প্রসূতিদের কষ্ট ঘোচাতে রাস্তা গড়লেন মেয়েরা

গ্রামের মেয়েরা এ বার নিজেরাই কোদাল-বেলচা হাতে নেমে পড়লেন। দেড়শো মহিলা তিন দিনে তৈরি করে ফেললেন দু’কিলোমিটার রাস্তা। সম্প্রতি বিহারের বাঁকা জেলার ভৌঁসি ব্লকে উপর-নিমা গ্রামের ঘটনা।

Advertisement

দিবাকর রায়

পটনা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৮ ০২:৫৪
Share:

রাস্তা তৈরি করছেন মহিলারা। বিহারের বাঁকা জেলায়। —নিজস্ব চিত্র।

অনেক বার প্রশাসনের কাছে দরবার করা হয়েছিল। সুরাহা হয়নি। গ্রাম থেকে কাছের রাস্তাই দু’কিলোমিটার দূরে। এ মাসের গোড়ায় এক প্রসূতিকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছতে এত দেরি হল যে, গর্ভেই মারা গেল শিশুটি।

Advertisement

গ্রামের মেয়েরা এ বার নিজেরাই কোদাল-বেলচা হাতে নেমে পড়লেন। দেড়শো মহিলা তিন দিনে তৈরি করে ফেললেন দু’কিলোমিটার রাস্তা। সম্প্রতি বিহারের বাঁকা জেলার ভৌঁসি ব্লকে উপর-নিমা গ্রামের ঘটনা।

উপর-নিমা আর পিছনের গ্রাম জোজারপুর মিলিয়ে ৫০০ পরিবারের বাস। বেশির ভাগই হয় আদিবাসী, নয় দলিত। কয়েক বছর ধরেই বাসিন্দারা রাস্তা তৈরির আবেদন নিয়ে প্রশাসনের কাছে দরবার করছিলেন। বারবারই নানা আইনি জটিলতার কথা শুনতে হয়েছে তাঁদের। কাজ এগোয়নি। অথচ সরু আল বেয়ে দু’কিলোমিটার হেঁটে না গেলে কোনও রাস্তায় ওঠা যায় না। কেউ অসুস্থ হলেও ভ্যান বা টোটো ডেকে আনারও উপায় নেই। রাস্তা তৈরির অন্যতম নেত্রী খুশবু দেবী বলছিলেন, ‘‘প্রসবযন্ত্রণা উঠলে হাসপাতালে যাওয়াই মুশকিল। অনেক সময় রাস্তাতেই প্রসব হয়ে যায়।’’ এ বার শিশুটি মারা যাওয়ার খবর পেয়েই ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙে ওঁদের। পাহাড় কেটে রাস্তা গড়া, গয়া জেলার দশরথ মাঝির গল্প ওঁরা শোনেননি। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই কোদাল হাতে বেরিয়ে পড়েন। সঙ্গে নেন জাতীয় পতাকা।

Advertisement

মহিলাদের একরোখা ভাব দেখে এত দিন যাঁরা জমি দিতে গড়মসি করছিলেন, তাঁরাও জমি দিয়ে দিলেন। পুরুষরা মাটি আর নদী থেকে বালি, মোরাম বয়ে এনে দিলেন। তাঁদেরই এক জন পুরুষোত্তম মারান্ডি পরে বললেন, ‘‘মেয়েদের ও ভাবে রোদে কাজ করতে দেখে আর হাত গুটিয়ে থাকতে পারলাম না!’’ খুশবু জানান, রোদ মাথায় রাস্তা গড়তে গিয়ে জ্ঞান হারিয়েছেন বেশ কয়েক জন মহিলা। পড়ে গিয়ে জখম হয়েছেন অনেকে। তবু রণে ভঙ্গ দেননি। আর এক নেত্রী দুর্গা মাঝি বললেন, ‘‘দু’কিলোমিটার দূরে যে রাস্তা ছিল, আমাদের রাস্তা তার সঙ্গে জুড়ল গ্রামকে। আর কোনও প্রসূতিকে কষ্ট পেতে হবে না।’’

সব দেখেশুনে পঞ্চায়েত সমিতির অন্যতম কর্তা বাবুরাম বাস্কে বলছেন, ‘‘জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনিক আধিকারিক-সহ গোটা ব্যবস্থাটার মুখে চড় মেরেছেন ওঁরা।’’ বিডিও অমরকুমার মিশ্রর দাবি, ‘‘রাস্তা তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব আমরা পাঠিয়েছিলাম। কিছু লোক আপত্তি করায় কাজ হচ্ছিল না।’’

এখন তো হল! বিডিও কথা দিচ্ছেন, দ্রুত এ বার রাস্তাটিকে পাকা করে দেওয়া হবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন