এই সেই চিঠি।
স্রেফ খুনের হুমকি হলে ফাঁকা আওয়াজই ভাবতাম। কিন্তু এ তো অ্যাসিড মারার হুমকি! ক্যাম্পাসে বা বাইরে হঠাৎ কিছু ঘটলে করবটা কী!
শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বিভাগীয় ঘরে হুমকি-চিঠিটা দেখা ইস্তক দুশ্চিন্তা এড়াতে পারছি না। কেন এ সব বলা হল মাথায় ঢুকছে না!
দিল্লির এত কাছে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজে ঢুকে এই হাল। ২৬ জানুয়ারির ছুটির পরই দেখি আমার টেবিলে চিরকুটটা রাখা। দরজার ফাঁক দিয়ে ঠেলা কাগজটা পিওনই রেখেছিলেন। হিন্দিতে বলা হয়েছে, ২৬ তারিখের পর এ তল্লাটে থাকলে আমায় অ্যাসিড মারা হবে, কিংবা এই ঘরেই জ্যান্ত জ্বালিয়ে অন্তিম সংস্কার সারা হবে। প্রেরক, ‘ওবিসি সেনা’! কারণ, আমি যে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পদে যোগ দিয়েছি তা নাকি ওবিসি-দের জন্যই সংরক্ষিত।
অদ্ভূত দাবি! সাধারণ শ্রেণির পদপ্রার্থী হিসেবে আবেদন করলাম। ইন্টারভিউ হল। চাকরি পেলাম। এখন এ সব কী শুনছি! ন’বছর মালদহে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস পড়িয়ে কাজের নতুন ক্ষেত্র খুঁজতে উৎসুক ছিলাম। ৯ জানুয়ারি এখানে যোগ দিয়েছি। সহকর্মীরা খুবই ভাল। তা ছাড়া মেরঠ হল সিপাহি বিদ্রোহের শহর। ইতিহাসের ছাত্রী হিসেবে দারুণ লাগছিল। ২২২ একর জুড়ে ক্যাম্পাস। সবটা দেখাই হয়নি।
এই ক’দিনে রাজনীতি বা জাতপাতের ঝামেলার ছিটেফোঁটাও আঁচ পাইনি। ওবিসি সেনা নামে কোনও সংগঠনের কথা আমার সহকর্মী, স্থানীয় পুলিশ কেউই বলতে পারছে না। কিন্তু ভয়টা চেপে বসছে!
আমার পরিবার বলতে বাবাই সব। ৭৭ বছরের বৃদ্ধ। আমার সঙ্গে এখানে আসার পরে শনিবারই কলকাতায় ফিরেছেন। এমন সময়ে এ সব ঘটল। এখনও নিজের কোয়ার্টার পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্টহাউসে থাকছি। পুলিশ বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য আমার পাশে রয়েছেন। দু’জন পুলিশকর্মী সারা ক্ষণের বডিগার্ড। নিজের মতো করে বাঁচার অধিকারটুকু খোয়া গেলে কী করব, বুঝতেই পারছি না।
(লেখকের আপত্তি থাকায় ছবি প্রকাশ করা হল না)