রাঁচী শিল্প সম্মেলন

ঝাড়খণ্ডে লগ্নি টানতে টাটারাই বড় হাতিয়ার

‘লুক ইস্ট’ নীতির যাবতীয় আলো কেড়ে নিতে চলেছে খনিজ-সমৃদ্ধ ঝাড়খণ্ড। এবং এই কাজে তাদের সব থেকে বড় সহায়ক হতে চলেছে টাটা গোষ্ঠী। কার্যত টাটাদের সামনে রেখেই আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি রাঁচীতে শুরু হচ্ছে ‘ঝাড়খণ্ড গ্লোবাল ইনভেসটর্স সামিট’।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

রাঁচী শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:২৩
Share:

‘লুক ইস্ট’ নীতির যাবতীয় আলো কেড়ে নিতে চলেছে খনিজ-সমৃদ্ধ ঝাড়খণ্ড। এবং এই কাজে তাদের সব থেকে বড় সহায়ক হতে চলেছে টাটা গোষ্ঠী। কার্যত টাটাদের সামনে রেখেই আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি রাঁচীতে শুরু হচ্ছে ‘ঝাড়খণ্ড গ্লোবাল ইনভেসটর্স সামিট’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে টাটা গোষ্ঠীর এমেরিটাস চেয়ারম্যান রতন টাটা হাজির থাকার কথা জানানোর পর স্বস্তিতে রাজ্য প্রশাসন। দু’দিনের এই সম্মেলনের লক্ষ্য, রাজ্যের জন্য কমপক্ষে ৩ লক্ষ ২২ হাজার কোটি টাকার লগ্নি নিশ্চিত করা।

Advertisement

অবিভক্ত বিহারের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ লগ্নি টানতে প্রথম বার যখন সিঙ্গাপুরে যান, তখন তাঁর ঘোষিত স্লোগান ছিল একটাই— ‘যে কারণে জামশেদজি টাটা বিহারে লগ্নি করতে এসেছিলেন, সে কারণেই আপনারা এখানে আসুন।’ তবে এখন সে বিহারও নেই, সে লালুপ্রসাদও নেই। দ্বিধাবিভক্ত বিহার থেকে জন্ম হয়েছে ঝাড়খণ্ডের। খনিজ-সমৃদ্ধি এখন ঝাড়খণ্ডের সব থেকে বড় হাতিয়ার। তেরো বছর আগে জন্ম হওয়া রাজ্যটিতে এত দিনে রাজনৈতিক স্থিতাবস্থাও এসেছে। ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। কেন্দ্রেও ক্ষমতায় তারা। এ বার পরিকল্পিত ভাবেই রাজ্যে লগ্নি টানতে এগিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস।

গত প্রায় ছ’মাসের প্রস্তুতি রয়েছে এই শিল্প-সম্মেলনের পিছনে। মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা-সহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে গিয়ে রোড-শো করেছেন। কেন তাঁদের গন্তব্য ঝাড়খণ্ড হওয়া উচিত, তা লগ্নিকারীদের বুঝিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত দেশের ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্যাপ্টেন’-দের যে তাঁরা এই সম্মেলনে টেনে আনতে পারছেন তাতে রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তারা উৎসাহিত। মুখ্যসচিব রাজবালা বর্মা জানিয়ে দিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত শিল্প সম্মেলনে হাজির থাকার ব্যাপারে যাঁরা সবুজ সংকেত দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে রতন টাটা ছাড়াও রয়েছেন কুমারমঙ্গলম বিড়লা, এসার গোষ্ঠীর শশী রুইয়া, প্রশান্ত রুইয়া, জিন্দল গোষ্ঠীর তরফে নবীন জিন্দল, সজ্জন জিন্দল, টাটা স্টিলের তরফে টিভি নরেন্দ্র-সহ দেশের তাবড় শিল্পপতিরা। অম্বানী গোষ্ঠীর মুকেশ ও অনিল অম্বানীও এই সম্মেলনে হাজির থাকবেন বলেই তাঁদের আশা।

Advertisement

ঝাড়খণ্ডে এত বড় শিল্প সম্মেলন আগে হয়নি বলেই দাবি মুখ্যসচিবের। শিল্প অধিকর্তা রবিকুমার জানান: জাপান, মঙ্গোলিয়া, চেক রিপাবলিক ও তিউনিশিয়া এই সামিটের কান্ট্রি পার্টনার হিসেবে থাকছে। এই চারটি দেশের রাষ্ট্রদূতরাও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন। এ ছাড়াও থাকছেন আমেরিকা, কানাডা, ইতালি, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, সিঙ্গাপুর-সহ ২৬টি দেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিরা। মোট আমন্ত্রিত প্রতিনিধির সংখ্যা ৬২০৩ জন। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। এ ছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, সড়ক উন্নয়ন ও পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী, নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু, বিদ্যুৎ মন্ত্রী পীযূষ গয়াল-সহ কেন্দ্রের ১১ জন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। স্পষ্টতই কেন্দ্রের ‘লুক ইস্ট’ নীতির সমস্ত ‘ফোকাস’ রাঁচীতে ধরে রাখতে কোমর বেঁধেছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারও।

ভিভিআইপি অতিথিদের রাঁচীর বিরসা মুন্ডা বিমানবন্দর থেকে খেলগাঁওয়ে আসার ব্যবস্থা রয়েছে একাধিক হেলিকপ্টারের। সম্মেলনের দু’দিন এয়ার ইন্ডিয়ার দু’টি বিমান দিনে দু’বার দিল্লি থেকে রাঁচী যাতায়াত করবে। এ ছাড়াও কলকাতা-রাঁচী রুটে যাতায়াত করবে পাঁচটি বিমান। রাঁচীর পাঁচতারা ও চারতারা হোটেলের সমস্ত দামি ঘর ইতিমধ্যেই ‘বুক’ হয়ে গিয়েছে। প্রস্তুতি প্রায় সম্পূর্ণ। এখন কাউন্টডাউনের পালা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন