বরাকের বেহাল রাস্তার কথা বললেন না তথাগত

করিমগঞ্জ জেলার লোয়াইরপোয়া-চুরাইবাড়ি অংশের রাস্তার বেহাল অবস্থায় কিছু দিন আগেও ত্রিপুরা কার্যত সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। পণ্যবাহী গাড়ি ২০-২২ দিন ধরে আটকে থাকায় পেট্রোপণ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের হাহাকার পরিস্থিতি তৈরি হয় সে রাজ্যে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলচর শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৬ ০২:৫৬
Share:

তিরঙ্গা যাত্রায় সামিল মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। রবিবার অসমের ঢেকিয়াজুলিতে। — নিজস্ব চিত্র

করিমগঞ্জ জেলার লোয়াইরপোয়া-চুরাইবাড়ি অংশের রাস্তার বেহাল অবস্থায় কিছু দিন আগেও ত্রিপুরা কার্যত সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। পণ্যবাহী গাড়ি ২০-২২ দিন ধরে আটকে থাকায় পেট্রোপণ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের হাহাকার পরিস্থিতি তৈরি হয় সে রাজ্যে। পেট্রোলে রেশনিং চালু করতে হয়। এখন রাস্তা মোটামুটি ঠিক হলেও অসমের উপর ভরসা না করে ত্রিপুরা সরকার বাংলাদেশ দিয়ে পণ্য পরিবহণের ব্যবস্থা করেছে।

Advertisement

এমন পরিস্থিতিতে ‘প্রীতম ভট্টাচার্য স্মারক বক্তৃতা’ যোগ দিতে শিলচরে এলেন ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায়। নিজে সুদক্ষ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। রেলে চাকরি করেছেন। ছিলেন রাইটস-এর জেনারেল ম্যানেজার, মেট্রো ডিজাইনিংয়ের চিফ ইঞ্জিনিয়ার। তার উপর তাঁর বক্তৃতার নির্ধারিত বিষয়— রাস্তা-সেতু পরিকাঠামো উন্নয়নে দুই প্রধান নির্ণায়ক। প্রতিবেশী রাজ্যের রাজ্যপালের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন অসম মন্ত্রিসভায় বরাক উপত্যকার একমাত্র প্রতিনিধি পরিমল শুক্লবৈদ্য। তিনি আবার পূর্ত দফতরের দায়িত্বে রয়েছেন।

পরিচয় পর্বেই তথাগতবাবু খোঁচা দিয়ে রাখেন, অসমের মন্ত্রী হলেও ত্রিপুরার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাই আগেই পরিমলবাবু নিজের বক্তৃতায় সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করেন। জানান, ত্রিপুরার কথা ভেবে জিও-সেল প্রযুক্তির ব্যবহার করে ওই লোয়াইরপোয়া-চুরাইবাড়ি অংশে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। তথাগতবাবুকে তিনি আশ্বস্ত করেন, বৃষ্টি হলেও এখন আর সেখানে গাড়ি চলাচলে সমস্যা হবে না। সঙ্গে বিনয়ের সঙ্গে বলেন— তথাগতবাবুর মত সুদক্ষ ইঞ্জিনিয়ারের কাছ থেকে তিনি শিখতে চান, জানতে চান।

Advertisement

মন্ত্রীর পরই রাজ্যপালের ভাষণ। দর্শকরা উৎসুক তথাগতবাবুর বক্তব্য শুনতে। আসলে আগ্রহ বেশি অসমের রাস্তাঘাট নিয়ে পূর্তমন্ত্রীর সামনে কী বলেন তিনি, তা জানার। শিলচর শহরের চারপাশেও রাস্তা নিয়ে ক্ষুব্ধ মানুষ। তাঁদের প্রত্যাশায় শুরুতেই জল ঢেলে দেন রাজ্যপাল তথাগত রায়। খুব কম সময়ে ত্রিপুরার জন্য রাস্তা সচল করে দেওয়ায় তিনি পরিমলবাবুকে সাধুবাদ জানান। পরে প্রায় একঘণ্টা ‘প্রীতম ভট্টাচার্য স্মারক বক্তৃতা’ করেন, তাতে ত্রিপুরা-অসম সব হারিয়ে যায়। তিনি রাস্তা-সেতু নির্মাণের প্রাথমিক জ্ঞান প্রদান করেন হলভর্তি দর্শক-শ্রোতাকে।

পদার্থবিদ্যায় এমএসসি প্রীতম ভট্টাচার্য ঈশ্বরকণার উপর গবেষণার জন্য ডাক পেয়ে শিলচর থেকে দিল্লি যাচ্ছিলেন। পথে বিহারে দুষ্কৃতীরা তাঁকে খুন করে। সেটা ২০১২ সালের জুলাইয়ে। তাঁর বাবা, শিলচর মহিলা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শঙ্কর ভট্টাচার্য জানান, ছেলের মৃত্যুর পর বিমা সংস্থা থেকে তিনি ১৬ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন। সেই টাকার পুরোটাই দান করেন কেশব স্মারক সমিতিকে। তাঁরাই ওই টাকার সুদে প্রতি বছর স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে। সঙ্গে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পুরস্কার এবং দুঃস্থদের চিকিৎসায় সাহায্য করে। একইভাবে ব্যয়ের জন্য শঙ্করবাবু আজ স্মারক সমিতিকে আরও ৪ লক্ষ টাকা প্রদান করেন। সমিতির সভাপতি ক্ষৌণীশ চক্রবর্তীর হাতে সেই চেক তুলে দেন তিনি।

এ দিন প্রীতম ভট্টাচার্য স্মারক পুরস্কার পান করিমগঞ্জ কলেজের রিম্পি দেব, কাছাড় কলেজের তপতী দে, গুরুচরণ কলেজের দেবকান্ত সিংহ, মহিলা কলেজের পিয়ালী দেব ও ঊষারানি দে এবং জাতীয় শিশু বিজ্ঞান সমারোহে অংশগ্রহণকারী হাইলাকান্দির রেহন-উন-নেসা। পুরো অনুষ্ঠানে দর্শকাসনে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, আরএসএস কর্মকর্তা বিমল নাথচৌধুরী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন