গোয়েন্দা সূত্রে খবরটা এসেছিল স্বাধীনতা দিবসের ঠিক আগেই। ২৬/১১-র মুম্বই-হামলার ছকে নয়াদিল্লির সাউথ ব্লকেও হামলা চালাতে পারে পাকিস্তানি সহায়তাপ্রাপ্ত জঙ্গিরা। এই সাউথ ব্লকেই দফতর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর।
তার পরেই আর দেরি করেননি নিরাপত্তা সংস্থার কর্তারা। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নিরাপত্তা ঢেলে সাজা হচ্ছে। গোয়েন্দা কর্তারা মনে করছেন, রাইসিনা হিলসের উপর রাষ্ট্রপতি ভবনের নিরাপত্তা যথেষ্ট মজবুত হলেও সাউথ বা নর্থ ব্লকের নিরাপত্তায় এখনও অনেক ফাঁক রয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এসপিজি, এনএসএ এবং মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স-এর কর্তারা এক সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সাউথ ব্লকের পিছনে গোটা এলাকা লোহার বেড়া গিয়ে ঘিরে দেওয়া হবে। উঁচু থেকে নজরদারির জন্য তৈরি হবে সেন্ট্রি-পোস্ট। ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা গাড়ি বা মানুষের গতিবিধির উপর নজর রাখা হবে। মূল রাস্তা থেকে সাউথ ব্লকের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলেই পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়া হবে। তার পর শরীরের তল্লাশি চালিয়ে তবেই সাউথ ব্লকে যেতে দেওয়া হবে। সরকারি সূত্রের খবর, এ বিষয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে।
ভিভিআইপি-দের নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্তার কথায়, এখন যে কেউ ইচ্ছে করলেই গাড়ি নিয়ে সোজা প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সদর দরজা পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারেন। ‘ইন্ডিয়া গেট’ থেকে ‘রাজপথ’ ধরে রাইসিনা হিলসে উঠে সাউথ ব্লকের সামনে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। আবার সাউথ ব্লকের পিছন দিয়ে ডালহৌসি রোড ধরেও যে কেউ সাউথ ব্লকের কাছে চলে যেতে পারেন। ওই এলাকায় পুলিশ ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দা মোতায়েন থাকলেও সবার উপর নজরদারি সম্ভব নয়। সরকারি কর্মচারী ও পর্যটকরাও অনেক সময় সাউথ ব্লকের পিছনের মাঠে ঘোরাফেরা করেন। ওই কর্তা জানান, সেই কারণেই সাউথ ব্লক ঘিরে একটি ‘সারভাইল্যান্স অ্যান্ড অ্যাক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম’ তৈরি করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই এই কাজ শুরু করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতর। সাউথ ব্লকের সামনে, রাষ্ট্রপতি ভবনের দোরগোড়ায় লোহার বেড়া বসানো সম্ভব নয়। তাই আপাতত পিছন দিকেই বেড়া তোলা হচ্ছে। আরও বেশি সংখ্যায় ‘স্নাইপার’ মোতায়েন করা হবে সাউথ ব্লকের ছাদে। সাউথ
ব্লকে প্রধানমন্ত্রীর দফতর ছাড়াও রয়েছে বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। রাস্তার উল্টো দিকে নর্থ ব্লকে রয়েছে অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সাউথ ব্লকের পর নর্থ ব্লকেরও একই ভাবে নিরাপত্তা বাড়ানো হবে।
হঠাৎ এই নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ল কেন?
গোয়েন্দা কর্তাদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই নরেন্দ্র মোদী পাক সহায়তায় পুষ্ট জঙ্গিদের নিশানায় রয়েছেন। স্বাধীনতা দিবসের ঠিক আগে গোয়েন্দা সূত্রে খবর আসে, আইএসআই ও আল-কায়দার ঘনিষ্ঠ জঙ্গিরা মুম্বইয়ের ২৬/১১-র ধাঁচে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে হামলা চালাতে পারে। একেবারে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সামনে হামলা বা বিস্ফোরণ ঘটানোর ছক কষছে জঙ্গিরা। তখনই দিল্লি পুলিশ, এসপিজি এবং এনএসজি-কে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া বিজেপির দুই শীর্ষনেতাও জঙ্গি-নিশানায় রয়েছেন বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে জানানো হয়।
পঞ্জাবের শিখ জঙ্গি সংগঠনগুলিকে নিয়েও চিন্তা বেড়েছে গোয়েন্দাদের। একটি গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, খালিস্তান টাইগার ফোর্স-এর জগতার সিংহ তারা এবং ইন্টারন্যাশনাল শিখ ইয়ুথ ফেডারেশন-এর লখবীর সিংহ হাত মিলিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের উপর হামলার ছক কষছে। এ জন্য সীমান্তের ও পার থেকে বিস্ফোরক পাচারেরও চেষ্টা করছে তারা। বস্তুত লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদীর প্রচারের সময়ও এরা হামলার ছক কষেছিল। কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হয়নি। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ১০-১৫ জনের একটি খালিস্তানি জঙ্গি গোষ্ঠী মোদী, বিজেপি ও সঙ্ঘ-পরিবারের শীর্ষ নেতাদের উপর হামলার চেষ্টা করছে।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরের পাশাপাশি তাই প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ের নিরাপত্তা বাড়ানোর কথাও ভাবা হচ্ছে। সরকারি সূত্রের খবর, মোদী নিজে এখনও সেই বিষয়ে রাজি হননি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিংহ যে রকম বুলেটপ্রুফ বিএমডব্লিউ গাড়ি ব্যবহার করতেন, মোদীও সেই গাড়িই ব্যবহার করছেন। কনভয়ের গাড়ির সংখ্যা বাড়ানোয় তাঁর আপত্তি রয়েছে। এসপিজি বলছে, গাড়ির সংখ্যা না বাড়ানো হলেও কনভয়ের পুরনো গাড়িগুলি বদলে নতুন গাড়ি আনা হোক।