ভারতে হামলায় শেকড় ছড়াচ্ছে আইএস

বাংলাদেশের গুলশন থেকে ফ্রান্সের নিস— সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলাগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে বলেই মনে করছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। প্রাথমিক তদন্তে ক্রমশ স্পষ্ট হয়েছে যে দু’টি ঘটনার পিছনেই আইএসের হাত রয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলছে, আইএস মনোভাবাপন্নরা যে সব দেশে রয়েছে, তা জানান দিতে ওই হামলা চালানো হয়েছে।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪০
Share:

বাংলাদেশের গুলশন থেকে ফ্রান্সের নিস— সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলাগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে বলেই মনে করছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। প্রাথমিক তদন্তে ক্রমশ স্পষ্ট হয়েছে যে দু’টি ঘটনার পিছনেই আইএসের হাত রয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলছে, আইএস মনোভাবাপন্নরা যে সব দেশে রয়েছে, তা জানান দিতে ওই হামলা চালানো হয়েছে।

Advertisement

ভারতও নিরাপদ নয়। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা বলছেন, এ দেশেও ক্রমশ ডালপালা মেলছে আইএস। গত কয়েক বছরে ভারতে যে ভাবে আইএসের ভাবধারা ছড়িয়ে পড়ছে তাতে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।

গোয়েন্দাদের মতে, ভারত থেকে যে সব যুবক সিরিয়া-ইরাকে ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে গিয়েছে, তাদের উপর এ দেশে হামলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দারাও ইতিমধ্যেই নয়াদিল্লিকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্যগুলির সঙ্গে নিয়মিত ভাবে যোগাযোগ রেখে চলেছে কেন্দ্র। বিষয়টি নিয়ে আন্তঃরাজ্য পরিষদের বৈঠকে রাজনাথ বলেন, “আইএসের সন্ত্রাস প্রতিবেশী দেশের মাটিতে পৌঁছে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র-রাজ্য উভয়ে একযোগে কাজ করতে হবে।” উভয় শিবিরের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের উপর জোর দিয়েছেন রাজনাথ। পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্তে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Advertisement

আমেরিকা ও রাশিয়ার যৌথ হামলায় গত ছমাসে ইরাকে ও সিরিয়ায় ক্রমশ জমি হারাচ্ছে আইএস। তাই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নাশকতার কৌশল পাল্টাতে শুরু করেছে এই জঙ্গিরা।

কী সেই কৌশল?

গোয়েন্দাদের বক্তব্য, বহুজাতিক সংস্থা যেমন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ফ্র্যাঞ্চাইজি খোলে, আইএস প্রায় সে ভাবেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়তে চাইছে। আইএস ভাবধারায় বিশ্বাসী বিভিন্ন দেশের জঙ্গি সংগঠনগুলিকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করেছে তারা। রাজনাথের কথায়, “ছোট সংগঠনগুলিকে প্রভাবিত করে তাদের মাধ্যমে নাশকতা চালানো শুরু হয়েছে। কী ভাবে, কোথায় আক্রমণ করতে হবে তা জানানোর পাশাপাশি হামলার জন্য অর্থ ও অস্ত্রশস্ত্রও জোগাচ্ছে আইএস।” কখন, কী ভাবে, হামলা চালালে সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে স্থানীয়রা তা ভাল জানে বলেই তাদের হাতে দায়িত্ব দিচ্ছে আইএস। তার পর হামলার পরে সেই নাশকতার দায় নিচ্ছে তারা। যেমনটি হয়েছে গুলশন বা নিস-এর ক্ষেত্রে।

এই অবস্থায় আইএস ভাবধারায় বিশ্বাসী হয়ে ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠায় যুবকদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার ঘটনাও চিন্তায় রেখেছে কেন্দ্রকে। এর মধ্যে দেখা গিয়েছে মহারাষ্ট্র-সহ দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে আইএসের প্রভাব সব থেকে বেশি। সম্প্রতি হায়দরাবাদে আইএসের মডিউল ধরা পড়েছে। ওই ঘটনায় গ্রেফতার হয় দু’জন। যাদের কাজ ছিল এ দেশে নাশকতা চালানো। শুরুর দিকে মহারাষ্ট্র থেকে প্রায় ডজন খানেক যুবকের পরে এ বার কেরল থেকে গত সপ্তাহে ১৭ জন যুবক ভারত ছেড়েছে আইএসের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে। তারা সিরিয়া পৌঁছে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। এই যুবকেরা অধিকাংশই উচ্চশিক্ষিত, কম্পিউটার-জানা, ‘টেক-স্যাভি’। শিক্ষিত এই যুবকদের এখন মগজধোলাই করে দলে টানছে আইএস। রাজনাথের কথায়, “গোটা পৃথিবীতে অতি বামপন্থী বিপ্লবের দিন শেষ। সেই জায়গা নিয়েছে এখন এই ধরনের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি। যারা নিজেদের কট্টর ভাবধারার মাধ্যমে যুবকদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে গোটা বিশ্ব জুড়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠার। আর সেই লক্ষ্যপূরণে হাতে অস্ত্র তুলে নিতে দ্বিধা করছে না এই যুবকেরা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন