শাশুড়ি-বউমার ঝগড়া মেটালেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা

বিদেশমন্ত্রিত্বের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে এ এক অভিনব সমস্যা সমাধান! শ্বাশুড়ি-বৌমার ঝগড়া নতুন কিছু নয়, চিরকালীন বাস্তব। আর সেই বিবাদকে নেভাতে (বা উসকে দিতে) আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, ননদ, জা-এর ভূমিকাই সমাজপ্রসিদ্ধ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৬ ২০:১১
Share:

বিদেশমন্ত্রিত্বের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে এ এক অভিনব সমস্যা সমাধান!

Advertisement

শ্বাশুড়ি-বৌমার ঝগড়া নতুন কিছু নয়, চিরকালীন বাস্তব। আর সেই বিবাদকে নেভাতে (বা উসকে দিতে) আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, ননদ, জা-এর ভূমিকাই সমাজপ্রসিদ্ধ।

কিন্তু এই প্রথমবার তাতে নাক গলালো বিদেশমন্ত্রক! খোলসা করে বলতে গেলে নাক গলালেন খোদ বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ-- যাঁর ‘টুইটার-পরিষেবা’ ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এবার তারই নবতম সংস্করণ দেখা গেল উত্তরপ্রদেশের চাঁন্দেল পরিবারের গৃহবিবাদে। রুশ গৃহবধূ ওলগা এফিমেঙ্কোভা এবং শ্বাশুড়ি নির্মলা চান্দেলের বিবাদ মিটিয়ে সাস-বহুকে আলিঙ্গনে বাঁধলেন সুষমা স্বরাজ!

Advertisement

ঘটনা হল, ব্যবসায় ধাক্কা খেয়ে সর্বস্বান্ত বিক্রন্ত সিংহ চাঁদেল উপায়ন্তর না দেখে তাঁর স্ত্রী (ওলগা) ও কন্যাকে তাঁদের নিবাস গোয়া (২০১১ থেকে এখানেই সপত্নীক থাকতেন বিক্রন্ত) ছেড়ে পৈতৃক ভিটে আগরায় পাঠিয়ে দেন। কিন্তু বিদেশিনী বৌমাকে কিছুতেই মেনে নেননি শাশুড়ি, বিক্রন্তের মা নির্মলা। অভিযোগ, ওলগার উপর অত্যাচার, দশ লাখ টাকা পণ চাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। তার পর বাড়ি থেকে কার্যত বের করে দেওয়া হয় তাঁদের। সোজা বলে দেওয়া হয়, ওই ভিটে-সহ সব সম্পত্তি নির্মলা তাঁর মেয়েকে দিয়ে দিয়েছেন। ফলে এখানে ওলগাদের ঠাঁই হবে না।

এই জটিল পারিবারিক পরিস্থিতিতে অনেক মেয়েই রণে ভঙ্গ দিতেন। কিন্তু রুশ রক্ত প্রবাহিত ওলগার শিরায়। তিনি শ্বশুর বাড়ির সামনে অনশন ধর্নায় বসলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যা গতকাল নজরে পড়ল বিদেশমন্ত্রীর। সময় নষ্ট না-করে ভারত-রাশিয়া মৈত্রীর সুতো গাঁথলেন সুষমা। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবকে ট্যাগ করে তিনি একটি টুইট করলেন। ওলগার রিপোর্টটির সঙ্গে দিয়ে সুষমা স্বরাজ গতকাল রাতে লেখেন, ‘অখিলেশজি, এই ভদ্রমহিলাকে দয়া করে সাহায্য করুন।’’ অখিলেশও অবশ্য সুষমার আবেদনে দলমতের বিচার করেননি। তাঁর নির্দেশে আগরা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তা এবং পুলিশ অফিসারেরা পৌঁছে যান চান্দেলের বাড়ি। ওলগাকে নিরস্ত করেন ধর্না থেকে এবং পরিবারের সঙ্গে চার ঘণ্টা সময় কাটিয়ে মন নরম করেন নির্মলার। এর পর হাসিমুখে ছবিও তুলতে দেখা গিয়েছে শাশুড়ি বৌকে! অখিলেশ নিজেও সেই ছবি রিটুইট করে বিদেশমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছেন, ওলগা শ্বশুরবাড়িতে শান্তিপূর্ণভাবেই ঠাঁই পেয়েছেন। বাড়ির একটা অংশও তাঁরা ব্যবহার করতে পারবেন।

সুষমা মন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই টুইটারকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষদের অভিযোগ শোনা, দ্রুত তার সমাধানের জন্য সতীর্থদের নির্দেশ দেওয়ার কাজটি নিরন্তর করে চলেছেন। বিষয়টি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে কিছু দিন আগেই এক ব্যক্তি টুইট করে তাঁর রেফ্রিজারেটর সেট–এর সমস্যা নিয়ে সমাধান চেয়ে বসেছিলেন বিদেশমন্ত্রীর কাছে! আজ আগরার ঘটনাটির পাশাপাশি মণিপুরের একটি মেয়ের অভিযোগ ফেসবুকের মাধ্যমে চোখে পড়ায়, তৎক্ষণাৎ সক্রিয় হয়েছেন সুষমা। মনিকা খানজেম্বাম নামের ওই তরুণি ফেসবুকে পোস্ট করে জানিয়েছেন, নয়াদিল্লির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিবাসন ডেস্কের এক অফিসার তাঁকে হেনস্তা করেছেন। বারবার তাঁর নাগরিকত্ব জানতে চাওয়া হয়েছে, কেননা তিনি নাকি ভারতীয়দের মত দেখতে নন! সুষমা পোস্টটি পড়ে মনিকাকে টুইট করে জানান, অভিবাসন মন্ত্রক যদিও তাঁর মন্ত্রকে পড়ে না, কিন্তু তিনি বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানাবেন। উত্তরপূর্বাঞ্চলের স্পর্শকাতরতার দিকটির কথা মাথায় রেখে তিনি দ্রুত এর নিষ্পত্তি চেয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন