‘হ্যাঁ, আমি পাথর ছুড়েছি, মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি, জাতীয় ফুটবল টিমে খেলতে চাই’

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কাশ্মীরের সম্ভবত প্রথম মহিলা ফুটবল কোচের আলাপ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল অনেকটা এই ভাবে— ‘‘সেই মেয়েটা, সেই যে পাথর ছুড়ছিল? ছবি বেরিয়েছে না কাগজে?’’

Advertisement

সাবির ইবন ইউসুফ

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৭ ০৩:৪২
Share:

নিশানা: পাথর ছুড়ছেন আফশান। —ফাইল চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কাশ্মীরের সম্ভবত প্রথম মহিলা ফুটবল কোচের আলাপ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল অনেকটা এই ভাবে— ‘‘সেই মেয়েটা, সেই যে পাথর ছুড়ছিল? ছবি বেরিয়েছে না কাগজে?’’

Advertisement

এতটুকুও কুণ্ঠিত হননি আফশান আশিক। ২১ বছরের মেয়ে বললেন, ‘‘হ্যাঁ, আমি পাথর ছুড়েছি। মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি, জাতীয় ফুটবল টিমে খেলতে চাই। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের বাঁচাতে সে দিন আমাকে ওটা করতেই হতো।’’

কাশ্মীর এফসি অ্যাকাডেমিতে ৪০টি বাচ্চা মেয়ে আর জনা ত্রিশেক বাচ্চা ছেলেকে ফুটবল কোচিং দেন আফশান। আর নিজে স্বপ্ন দেখেন জাতীয় মহিলা দলে খেলার। শ্রীনগরের উইমেন্স কলেজে স্নাতক স্তরের পড়াশোনাও চলছে। তাঁর কলেজের সামনেই গত সপ্তাহে বেধেছিল জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ। পরের দিনের খবরের কাগজ, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল পাথর ছোড়া এক মেয়ের ছবি। মুখ ঢাকা থাকলেও আফশানকে চিনে ফেলেছিলেন অনেকেই।

Advertisement

অথচ আফশান বিচ্ছিন্নতাবাদী নন। পুলিশ বা সিআরপি তাঁর নিশানাও নয়। গত কাল শ্রীনগরের ট্যুরিস্ট রিসেপশন সেন্টার গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিকে তিনি সাফ বলেছেন, সে দিন যা করেছেন সেটা ছিল চোখের সামনে দেখা পুলিশি জুলুমের প্রতিক্রিয়া। আফশানের কথায়, ‘‘মেয়েদের নিয়ে প্র্যাক্টিসে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম পাথর ছোড়া শুরু হয়েছে। দাঁড়িয়ে পড়লাম। ভেবেছিলাম পুলিশই আমাদের স্টেডিয়ামে পৌঁছে দেবে। উল্টে কী হল? একটা পুলিশ এসে আমার এক ছাত্রীকে গালাগালি দিয়ে থাপ্পড় মারল। তাতেই খেপে গেলাম। আমরাও শুরু করলাম পাথর ছুড়তে। নিজেদের বাঁচানোর দরকার ছিল। তা ছাড়া বোঝানোর দরকার ছিল, মেয়েদের দুর্বল ভাবা উচিত নয়।’’

আরও পড়ুন:কাশ্মীরে নিহত দুই জঙ্গি, চলছে পাক গোলাও

আফশানের দাবি, দুর্ব্যবহার করা ওই পুলিশকর্মী ছিলেন কাশ্মীরিই। এবং মুখ্যমন্ত্রী মোটেই অসন্তুষ্ট হননি। বরং কোচ হিসেবে তাঁর প্রশংসা করে বলেছেন অন্য মেয়েদের ফুটবলে উৎসাহ দিতে। আফশান বলছেন, ‘‘আমি সরকারের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু এই ধরনের জুলুমও মানব না। আমাদের পক্ষে জাতীয় স্তরে উঠে আসা কঠিন। সরকার যদি সুযোগ দেয়, সে সুযোগ নেব না কেন?’’

মনে পড়ল আরও একটা ছবি। গত কাল বক্সী স্টেডিয়ামের বাইরে হাজার দুয়েক ছেলেমেয়ের ভিড়। পুলিশে নিয়োগের পরীক্ষা দিতে এসেছে তারা। এবং এসেছে জঙ্গিদের হাতে সেনা অফিসার উমের ফয়েজের খুনের পরেও। মনে হয়, জঙ্গি হুমকি যেন ঠিক বাগে পাচ্ছে না এই দামালদের!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন