯৯৫ সালের আইনে নথিভুক্ত ওয়াকফ সম্পত্তিতে কোনও বদল ঘটানো যাবে না। নিয়োগ করা যাবে না কেন্দ্রীয় ওয়াকফ বোর্ড বা পর্ষদেও। পাশাপাশি, কেন্দ্রকে সাত দিনের মধ্যে নিজেদের বক্তব্য জানানোর নির্দেশও দেওয়া হয়। এর পরেই শীর্ষ আদালতে প্রাথমিক হলফনামা জমা করে কেন্দ্র। তাতে জানানো হয়, ওয়াকফ আইনের কোনও বিধানের উপর কোনও রকমের স্থগিতাদেশের বিরোধিতা করবে কেন্দ্র। কেন বিরোধিতা করা হবে, তার যুক্তিও দেয় কেন্দ্র। তাদের দাবি, সংসদের যৌথ কমিটির সুপারিশের পরেই সংশোধিত ওয়াকফ আইন পাশ করা হয়েছিল। ফলে এই স্থায়ী আইনের উপর স্থগিতাদেশ জারি করার ক্ষমতা আদালতের নেই। যদি সংসদ-প্রণীত কোনও আইনের উপর এ ভাবে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়, তা হলে তা ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্টের সমতুল্য! অন্য দিক, ওয়াকফ আইন নিয়ে ‘ইচ্ছাকৃত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বিভ্রান্তি’ ছড়ানো হচ্ছে বলেও সওয়াল করে কেন্দ্র।
সংশোধিত ওয়াকফ আইনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টে একগুচ্ছ মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় গত ২৫ এপ্রিল নিজেদের বক্তব্য জানিয়ে হলফনামা জমা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার ওই সংক্রান্ত একগুচ্ছ আবেদনের শুনানি রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অল ইন্ডিয়া মজলিশ-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (মিম) প্রধান তথা হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দায়ের করা আবেদনটিও।