মাফিয়াদের সঙ্গে পাঞ্জা ঠাকুরবাড়ির বংশধরের

বনভূমি কিংবা আদিবাসীদের জমির উপরে মাফিয়াদের হাত পড়েছিল আগেই। এ বার ঝাড়খণ্ডের জমি মাফিয়াদের নজরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বংশধরের জমিও! অভিযোগ, খুনের হুমকির পাশাপাশি রাঁচির দীপাটোলির ওই পাঁচ একর জমি হাতিয়ে নিতে ‘ঠাকুর’ পদবীধারী এক ব্যক্তিকেও হাত করেছে মাফিয়ারা।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

রাঁচি শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩৮
Share:

রাঁচির এই বাড়ির উপরেই মাফিয়াদের নজর। — নিজস্ব চিত্র

বনভূমি কিংবা আদিবাসীদের জমির উপরে মাফিয়াদের হাত পড়েছিল আগেই। এ বার ঝাড়খণ্ডের জমি মাফিয়াদের নজরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বংশধরের জমিও! অভিযোগ, খুনের হুমকির পাশাপাশি রাঁচির দীপাটোলির ওই পাঁচ একর জমি হাতিয়ে নিতে ‘ঠাকুর’ পদবীধারী এক ব্যক্তিকেও হাত করেছে মাফিয়ারা।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, জমি বাঁচাতে কবিগুরুর বংশধর হিমেন্দ্রনাথ ঠাকুর ঝাড়খণ্ড পুলিশের ডিজির শরণাপন্ন হয়েছেন। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। রাঁচির এসএসপি কুলদীপ দ্বিবেদী এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘প্রোমোটাররা ওই বাড়ি কব্জা করতে চাইছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

রাঁচির হাজারিবাগ রোডের দীপাটোলিতে পাঁচ একর জমির ওপর রয়েছে ‘হিতাবাস’। একতলা বাংলো বাড়ির চারপাশে বিশাল বাগান। বাড়ির মালিক হিমেন্দ্রনাথ ঠাকুর জানান, তিনি রবি ঠাকুরের বংশধর। তবে কবিগুরু কখনও রাঁচির এই বাড়িতে এসেছিলেন কি না, তা অবশ্য জানা যায় না। তেমন কোনও দাবি করেননি তাঁর বংশধরও। হিমেন্দ্রনাথ জানান, গত শতাব্দীর গোড়ার দিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা হেমেন্দ্রনাথের ছেলে হিতেন্দ্রনাথ রাঁচিতে এই বাড়ি তৈরি করেন। হিতেন্দ্রনাথের ছেলে হৃদীন্দ্রনাথের নাতি হন তিনি। ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক্যালস লিমিটেডের অতিরিক্ত জেনারেল ম্যানেজার পদে কর্মরত হিমেন্দ্রনাথ জানান, ছোটবেলায় তাঁর বাবার সঙ্গে রাঁচির এই বাড়িতে আসতেন তিনি। পরে পরিবার নিয়েও এসেছেন। কিন্তু জমি মাফিয়াদের উৎপাতে ইদানীং একাই আসেন তিনি।

Advertisement

হুমকির আতঙ্ক যে কতটা তা ‘হিতাবাস’-এর গেটে পৌঁছতেই বোঝা গেল। নিরাপত্তারক্ষীদের এক প্রস্ত জেরার পরে বেরিয়ে এলেন হিমেন্দ্রনাথ। পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখে ভিতরে নিয়ে গেলেন তিনি। হিমেন্দ্রনাথের অভিযোগ, ২০০১ সাল থেকে এই সমস্যার শুরু। প্রথমে প্রোমোটারেরা মোটা টাকার প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল। তাতে রাজি না হওয়ায় শুরু হয় হুমকি। তাঁর দাবি, এমনকী বাড়িতে ঢুকে তাঁর স্ত্রীর মাথায় বন্দুকও ঠেকিয়েছিল গুন্ডারা। ২০০৫ ও ২০১০ সালে তাঁর জমির সামনে নতুন করে গেটও তুলে দিয়েছিল জমি কারবারিরা। পুলিশের হস্তক্ষেপে তা ভেঙে ফেলা হয়। ২০১৩ সালে বাংলোর কেয়ারটেকারকে মারধর করার জন্য কয়েক জন গুন্ডাকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। তার

পরেও হুমকি কমেনি। ‘‘এই জমি বাঁচানোর জন্যই অফিস থেকে মাঝেমধ্যে ছুটি নিয়ে এখানে চলে আসি,’’ বলেন তিনি।

রাঁচি জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, সরকারি খাতায় হিতাবাসের মালিকানা ও কর সংক্রান্ত কাগজপত্র হৃদীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে রয়েছে। হিমেন্দ্রনাথ জানান, তিনি জমিবাড়ির কর দেন। কিন্তু কর জমা দেওয়ার কিছু ভুয়ো কাগজ বানিয়ে ‘ঠাকুর’ পদবীধারী লোকটিকে হিতাবাসের মালিক প্রতিপন্ন করতে চাইছে মাফিয়ারা। ‘‘অথচ ওই লোকটির সঙ্গে আমাদের পরিবারের কোনও সম্পর্কই নেই।’’ ঠাকুর পদবীধারী যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভুয়ো নথি তৈরির অভিযোগ উঠেছে, তার নাম অবশ্য প্রকাশ করেনি পুলিশ। প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। ওই ব্যক্তি সত্যিই ঠাকুর পরিবারের কেউ হন কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে প্রাথমিক তদন্তে এই ঘটনার সঙ্গে পারিবারিক বিবাদের বদলে জমি কারবারিদের যোগসূত্রই উঠে এসেছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন